Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ : নরেন হালদার

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
                                   নরেন হালদার

পৃথিবীতে এখন এমন একটা সময় যখন বিশ্ববাসীর চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু করোনা ভাইরাস। প্রায় আট’শ কোটি মানুষের ভয় এই একটি মাত্র জীবাণু। মানবসম্পদের কেন্দ্রিকরণ। প্রগতিশীলতার …


তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
                                   নরেন হালদার

পৃথিবীতে এখন এমন একটা সময় যখন বিশ্ববাসীর চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু করোনা ভাইরাস। প্রায় আট’শ কোটি মানুষের ভয় এই একটি মাত্র জীবাণু। মানবসম্পদের কেন্দ্রিকরণ। প্রগতিশীলতার সীমায়ন আর ক্ষমতার হস্তান্তরের মহেন্দ্রক্ষণ (আমেরিকার হাত থেকে চীনের হাতে)।
    বিগত প্রায় দু’দশক ধরে পুরো বিশ্বের মানুষের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে একটা বক্তব্য পুনরাবৃত্ত হচ্ছিল; গ্লোবালাইজেশন। কেউ জেনে শঙ্কিত হচ্ছিল, কেউ বা না জেনে পাড়া মাথায় করছিল। কিন্তু হারে হারে সবাই টের পাচ্ছিল পৃথিবী ক্রমশ চঞ্চল হয়ে উঠছে, ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানের উপর ভরসা করে মানুষ যত প্রকৃতির উপর আধিপত্য কায়েম করতে চেয়েছে, প্রকৃতির নিয়মকে পরিবর্তন করতে চেয়েছে তত মানুষের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে অসহিষ্ণুতা, প্রকাশ পেয়েছে ঔদ্ধত্য। প্রকৃতিকে আঘাত করেও তারা চাইছিল প্রকৃতি শান্ত থাকুক। আবার এটাও চাইছিল প্রকৃতিকে আঘাত করে বিজ্ঞানের বিজয় রথ এগিয়ে চলুক পূর্ণগতিতে। কিন্তু মনের গহিনে একটা ভয়ের চোরা স্রোত বয়েই চলেছিল। প্রকৃতিকে নিয়ে কাঁটাছেড়া সে কতদিন সহ্য করবে! যেদিন তার সহ্যের সীমা শেষ হবে সেদিন কি হবে?
    এখন আমরা পড়েছি দোটানায়। কাকে চাইবো, মানবতাকে নাকি প্রকৃতিকে(ভাইরাসকে)? প্রগতিকে নাকি সমতাকে? মহাকাশে পাড়ি দিতে নাকি ইসরোর বিজ্ঞানির হাতে তৈরি মাস্ককে?
    প্রকৃতি যখন ভাইরাস রূপ ধরে চঞ্চল পৃথিবীকে শান্ত করতে এলো তখন তাকে দোষারোপ করছি আস্তিন গুটিয়ে। কিন্তু এর জন্য পুরো বিশ্বজুড়ে যখন লকডাউন চলছে, মানুষেরা খাঁচায় বন্দী আর জঙ্গলের লুপ্তপ্রায় পশুপাখি নিশ্চিন্তে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে (যে রাস্তায় বেরোলে ঠেলাঠেলি ছিল উপরি পাওনা) তখন একবারের জন্যও কি মনে হয় না – এই পৃথিবীকে আমরা চাই! আমি তো ভীষণভাবে চাই। শুধু তাই নয়, এই লকডাউনের অবসরে যখন ওজোনস্তর নিজের ক্ষত-বিক্ষত দেহটাকে সারিয়ে নেওয়ার সময় পেয়েছে তখন পরবর্তী শান্ত পৃথিবীতে প্রবলভাবে জাল বিস্তার করা মারণরোগ (অতি বেগুনি-রশ্মি যার আরেকটি প্রধান কারণ) থেকেও মানুষ রক্ষা পাবে না কি?
    তবে মানুষ হিসেবেও কান্না পায় যখন শুনি এপর্যন্ত বিশ্বে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছে, আরো কতশত হাজার মানুষ মারা যাবে! স্টিফেন হকিংস জনচাপ থেকে রেহাই পেতে পৃথিবীর বাইরে মানুষের বাসস্থানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সত্যি পৃথিবীর বাইরেটা কি এত সুন্দর হবে! কে যেতে চাইবে পৃথিবী ছেড়ে! আমি তো যেতে চাইবো না। তাহলে ভাইরাস কি পৃথিবীর ভার লাঘবের দ্যুত স্বরূপ?
    পৃথিবী দুটো বিশ্বযুদ্ধ দেখেছে। এটি তৃতীয়। এর প্রতিপক্ষ অদৃশ্য। অপরদিকে পুরো বিশ্ব। জিতবে কে? অবশ্যই মানুষ জিতবে। মানবতা জিতবে। নইলে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাবে কে? এ বিশ্বযুদ্ধে আমরা প্রত্যেকেই সৈনিক। যেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল সেনায় সেনায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সেনা ছাড়াও লক্ষ্য ছিল শত্রুপক্ষের সাধারণ জনগন, আর এ বিশ্বযুদ্ধে আট’শ কোটি বিশ্ববাসীর প্রত্যেকেই সৈনিক।
    লকডাউন চলুক পুরো পৃথিবী জুড়ে আরো অর্ধবছর।

------------------------