অরুণ কুমার সাউ, তমলুক: আজকের দিনে টিভি দেখা যত সহজ, এক সময় তা ছিল অবাক করা এক অভিজ্ঞতা। ১৯৭৫-এর দশকে যখন কলকাতায় দূরদর্শনের যাত্রা শুরু হল, তখন তমলুকে প্রথম টিভি আসে ১৯৭৬ সালে রক্ষিত বাটিতে। এই পরিবারের সদস্য সুধাংশু শেখর রক্ষি…
অরুণ কুমার সাউ, তমলুক: আজকের দিনে টিভি দেখা যত সহজ, এক সময় তা ছিল অবাক করা এক অভিজ্ঞতা। ১৯৭৫-এর দশকে যখন কলকাতায় দূরদর্শনের যাত্রা শুরু হল, তখন তমলুকে প্রথম টিভি আসে ১৯৭৬ সালে রক্ষিত বাটিতে। এই পরিবারের সদস্য সুধাংশু শেখর রক্ষিত, যিনি ব্যবসার কাজে নিয়মিত কলকাতায় যেতেন, পরিবারের সম্মতিতে শহরে নিয়ে আসেন সাদা-কালো টেলিভিশন। তখন এন্টেনা ঘোরানো, ছবি ঝিলমিল করা ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার।
রক্ষিত পরিবার তমলুকে দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে এই পরিবারের অবদান ইতিহাসে উজ্জ্বল। ১৯০৩ সালে ‘মাতৃসদন’ নামে এক গুপ্ত সমিতি গড়ে ওঠে রক্ষিত বাটিতে। এখানে বিপ্লবীদের ব্যায়াম, কুস্তি, লাঠিখেলা শেখানো হতো। ক্ষুদিরাম বসু, যদু গোপাল মুখোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলামসহ বহু গুণী মানুষ এই বাড়িতে এসেছেন।প্রথম টিভি আসার পর তমলুক শহরের মানুষ ভিড় জমাতেন রক্ষিত বাড়িতে। মোহনবাগান–ইস্টবেঙ্গল খেলা, মহালয়া, খবর—সবই একসাথে দেখা হতো। পরিবারের বর্তমান সদস্য পার্থ রক্ষিত জানান, এত ভিড় হতো যে ঘরে ঢোকার জায়গা থাকত না। বড়রা কখনো কাউকে বারণ করতেন না।
১৯৭৮ সালে তমলুকে দ্বিতীয় টিভি কেনেন মানিক লাল দাস। পরে সুইমিং ক্লাবও টিভি কেনে। স্থানীয় বাসিন্দা বিপুল জানা ও ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হরিপদ মাজি মনে করেন, সাদা-কালো টিভিতে দূরদর্শনের অনুষ্ঠান দেখার আনন্দ আজও মনে গেঁথে আছে।আজ রঙিন টিভি ও অসংখ্য চ্যানেলের যুগেও সেই প্রথম টিভি দেখার উত্তেজনা ও আনন্দ তমলুকের মানুষের কাছে এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি।