দৈনিক সেরা কলম সম্মাননা- পর্ব 10
মন মানেনা৷
নবনীতা সই
27, 6,20
অণুগল্প
আজ প্রায় তিনমাস আমি রিয়ার সাথে দেখা করতে পারিনি৷
কি বলছো বস? আমারও তো সেই হাল৷
চুপ কর বে! পচা তোর আবার লাভার৷ শালা দুদিন দেখেই ঝুলে পড়িস৷ কাউকে বাদ দিস?
কি ক…
দৈনিক সেরা কলম সম্মাননা- পর্ব 10
মন মানেনা৷
নবনীতা সই
27, 6,20
অণুগল্প
আজ প্রায় তিনমাস আমি রিয়ার সাথে দেখা করতে পারিনি৷
কি বলছো বস? আমারও তো সেই হাল৷
চুপ কর বে! পচা তোর আবার লাভার৷ শালা দুদিন দেখেই ঝুলে পড়িস৷ কাউকে বাদ দিস?
কি করবো গুরু , আমাদের কি আর তোমার মতন হেব্বি প্রেম নাকি? ঐ আজ আছে কাল ফোটাও , দুদিন বাদেই আবার জোটাও ৷
ধুস! মেজাজ খারাপ করাস না৷ লক ডাউনে বাবার কাজ নেই ৷ সকালবেলা বের হচ্ছি মাছ নিয়ে৷ বিকালে বাড়ি বাড়ি সবজি বিক্রি করছি৷
কাকু কি করছে গুরু?
কি করবে? বসে আছে৷ মা বাবা আর ভাই তিন জনে সারাদিন ঠোঙা বাঁধে৷ মায়ের সেলাই বন্ধ ৷কারখানা খুলছে না৷ আমার সব টিউশনি হাওয়া ৷
সবার এক অবস্থা ৷ তুমি তবুও কালির দু অক্ষর জানো৷ আমি তো বা* কিছু জানিনা ৷ কবে সেই স্কুলে যেতাম, বাপ মরার পর শেষ৷ চায়ের দোকান টা দাদা আর মা চালাতো৷ সেটাও শালা গেছে বন্ধ হয়ে৷ দাদা রোজ কাজের জন্য ঘুরছে৷ আর মা লোকের বাড়ি কাজ খুঁজছে৷ দিদি দুটো কে কি করে জানিনা৷ চুপচাপ রেশনের মোটা চাল , পাতলা ডালের জল দিয়ে খেয়ে যাচ্ছি৷
পুরো কলোনিতে কেউ ভালো নেই , দু একজন চাকরিআলা ছাড়া৷
ঠিক বলেছো গুরু ৷ আমার মালটা আবার বহুত নখরা৷ কাল ফোন করে বলে , রিচার্জ করে দাও ৷
সে তো আমিও করে দিয়েছি ৷ শোন পোদের প্যান্ট না থাকুক , প্রেমিকার ফোন রিচার্জ থাকা চাই ৷
জাতীয় কতব্ব্য বলো গুরু?
একদম৷
তুমি তো গুরু শাজাহান মাইরি, কত বড় ফোন কিনে দিলে রিয়া বৌদি কে৷ দিল বড় কুত্তী চিজ মাইরি৷
হুম৷ ফোনটা দারুণ ছিলো বল?
দারুন মানে ঝাক্কাস ! লাল্লনটপ ৷
রিয়া খুব খুশি হয়েছিলো৷ সেদিন তো ভ্যালেনটাইনস ডে ছিলো বে৷
আমাদের আর ঐ ভ্যালেন না কি , আমি তো বিউটি কে কোনদিন কিছু দেইনি ৷
তুই কি দিবি বে? দুদিন বাদে বাদে তো , তোর মডেল চেঞ্জ হয়৷
যা বলেছো গুরু৷
আমি তো রিয়াকে খুব ভালোবাসি৷ সেই টিকটক দেখার থেকে৷
দারুণ বানায় কিন্তু গুরু৷
হুম৷ বৌদি বে তোর৷
আরে কি যে বলছো গুরু , বা* মারামারি হয়ে যাবে৷ মা কালীর দিব্যি শালা কোন হারামীপনা নেই , তোমার কসম পুরো বোনের মতন ভাবি৷
জানি বে ৷
আমি কি জানিনা গুরু কত কষ্ট করে তুমি বৌদিকে পটিয়েছো৷ কত ভালোবাসো৷
হ্যাঁ রে৷ কবে থেকে শুধু ফোনে কথা হচ্ছে ৷ যেতে পরছিনা৷ কবে যে কোন ভালো কাজ পাবো৷ কত পরীক্ষা তো দিলাম ৷
চেষ্টা করো গুরু , লেগে থাকো৷ তোমার হবে৷
আর কি হবে? সব ছাটাই হচ্ছে , কে দেবে কাজ?
