অরুন কুমার সাউ, তমলুক : মানুষটার কাছে মোহনবাগান দলের খেলোয়াড়রা তার আত্মীয়। আর ২৯ শে জুলাই ‘মোহনবাগান দিবস' তাঁর কাছে স্বাধীনতা দিবস। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তাম্রলিপ্ত পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মদন কুমার জানা একজন…
অরুন কুমার সাউ, তমলুক : মানুষটার কাছে মোহনবাগান দলের খেলোয়াড়রা তার আত্মীয়। আর ২৯ শে জুলাই ‘মোহনবাগান দিবস' তাঁর কাছে স্বাধীনতা দিবস। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তাম্রলিপ্ত পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মদন কুমার জানা একজন মোহনবাগান সুপার ফ্যান।
বয়স ৭০, কিন্তু মোহনবাগান দলের খেলা দেখার প্রতি পাগলামি যে কোন মানুষকে অবাক করায় । ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি প্রেম। নিজেও ভালো ফুটবল খেলতেন। ছোটবেলায় রেডিওতে ধারাভাষ্য শুনতেন, এরপর টিভিতে খেলা দেখা আর এখন মাঠে গিয়ে মোহনবাগানের ম্যাচ দেখেন। মদনবাবু তাম্রলিপ্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গ্রুপ ডি বিভাগের একজন কর্মচারী ছিলেন। ২০১২ সালে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর খেলা দেখার প্রতি নেশা আরো বেড়ে যায়। তাঁর রুমের চারিদিকের দেওয়ালে রয়েছে মোহনবাগান দলের খেলোয়ারদের ছবি। রয়েছে মাঠে খেলা দেখতে গেছেন গ্যালারিতে থাকা অবস্থায় ছবি।মোহনবাগানের প্রিয় খেলোয়ারদের সাথে ছবি। বাড়ির সামনের রং করেছে সবুজ মেরুন। যেদিন মোহনবাগানের খেলা থাকে বাড়ির ছাদে ওঠে মোহনবাগান দলের পতাকা। এমনকি বেশ কিছু জামার রং সবুজ মেরুন করে নিয়েছে ভালোবেসে। শ্যাম থাপা, সত্যজিৎ চ্যাটার্জী, মানুষ ভট্টাচার্য, সুব্রত ভট্টাচার্য, শিবাজী ব্যানার্জি, প্রতাপ ঘোষ, বিজয়ন, ব্যারটো, বাইচুং, প্রদীপ চৌধুরী, শ্যামল ব্যানার্জি, শিবাজী ব্যানার্জি, গৌতম সরকার এই সকল প্লেয়ারদের খেলার ইতিহাস সহজেই মনে রাখছেন আজও।
১৯৭৫ সালে প্রথম মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন কলকাতার মাঠে। তখন টিকিটের মূল্য ছিল ৫ টাকা। কলকাতার ঘরের মাঠে খেলা হতো। কেবল কলকাতার মাঠে নয় ভিন রাজ্যের মাঠেও খেলা দেখতে গিয়েছেন। তাঁর সংরক্ষণে রয়েছে ১৩৬ টি কলকাতার মাঠে খেলা দেখার টিকিট। প্রত্যেকটাতে মোহনবাগান দল অংশগ্রহণ করেছে । টিকিটগুলি পেছনে লিখে রেখেছেন মোহনবাগান দল কার বিরুদ্ধে খেলছে, কতগুলি গোল করেছে, কে কটা গোল করেছে, আর তারিখ। তার সংরক্ষণে রয়েছে ৩৭টি মোহনবাগান দলের জার্সি। প্রতিটি জার্সি বিশেষ ম্যাচের।যে দিনগুলিতে মোহনবাগান দল খেলায় ভালো ফল করতো সেদিনের খেলা দেখতে পড়ে যাওয়া জার্সি গুলি তিনি সংরক্ষণে রেখেছেন। অনায়াসেই বলতে পারে মোহনবাগান দলের বিগত দিনের খেলার ইতিহাস, কোন খেলোয়াড় এর ডাক নাম কি? কলকাতার মাঠে খেলার দেখার সময় প্রিয় মোহনবাগান দলের জন্য গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে। খেলা দেখার সময় অন্য দলের সমর্থকদের সাথে সৌজন্য বিনিময় করে মোহনবাগান দলের জার্সি ও পতাকা দিয়ে। এক কথায় 'মোহনবাগান ইনসাইক্লোপিডিয়া ' বললে ভুল হবেনা।
মোহনবাগান ফ্যান ক্লাব হিসেবে ২০২৩ সালে গড়ে উঠেছে ‘পূর্ব মেদিনীপুর মেরিনার্স'।এর সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন প্রথম থেকেই । মোহনবাগান দিবস প্রসঙ্গে মদন বাবু বলেন, - ২৯ শে জুলাই আমার কাছে একটা বিশেষ দিন।বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। কিন্তু আমাদের মত মোহনবাগান ভক্তদের কাছে ১২ মাসের ১৪ পার্বণ। আর এই পার্বণ টি হল ২৯ শে জুলাই মোহনবাগান দিবস। দিনটার একটা ইতিহাস আছে। ১৯১১ সালে ২৯ শে জুলাই পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ দল ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে হারিয়ে প্রথম ক্লাব হিসেবে আই এফ এ শিল্ড জিতেছিল মোহনবাগান দল। দিনটি বাঙালির আবেগের আর গর্বের। ফলে এই দিনটি সমগ্র বাঙালির সাথে হৃদয় দিয়ে পালন করব।
![]() |
ব্যারোটের সাথে মদন জানা |
মোহনবাগান সমর্থক মদনবাবু খেলা দেখতে গিয়ে বেশ কয়েকবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। ২০০৭-৮ সালে একবার ডার্বি ম্যাচ দেখতে গিয়ে ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করতে হয়েছে। সেদিন ছোট ছেলে শুভাশিস সঙ্গে থাকায় বড় ধরনের সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পায়। অনেকবার এমনও হয়েছে কলকাতার মাঠে খেলা দেখার পর বাড়ি ফিরতে না পেরে হাওড়া স্টেশনে, মেচেদা স্টেশনে রাত কাটিয়েছেন। পরদিন সকালে বাড়ি ফিরেছেন। এমন খেলা পাগল মানুষটাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি কোন সমস্যাই। ঝড় জল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ছুটে যান মোহনবাগানের খেলা দেখতে কলকাতার মাঠে। স্ত্রী কমলাদেবী জানান, খেলা পাগল মানুষটাকে অনেকবার খেলা দেখতে না যাওয়ার জন্য আটকে রাখার চেষ্টা করতাম। কিন্তু উনি লুকিয়ে চলে যেতেন। রাগ হত যখন অনেক রাতে বাড়ি ফিরে আসে । ভয় হয় এই বয়সে যখন অনেক রাতে খেলা দেখে বাড়ি ফিরে আসে। তবে মদন বাবুর আশা , একবার হলেও প্রিয় মোহনবাগান ক্লাব থেকে ২৯ শে জুলাই ডাক পাবেন।