অরুন কুমার সাউ, তমলুক : স্বদেশী আন্দোলনের সলতে পাকানো হয়েছিল তমলুকের হ্যামিলটন স্কুলে। ক্ষুদিরাম বসু এখানেই স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হন।১৮৫২ সালে তমলুকের সল্ট এজেন্ট চার্লস হ্যামিল্টন এই স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই শিক্ষাকেন…
অরুন কুমার সাউ, তমলুক : স্বদেশী আন্দোলনের সলতে পাকানো হয়েছিল তমলুকের হ্যামিলটন স্কুলে। ক্ষুদিরাম বসু এখানেই স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হন।১৮৫২ সালে তমলুকের সল্ট এজেন্ট চার্লস হ্যামিল্টন এই স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই শিক্ষাকেন্দ্রই হয়ে উঠেছিল অগ্নিযুগের আন্দোলনের আঁতুরঘর। বিপ্লবীরা এখানে প্রায়শই আসা-যাওয়া করতেন। হেরিটেজ মর্যাদাপ্রাপ্ত সেই বিদ্যালয় আজও ক্ষুদিরামের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রয়েছে।এখানে একাধিক প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের মধ্যে গোপনে দেশপ্রেম ও স্বাদেশিকতার প্রচার করেছিলেন।
১১আগস্ট ক্ষুদিরাম বসুর মৃত্যু দিবস। মুক্তি আন্দোলনের বিশেষ দিনের কথা স্মরণ করার দিন। তমলুকের হ্যামিলটন স্কুলে ১৯০১ সাল থেকে ১৯০৪ সাল পর্যন্ত এই স্কুলে পড়াশোনা করতেন ক্ষুদিরাম বসু। শোনা যায় এই সময় দিদি অপরুপা দেবী ও জামাইবাবু অমৃতলাল রায় এর সাথে তমলুকের রামসাগর পুকুর পাড়ে থাকতেন ক্ষুদিরাম। আজও বিদ্যালয়ের অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টরে ক্ষুদিরাম বসুর নাম রয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে কাঠবাদাম বৃক্ষ। এই গাছকে জুড়ে ক্ষুদিরামের একটা সময় কেটেছে। শুধু তাই নয় একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ক্ষুদিরাম বসু আর এর জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে ছুটির দরখাস্ত করেছিলেন। সেই দরখাস্তের কপি আজও রয়েছে বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ে পড়া কালীন তমলুকের রক্ষিত বাটিতে প্রতিষ্ঠিত গুপ্ত সমিতি মাতৃসদন এর সদস্য হয়েছিলেন। এই বিদ্যালয়ের পড়াকালীন তিনি অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে গোপনে ব্যায়াম কুস্তি লাঠি খেলা কলাকৌশল শিখতেন।
ইংরেজদের অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার জন্য এই হ্যামিলটন স্কুল থেকে তৈরি হত বিপ্লবীরা। যাদের মধ্যে অন্যতম ক্ষুদিরাম। এই সময় ক্ষুদিরাম বসুর বন্ধু ছিলেন আরো এক বিপ্লবী শ্রুতি নাথ চক্রবর্তী। যিনি পরবর্তীকালে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়েছিলেন। ক্ষুদিরামের প্রিয় শিক্ষকেরা ছিলেন নিবারণ চন্দ্র ঘটক, অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়। ইনারাই অগ্নিযুগে এই শিক্ষাঙ্গনে স্বদেশ-স্বাধীনতার মন্ত্রে ছাত্রদের দীক্ষিত করার চেষ্টা করছে। এখান থেকে ক্ষুদিরাম বসু চলে গিয়েছিলেন মেদিনীপুরের কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করতে। ১৯০৮ সালে প্রাক্তন ছাত্র ক্ষুদিরাম এর গ্রেফতারের পর হ্যামিল্টন স্কুল রাজরোষে পড়লে তৎকালীন স্বাধীনচেতা প্রধান শিক্ষক কুল চন্দ্র রায় পদত্যাগ করেছিলেন।
তমলুক শহরের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র জয়দীপ পান্ডা বলেন,এই স্কুলের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িতে রয়েছে ক্ষুদিরামের স্মৃতি কাহিনী। আজও স্কুল চত্বরে পুরনো বিল্ডিং সহ গাছ বিভিন্ন গাছ সেই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তরে খোঁজ করলে হ্যামিলটন স্কুল ক্ষুদিরামের স্কুল নামেই পরিচিত।