Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

🌟♥️🌟♥️🌟♥️🌟♥️🌟#একদম _সত্যি (পর্ব ১)#আমার _বাবা #মন্দিরা ঘোষ 
অনেক অনেক বছর আগের কথা,সালটা ঠিক মনে নেই ১৯৫৭/৫৮ হবে। একটা রবিবারের কথা। বাবা দু হাতে দুটো থলে ভর্তি বাজার নিয়ে বাড়ি পৌঁছে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন,"না আ…


🌟♥️🌟♥️🌟♥️🌟♥️🌟

#একদম _সত্যি (পর্ব ১)

#আমার _বাবা 

#মন্দিরা ঘোষ 


অনেক অনেক বছর আগের কথা,সালটা ঠিক মনে নেই ১৯৫৭/৫৮ হবে। 

একটা রবিবারের কথা। বাবা দু হাতে দুটো থলে ভর্তি বাজার নিয়ে বাড়ি পৌঁছে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন,"না আর এই মাইনে দিয়ে সংসার চালাতে পারবনা,এক আলু ছাড়া সবকিছু অগ্নিমূল্য,যাতে হাত দিই ছ্যাঁকা লেগে যায়। আজ আবার চার আনা চলে গেল মুটে খরচা বাবদ।"


 মা তো একগলা ঘোমটা দিয়ে জড়সড় হয়ে বারান্দার এককোনে দাঁড়িয়ে আছে। মা তো আর সংসারের গিন্নি ছিলনা  তখন ,আমার ঠাকুমা ছিলেন ছেলের সংসারের সর্বময়ী কর্ত্রী ।


বাবার চিৎকারে ছুটে এসে বাবাকে একটা ধমক দিলেন। 

"কি হল কি গোপাল এত চেঁচামেচি করছিস কেন?দাম বেড়েছে বলে কি সকলে উপোস করে থাকবে?যা যা ভেতরে গিয়ে বিশ্রাম কর,তেতে পুড়ে এসেছিস,লেবুর সরবত করে রেখেছে বৌমা,ঠান্ডা হয়ে খেয়ে নিস সরবতটা "


ঠাকুমার কথায় মা বুঝতে পারল যে এবার কি করতে হবে। মা তো জানেই যে হুকুম যখন হয়েছে তৎক্ষণাৎ পালন না করলে তুলকালাম কান্ড হবে। 


আমাদের ভাইবোনদের রবিবার খুব আনন্দের দিন ছিল। প্রথমত বাবা বাড়ি থাকবেন,মাংস ভাত খাওয়া হবে,আর বাবা খেতে খেতে দস্যু মোহনের গল্প শোনাবেন। 

বাবার কাছে গল্প শুনতে  খুব ভাল লাগে,মনে হয় ঘটনা গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। 


কখনও কখনও আবার অন্য রকমের গল্প মানে ওঁর দৈনন্দিন কাজের শিহরণ জাগানো ঘটনার কথাও বলতেন। আমরা চার ভাই বোন খুব ভালবাসতাম ঐ সব ঘটনার কথা শুনতে। আমরাও বন্ধুদের ঐ সব ঘটনার কথা শোনোতাম। ওদেরও খুব ভাল লাগতো। 

ওরা বলতো "তোর বাবা কি সাহসী রে!রাতদুপুরেও চোর ধরতে যায়!ওনার ভয় করেনা!


আমার বাবা যে আমাদের জীবনের হিরো সেটা বন্ধুরা বুঝতো। 


দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়া করে বাবা একটা ছোট্ট ঘুম দিতেন। 

বাবার আর আমাদের খাওয়া শেষ হলে ঠাকুমা ও ফুল ঠাকুমা খেতেন। 


এরমধ্যে মায়ের দিনের কাজ শেষ হত,তারপর খেয়ে দেয়ে,ভাত খাওয়ার কাপড় ছেড়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ঘরে আসতো। 

ততক্ষণে বাবা ঘুম থেকে উঠে রেডিওতে খবর শুনতেন। 

মাএর কাজ শেষ হতে হতেই দুই ঠাকুমা দিবানিদ্রা সেরে বারান্দায় গিয়ে বসতেন। তখন বেলা সাড়ে তিনটে। ওঁদের চা খাওয়ার সময়। 


মা স্টোভ জ্বেলে তিন কাপ চা তৈরি করে আনতো।বাবা ঠাকুমা আর ফুল ঠাকুমার (বাবার পিসিমা) জন্য। তারপর মা একটু বিশ্রাম নিতে যেতো। 

সন্ধ্যের সময় বাবা মুড়ি তেলে ভাজা খেতে খেতে বললেন,"জান মা চাল আজ কুড়ি টাকা মণ নিয়েছে। "

আমার ঠাকুমার নির্দেশে বাবা একটুও কমদামী চাল আনতে পারতেন না। 

কিন্তু বাবাই বা কি করবেন!নিজের সংসার,বড়ো ভাই এর এক ছেলে,নিজের মা আর পিসিমা এই এতজনকে কি করে লালন করবেন কে জানে!

আমার বাবা ভদ্রলোকটি অতীব সাদা সিধে মানুষ ছিলেন ।

সংসার ছেলে মেয়ে আর মা (নিজের)ছাড়া অন্য কোনো আকর্ষণ ছিলনা বাবার।

 

ওঁর জীবনের পরিধিটা অত্যন্ত সীমিত ছিল ।

জীবন যাপন করতেন অত্যন্ত সাদা সিধে ভাবে। 

আমরা বাবার চাকরি জীবনে কখনও ওঁকে খাঁকি পোশাক অর্থাৎ ইউনিফর্ম ছাড়া আর কিছুই পরতে দেখিনি। 

শীত,গ্রীষ্ম, বর্ষা যে কোন ঋতুতেই  ওঁর ঐ একই পোশাক ছিল। 

তার একটা কারণ ছিল ঐ পোশাক রেলওয়ে থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হত ,তাছাড়া ওঁর ডিউটির কোন নির্দিষ্ট সময় ছিলনা। 

অন্য কোনো পোশাক যে পরবেন তার সময় কোথায়?

বাড়িতে পরতেন মাএর হাতে কাচা ইস্ত্রি করা ধবধবে সাদা পায়জামা ও ফতুয়া। 

অসীম সাহস ছিল বাবার,যে কোনো সময় যে কোন পরিস্থিতিতে উনি চোর ডাকাতদলের উদ্দেশে ছুটতেন। 

ওঁর সাহসিকতার জন্য সরকার পক্ষ থেকে অনেক পুরস্কার লাভ করেছিলেন। 

অগাধ মাতৃভক্তি,অতীব স্নেহপ্রবণ মানুষ ছিলেন বাবা আমার। 


দোষের মধ্যে ছিল সাংঘাতিক রাগ,রাগে অন্ধ হয়ে আমার মাকে খুব মানসিক যন্ত্রণা দিতেন,যদিও খুব ভালও বাসতেন। 

মাকে নিয়ে নাইট শো তে সিনেমা দেখতে নিয়ে যেতেন। 

শিশুর সারল্য ছিল ওঁর চরিত্রের  বৈশিষ্ট্য। তার জন্য অনেক সময় অনেকেই ওঁকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিত আবার পেছনে ওঁকে বোকা বলতো। 


আজও লোক যদি খুব বেশী সরল হয়,আমরা তাকে বোকা বলি।