কি হবে বলো তো গুরু?
জানিনা৷ তবে আমি কিছু না কিছু করবোই ৷ আমি রিয়াকে ভালো রাখবো৷
তোমার কথা শুনে গুরু বড় গরম গরম লাগে, মনে হয় শালা ভালো ছেলে হয়ে যাই ৷
তোরা কেউ খারাপ না রে৷ সবাই ভালো৷ মানুষ ভুল বোঝে৷ তোরা সমাজের কলঙ্ক না সমাজ তোদের ব্যবহার করে৷
না মানে টুকটাক চলে তো৷
তাতে কি ? সবার বিপদে ঝাপিয়ে তো পড়িস৷ তোদের মতন রক্তদান থেকে , সময়দান কে করে বে? সেই রাণার বাবা মারা গেলো, কেউ তো আসলো না তোরাই তো করলি সবাই মিলে৷
সে গুরু তোমার থেকে শিখেছি৷ তুমি আমাদের বস৷ কেমন সব কাজে এগিয়ে যাও ৷ তুমি গুরু রাজনীতি তে নামো৷
না রে৷ ওসব আমাদের জন্য না৷ আর জানিস পচা ভালো কাজ করতে কোন রঙ কোন দল দরকার হয়না৷
ঠিক বলেছো গুরু ৷ তবে তোমায় হেব্বি ভালোবাসি গুরু , বিউটির দিব্ব্যি৷
তাহলে বে, আমার মতন ভালোবাসাটা ও শিখে নে৷
রক্ষা করো গুরু৷ তোমার মতন??? এ জীবনে হবেনা৷ তুমি বৌদি কে হেব্বি ভালোবাসো৷ শালা নিজের জীবনের থেকে বেশী ৷
হা হা হা হা , তুই তো হেব্বি চিনিস৷
যা বলেছো গুরু৷ হে হে হে
হ্যালো
রিয়া!
তুমি কি ফ্রী আছো?
হ্যাঁ বলো রিয়া৷
আমি জাস্ট একটা কথা জানতে চাই , তুমি কি মাছ বিক্রি করো?
হ্যাঁ মানে এখন মানে!!
আর কিছু জানার নেই ৷ আমি তোমার মতন লোকের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাই না৷
কিন্তু প্লিজ রিয়া শোনো৷ বোঝো প্লিজ৷
আমাকে আর ফোন করবে না, আমি তোমাকে ব্লক করছি সবকিছু থেকে৷
প্লিজ রিয়া , শোনো আমি আসছি এক্ষুনি ৷
না , তুমি আসবে না৷ আর আমাদের বাড়িতে আসলে তুমি আমার মরা মুখ দেখবে৷
আমার দোষটা কি?
দোষ কি মানে? তুমি মাছআলা আর আমি তোমাকে বিয়ে করবো?
বিশ্বাস করো রিয়া আমি লক ডাউনে আর কিছু...
আমি জানতে চাইনি ৷ আমার বান্ধবী দেখেছে তোমাকে মাছ বিক্রি করতে৷ লজ্জায় মাথা কাটা গেছে আমার ৷ ছিঃ ছিঃ
রিয়া প্লিজ রিয়া আমাকে নিজের কথাটা ...
আমি কিছু শুনতে চাইনা ৷ আর ঐ কুমীরের কান্না অন্য কোনখানে দেখিও ৷ বাই
প্লিজ রিয়া প্লিজ৷
দাদা আজ একটু মাছ আনিস না আমার জন্য৷
হ্যাঁ রে খোকা , দুটো ঝিঙে আনিস পারলে৷
কি গুরু আজ কেমন হলো বিক্রি ?
