Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

শিশু পাচার ও নাবালিকা বিয়ে রুখতে রাখির ছোঁয়ায় সচেতনতার বার্তা— অভিনব উদ্যোগ পূর্ব মেদিনীপুরের নিমতৌড়ি হোমের আবাসিকদের

পূর্ব মেদিনীপুর , তমলুক : জেলায় ক্রমবর্ধমান সামাজিক সমস্যা হিসেবে সামনে আসছে শিশু পাচার ও নাবালিকা বিবাহ। শিশু অধিকার রক্ষায় রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের একাধিক প্রকল্প ও আইন থাকা সত্ত্বেও গ্রামীণ এলাকাগুলিতে এখনও এই প্রবণতা থামানো …


পূর্ব মেদিনীপুর , তমলুক : জেলায় ক্রমবর্ধমান সামাজিক সমস্যা হিসেবে সামনে আসছে শিশু পাচার ও নাবালিকা বিবাহ। শিশু অধিকার রক্ষায় রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের একাধিক প্রকল্প ও আইন থাকা সত্ত্বেও গ্রামীণ এলাকাগুলিতে এখনও এই প্রবণতা থামানো যাচ্ছে না। নাবালিকা বিয়ে পূর্ব মেদনীপুর জেলা রাজ্যের মধ্যে প্রথম। এই প্রেক্ষাপটেই এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে নজর কেড়েছে জেলার নিমতৌড়ি জুভেনাইল হোম।

রাখি বন্ধন উৎসবকে কেন্দ্র করে হোমের প্রতিবন্ধী আবাসিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছে এক অভিনব সচেতনতামূলক কর্মসূচি। শিশু পাচার, বাল্যবিবাহ, মাদকাসক্তি প্রতিরোধ এবং সেভ ড্রাইভ সেভ লাইফের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এবারে রাখি বন্ধনে দেখা যাবে সিঁন্দুর অভিযান।

হোমের মুখ ও বধির প্রতিবন্ধী আবাসিকরা তৈরি করছেন পরিবেশবান্ধব ও শিল্পমানসম্পন্ন কয়েক হাজার রাখি। জুট, ধানের খোল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি এই রাখিগুলি যেমন পরিবেশ বান্ধব, তেমনই স্থানীয় শিল্পে আত্মনির্ভরতার দিশাও দেখাচ্ছে। এই রাখিগুলি থেকে প্রাপ্ত অর্থ আবাসিকদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। এর ফলে তারা আর্থিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পায় এবং ভবিষ্যতে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর প্রেরণা পায়। বিভিন্ন সংস্থার অর্ডারের পাশাপাশি এই রাখি মেছেদা ও তমলুক স্টেশনে সরকারি স্টলে বিক্রি করা হয়। 

রাখি বন্ধন উৎসবের প্রায় এক থেকে দেড় মাস আগে এই হোমের শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই রাখি তৈরীর কাজ শুরু করেন। শুধু রাখি তৈরি করেই থেমে নেই তারা। প্রতি বছর রাখি বন্ধনের দিনে জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পথ চলতি মানুষ থেকে প্রশাসনিক ভবন, থানা, আদালত ও অন্যান্য দপ্তরে গিয়ে কর্মকর্তাদের হাতে রাখি পরিয়ে দেন এই শিশুরা। সেই সঙ্গে তুলে ধরেন সামাজিক বার্তা— বাল্যবিবাহ রুখুন, শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করুন!


 শিশুদের নিজস্ব হাতেই যখন সমাজ বদলের বার্তা তৈরি হয় এবং পৌঁছে যায় মানুষের কাছে, তখন সেটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। শিশুদের হাতে বানানো রাখির মাধ্যমে যখন একজন নাগরিক সচেতন হন একটি সামাজিক সমস্যার বিষয়ে, তখন সেই উদ্যোগ হয়ে ওঠে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।

হোমের আবাসিক পূজা ও প্রতিমার কথায়, এই রাখি শুধুমাত্র সম্পর্কের বন্ধন নয় এই রাখির মাধ্যমে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছড়িয়ে পড়বে আর সেই কাজ আমরা করছি এটা ভাবতে পেরেও আমাদের খুব ভালো লাগছে।

হোমের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অফিসার দেবশ্রী ব্যানার্জি জানান, আমরা এবছর ৭০ থেকে ৭৫ হাজার রাখি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন ব্লক, বিদ্যালয়, সরকারি অফিস ও বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছ থেকে অর্ডার পাওয়া গেছে। রাখিগুলির মাধ্যমে আমরা সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে চাই— বাল্যবিবাহ নয়, শিক্ষাই হোক প্রথম অঙ্গীকার।