অরুণ কুমার সাউ, মেদিনীপুর: ১৯৩৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ফুটবল মাঠে গুলি করে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট বার্জকে হত্যা করা হয়েছিল বিপ্লবী অনাথবন্ধু পাঁজাকে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনাথবন্ধুর মতো বহু বিপ্লবী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, কি…
অরুণ কুমার সাউ, মেদিনীপুর: ১৯৩৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ফুটবল মাঠে গুলি করে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট বার্জকে হত্যা করা হয়েছিল বিপ্লবী অনাথবন্ধু পাঁজাকে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনাথবন্ধুর মতো বহু বিপ্লবী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, কিন্তু তাঁদের সবার কথা ইতিহাসে স্থান পায়নি।
অনাথবন্ধু পাঁজা মেদিনীপুরের জলবিন্দু গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্র্যের কারণে তাঁর পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়নি। অল্প বয়সেই তিনি দেশপ্রেমের টানে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী দল বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স-এ যোগ দেন। দলের নির্দেশে তিনি ও তাঁর বন্ধু মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিতে কলকাতায় যান। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা মেদিনীপুরে ফিরে আসেন এবং বিপ্লবী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন।
১৯৩৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ, যিনি বিপ্লবীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছিলেন, মেদিনীপুর কলেজ মাঠে ফুটবল খেলতে নামেন। অনাথবন্ধু ও মৃগেন্দ্রনাথ খেলার ছলে মাঠে ঢুকে বার্জকে গুলি করেন। ম্যাজিস্ট্রেটকে গুলি করে হত্যা করার পর পুলিশের পাল্টা গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন অনাথবন্ধু। তাঁর সঙ্গী মৃগেন্দ্রনাথ মারাত্মক আহত হয়ে পরদিন মারা যান।
এই ঘটনার পর ব্রিটিশ পুলিশ অন্যান্য বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা করে। ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায় ও নির্মলজীবন ঘোষের ফাঁসি হয় এবং আরও কয়েকজনের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়। অনাথবন্ধু পাঁজার এই আত্মত্যাগ মেদিনীপুরের বিপ্লবী আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। তাঁর গ্রামের কাছে তাঁর স্মৃতিতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। অনাথবন্ধু মাত্র বিশ বছর বয়সে দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।