বাবা রাজু, তুই যা করছিস কটা ছেলে করে? অনেক বছর বেঁচে থাক৷
রাজু দা আজকে একটু দিদিকে পৌছে দেবে?
সবকথা গুলো মাথায় আঘাত করছিলো আমার ৷ কি করবো? কত মানুষ আমার মুখ চেয়ে আছে৷ আর রিয়া? ফোনটা খুলে দেখলাম , রিয়া সত্যিই আমাকে ব্লক করেছে৷ তিনদিন নাকি আমার জ্ঞান ছিলোনা৷ মা বাবা পাগলের মতন আমাকে নিয়ে এই হাসপাতাল আর ঐ হাসপাতাল করেছিলো৷ শালা বিষ খেয়েছিলাম তো৷
তারপর জ্ঞান আসলে, দেখেছিলাম মায়ের চোখ দুটো শুকিয়ে গেছে৷ বাবা একটা বোবা আতংকে যেন পাগলের মতন তাকাচ্ছে৷ ভাইটা ভয়ে কিছু বলছ না৷ কতদিন ভয়ে ভাই টা কাছে আসেনি৷ একদিন বাবা মা তখন গভীর ঘুমে, দেখি রাজা আমার ছোটো ভাই আমার বুকের কাছে এসে ধুকপুক শুনছে৷ আমি হাত দিয়ে মাথায় বুলিয়ে দিতে বলেছিলো, দাদা আমি আর মাছ খাবোনা, তুমি মরোনা দাদা৷
সেইদিন বুঝেছিলাম কি ভুল করছিলাম৷ মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে পারিনি, বাবাকে প্রণাম করে বলতে পারিনি , বাবা আমি সত্যিই অপদার্থ আর এ ভুল হবেনা৷ কিন্তু আমি লড়াই করেছিলাম ৷
দশছর পর৷
আরে পচা কাগজ গুলো ভালো করে সাজা৷ ঘোতন তুই বাবা খাবারের দিকটা দ্যাখ৷
মা মা
কি হলো?
আরে ভাই কে বলো নতুন মালা এনে বাবার ছবিতে পরিয়ে দিতে৷
দিয়েছে তো৷ তোর বাবা থাকলে আজ৷
কোন মন খারাপ করবে না আজ৷
না না আজ তো আমার আনন্দের দিন৷ রিয়া রিয়া৷
আসছি৷
আরে আমার রিয়া বেবী, তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও ৷ পুজো শুরু হবে৷
আচ্ছা ৷
মা তুমি প্লিজ রিয়া কে হেল্প করো৷
মেয়েটা আমার কথা শুনলে তো৷ রিয়া রিয়া৷
আমি রাজু আজ আমার কারখানায় পুজো৷ আজ থেকে দশ বছর আগে আজকের দিনে আমার জ্ঞান ফিরেছিলো৷ সেই দিনটাকে আমার নতুন জন্ম ভাবি৷ তারপর আমি শোক করিনি৷ কারন কি জানেন , মায়ের চোখে অদ্ভুত ভয় দেখেছিলাম ৷ আমাকে হারানোর ভয়৷ ভাই টা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো৷ আর বাবা? বাবা তো আমার অসুস্থতা টা নিতেই পারেনি৷ ছমাস পরেই , যাই হোক, আমি থামিনি৷ আমি লড়াই করেছি৷
আজ আমার মেয়ে রিয়ার জন্মদিনে আমি আমার কারখানায় পুজো দিচ্ছি ৷ ছোট্ট কারখানা ৷ মাস্ক আর টুকটাক সেলাই য়ের কাজ হয়৷ নিজের চলে যায়, আবার দুটো চারটে বস্তির ছেলেদের , যেমন পচা বিশু সবার কিছু হয়ে যায়৷
জানি কি ভাবছেন, রিয়া নামটা নিয়ে তো? কি করবো বলুন৷ সত্যিই ভালোবেসে ছিলাম ৷ নিজে মরে গিয়ে নয় , আমি নামটার মাঝে আমার ভালোবাসা টুকু বাঁচিয়ে রেখেছি৷
শালা পচা ঠিক বলে, দিল বড়ি কুত্তী চিজ৷ 😁৷