Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকা দৈনিক সেরা সম্মাননা

#গল্প

পাগলা দাশু আর ফিজিক্স

অমৃতা মুখার্জী

নিউ মেক্সিকোর লস আলামোস ল্যাব। 1944 / 1945 এ কান পাতলে শোনা যেত রহস্যের ফিশফাশ। চুপিচুপি মারণাস্ত্র তৈরি  হচ্ছে। আ্যটম বোমার আঁতুড় ঘর। বজ্র আঁটুনি সিকিওরিটির ভিতর দিয়ে একটি মাছি ও গলবার…


#গল্প

পাগলা দাশু আর ফিজিক্স

অমৃতা মুখার্জী

নিউ মেক্সিকোর লস আলামোস ল্যাব। 1944 / 1945 এ কান পাতলে শোনা যেত রহস্যের ফিশফাশ। চুপিচুপি মারণাস্ত্র তৈরি  হচ্ছে। আ্যটম বোমার আঁতুড় ঘর। বজ্র আঁটুনি সিকিওরিটির ভিতর দিয়ে একটি মাছি ও গলবার জায়গা নেই। কিন্তু কর্মকর্তা ফ্রেডেরিকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। একটা অদ্ভুত ব্যাপার কিছুদিন ধরে ঘটছে। বোমার ফর্মুলা গুলো যে সুপার সুরক্ষিত লকড বক্স এ রাখা আছে, সেগুলোর কম্বিনেশন লক কেউ খুলছে। শুধু খুলছে তাই নয়। ভিতরে রেখে যাচ্ছে অদ্ভুত চিঠি। চিরকুট। লেখা "Guess Who?" ফাজলামির বুগবুগিয়া বুদবুদ,
"কুমির তোর জলে নেমেছি" হা হা হা "Catch me if you can?"

এত ভাল বিপদ! চিন্তায়,ভাবনায় ফ্রেডেরিকের রাতের ঘুম পলাতক। এ জিনিস যদি রাশিয়া র কাছে ফাঁস হয়ে যায়? সর্বনাশ হয়ে যবে। প্রেসিডেন্ট  হয়তো চৌকে দাঁড়িয়ে সব্বাই কে কোরট মার্শাল করবেন। এটা ভিতরের কোন অসম্ভব মেধাবী  লোক করছে। এই কম্বিনেশন ভাঙ্গা কোন মুখের কথা নয়। অস্থির হয়ে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানী নীলস বোর কে ফোন করলেন।

পরমাণুর জাদুকর হা হা করে হাসলেন। "তুমিও যেমন!  সব্বাই জানে এটা রিচার্ডের কাজ, যেমন ধারালো বুদ্ধি তেমনি মিচকে বজ্জাত। ওর বাঙালী নাম পাগলা দাশু, ওর সামনে দিয়েছো কম্বিনেশন লক? ষাঁড়ের সামনে লাল কাপড়? পাগল কে বলেছো সাঁকো না নাড়তে? আর ওর লাগবে তিন মিনিট ওটা কষে বার করতে। কি নম্বর দিয়েছিলে? 27 18 28? আরে ও তো খ্যাপা! নিমেষের মধ্যে আলগরিদম বার করে ফেলেছে, তারপর উল্টো করে ফ্যাক্টোরাইজ করেছে, লক খুলে গেছে। উফ কি বিচুটে বুদ্ধি ! ভিতরে আবার বিটকেল  মেসেজ রেখেছে? উফ কি পাজী রে বাবা!"

এই হচ্ছেন রিচার্ড ফাইন্ম্যান। পৃথিবী র সর্বকালের সবথেকে পপুলার পদার্থবিদ। অসাধারণ জিনিয়াস আর তেমনি দুষ্টুবুদ্ধি। তার বই গুলোর নাম শুনলেই বোঝা যায় তার ফিচলেমি স্বভাব।
Surely you are joking Mr Feynman ( আপনি কি ইয়ার্কি মারছেন মি: ফাইন্ম্যান). What do you care what other people think ( কে কি ভাবল, বয়ে গেল)।

তার আত্মবিশ্বাস ভয়াবহ। চ্যালেঞ্জার মহাকাশ যান যখন ধ্বংস হয়ে গেল তিনি একটা ফোমের কাপ আর স্ট্র নিয়ে হাজির হলেন পেনটাগনের হুমদো মুখো বড়কর্তাদের কাছে। দেখিয়ে দিলেন যে বাইরের লাইনিং এর তাপ ভাল করে মাপা হয়নি। তাই পৃথিবীর কক্ষ হেকে বেরোতে গিয়ে পুড়ে ছাই হয়ে গেল আকাশ যান। এর জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার দিয়ে তদন্ত কমিশন এর কোন দরকার নেই।

একবার সান ফ্রান্সিস্কো শহরে বিজ্ঞানীদের বিরাট কনফারেন্স চলছিল। সব হোটেল ভর্তি। তিল ধারণের জায়গা নেই। কনভেনশন সেন্টারের হোটেলে গিয়ে কাকুতিমিনতি করছেন বিজ্ঞানী। একদম ভুলে গেছেন রেজিস্ট্রশন করতে। আমি বিখাত বিজ্ঞানী ফাইন্ম্যান। প্লীজ আমাকে একটা ঘর দেবেন? হোটেলের মালিক মুচকি হেসে পথ দেখিয়ে দিল। ফাইন্ম্যান হও আর সুপারম্যান। নো রুম। রিচার্ডের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। তিনি সোজা গিয়ে হাজির হলেন শহরের রেড লাইট (পতিতা পল্লী) এলাকায়। বুঝিয়ে বললেন তার অসুবিধা এক এস্কর্ট সারভিসের মালিক কে। হোটেলের সবথেকে ভাল ঘরটি ছেড়ে দিল বণিতারা প্রফেসরের সন্মানে। এতবড় গুণীজন এখানে আসে কই? পথের মেয়েরা বুঝি সেবা জানে না? দু বেলা নিজে হাতে পেস্ট্রী বানিয়ে প্রফেসর কে খাওয়ানোর প্রতিযোগিতা  চলেছিল, যেকটা দিন ছিলেন।

ব্রুকলীনের ইহুদি পরিবারে জন্ম তার। ছোটবেলা তিন বছর কথা বলতে পারতেন না। বাবা হাল ছাড়েন নি। রাত জেগে গল্প শোনাতেন রিচার্ড কে। প্রশ্ন করতে শেখাতেন। খুব শিগগীর  দেখা গেল সব আলজেব্রা কষে ফেলেছেন। ক্লাস ফোরের ছাত্র trigonometry r পুরো বই শেষ করে ফেলল। বাবা মা একদিন বাড়ি ছিলেন না, ফাটা মেটালের কৌটো  দিয়ে পুরনো ইলেক্ট্রিক তার জুড়ে বার্গলার আলার্ম বানিয়ে ফেলল রিচার্ড। স্কুলে, কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে কেউ তার স্কোর কোনদিন ছুঁতে পারেনি। এম আই টি তে ক্লাসে বসতে গিয়ে দেখা গেল তিনি সবথেকে তরুণ। ক্যালটেকে ভর্তি হবার সময় বার বার বলে দেওয়া হয়েছিল যে ইহুদি আচার কিছু কলেজে পালন করা যাবেনা। আর ইতিহাসে মাত্র চল্লিশ পেলে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। সে থিওরেটিকাল পদার্থবিদ যতই গণিতে ভাল করুন না কেন।
ফাইন্ম্যান ফিচেল হাসলেন। বললেন দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা!

কিছুদিন পরে দেখা গেল মাত্র 24 বছরের ছাত্র কে ম্যানহাটান প্রজেক্ট ডাকছে , ডাকছেন ওপেনহাইমার। পৃথিবীর ইতিহাসে সবথেকে ভয়ংকর বোমা তৈরী হচ্ছিল।  তাড়াতাড়ি গিয়ে ধরলেন হাইস্কুলের প্রেমিকা আইলিন কে । অসামান্য সুন্দরী আর বুদ্ধিমতী কিন্তু রাহুর মত তাকে গ্রাস করেছে যক্ষ্মা রোগ সংক্রান্ত টীউমার, লিম্ফোমা। সে বেশিদিন বাঁচবে না। রিচার্ড জানেন। কিন্তু তাকেই বিয়ে করবেন। একদিন ইলোপ করে প্রিয়তমা কে নিয়ে হাজির হলেন স্টাটেন আইল্যন্ডে। সাক্ষী দিল কয়েক জন অচেনা লোক। গোধূলির আলোয় আংটি পরিয়ে দিলেন, প্রতিজ্ঞা করলেন until death do us part.

মাত্র 360 ডলার মাইনে। গাড়ী ও নেই। আইলিন কে স্যানাটরিয়মে রেখে পকেটে আর কিছু থাকেনা প্রায়। কিন্তু খুব আনন্দে থাকে নব বিবাহিত যুগল। শুধু সপ্তাহ অন্তে দেখা। বাস ধরে কখনো ট্যাক্সি করে আসেন ফাইন্ম্যান। আইলিন প্রায়ই মজা করেন। আমার মৃত্যুর দিনে দেখো যেন ফ্ল্যাট টায়ার না হয় তোমার! বী অন টাইম। বুকের ভিতর টা দুমড়ে, মুচড়ে যায় রিচার্ডের । আইলীন তিলে তিলে ঝরে যাচ্ছে। সুন্দর কোঁকড়া চুল পড়ে যাচ্ছে। চোখের নিচে কালি। মুখে হাসি সাজিয়ে রাখেন। এরি মধ্যে রং তুলি আনেন, তাস খেলেন আইলিনের সাথে, গীটার বাজিয়ে গান হয়। ওদিকে মারণাস্ত্র তৈরীর রক্তজল করা খাটনি। একদিন দেরি হয়ে গেল। বাস বন্ধ। ছুটে এসে ট্যাক্সি নিলেন। স্যানাটরিয়মের কাছে এসে দুম করে টায়ার ফাটল। মন টা আশংকায় কেঁপে উঠল। রিচার্ড উন্মাদের মত ছুটতে শুরু করলেন। আইলিন আমি আসছি। এলেন, কিন্তু অভিমানীর তখন কথা বন্ধ হয়ে গেছে। যন্ত্রণায় ছটপট করছেন। মরফিনের ঘোরে চলে গেলেন। অন্ধকার ঘরে হাত ধরে চুপ করে বসে রইলেন রিচার্ড।  মাত্র 23 বছরের আইলিন চলে গেলেন।

সারা জীবন তার হাসি মুখ দেখে কেউ বোঝেনি কত বড় দু:খ কে তিনি বুকের তলায় পাথর চাপা দিয়ে রেখেছেন। অনেক ভুল করেছেন। মদ, মারিহুয়ানা, শত শত প্রেমিকা। ব্রাজিলে চলে গেছেন। নাঈটক্লাবে বঙ্গো বাজাচ্ছেন অত বড় প্রতিভা। কোন্টাম মেকানিক্সের জাদুকর,নোবেল প্রাঈজ পাওয়া পদার্থ বিদ। খোরপোষ দিতে বিক্রি করে দিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন পুরস্কারের মেডেল। কিন্তু আইলিন কে কোনদিন ভুলতে পারেন নি।

আর কোনদিন অহংকার ছিল না। সবসময় হাসিখুশি, মজার কান্ড করে সবাই কে মাতিয়ে রাখতেন। একবার বাংলাদেশি প্রফেসরের বাড়ি এসেছেন ডিনারের নেমন্তন্ন খেতে। টাই, স্যুট পরে। মাছের কালিয়া দেখে দারুণ এক্সাইটেড। কিন্তু পোষাকী কাঁটা চামচ দিয়ে কি আর কাতলা মাছ বাগ মানে? একটু পরেই, ধুত্তেরিকা বলে কোট, টাই খুলে, জামার হাতা গুটিয়ে বসে পড়লেন বিজ্ঞানী। দু হাতে মাছের কাঁটা বেছে খুব তৃপ্তি করে খেলেন।

কোন হোমরা চোমরা রাজনীতি র কিছুমাত্র পরোয়া করেন নি। প্রচুর অস্বস্তিকর প্রশ্ন করে কর্তাদের নাকানি চুবানি খাওয়াতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। যা নিজে ভাল মনে করতেন তাই করতেন। কারো তোষামোদ করতেন না। কোন ধর্ম বা দলে র প্রতিনিধিত্ব কোনদিন করেন নি। মৃত্যুশয্যাতেও মজা করে বলেছিলেন আমি মরে গেলেও আমার দুষ্টুমির গল্প গুলো থেকে যাবে। আর সমাধি টমাধি লাগবে না, I hate to die twice, its so boring.

স্বর্গে গেলে হয়ত দেখা যাবে যম রাজ ভয়ে ভয়ে আছেন। রিচার্ড যা খ্যাপা। মরণ বাক্সের সব কম্বিনেশন লক খুলে যত ভাল লোকদের আত্মা বার করে নিয়ে বিশাল পার্টি বসিয়েছেন। তেড়ে বঙ্গো বাজাচ্ছেন। আইলিনের একটা কথাও শুনছেন না।

♥♥♥♥♥♥
copyright reserved