বিচারব্যবস্থা সুরক্ষিত করুক নাগরিক অধিকার
পীযূষ প্রতিহার
(লেখক পরিচিত - পেশায় ইংরাজির শিক্ষক।বাড়ি বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা ব্লকে হলেও বর্তমানে শিক্ষকতার কারনে ঝাড়গ্রামে থাকেন। নেশা পড়াশোনা, সর্বগ্রাসী পাঠক। যেকোনো ধরনের বই পড…
বিচারব্যবস্থা সুরক্ষিত করুক নাগরিক অধিকার
পীযূষ প্রতিহার
(লেখক পরিচিত - পেশায় ইংরাজির শিক্ষক।বাড়ি বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা ব্লকে হলেও বর্তমানে শিক্ষকতার কারনে ঝাড়গ্রামে থাকেন। নেশা পড়াশোনা, সর্বগ্রাসী পাঠক। যেকোনো ধরনের বই পড়তে ভালোবাসেন। বিশেষ পছন্দ কবিতার বই। একটু আধটু কবিতা লেখেন। সিনেমা দেখতে এবং পাহাড় ও জঙ্গলে বেড়াতে ভালোবাসেন।)
******************
চীনের সেনা ভারতীয় সীমানায় ঢুকে ঘাঁটি গেড়ে বসে ছিল। নেপাল ভারতের অংশ নিজেদের দেশ বলে মানচিত্র প্রকাশ করে দিচ্ছে। পাকিস্তান তো কবে থেকে দখল করে বসে আছে। আমরা সহিষ্ণুতা দেখিয়েই যাচ্ছি! মাঝে মাঝে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছি! দেশের সেনা মরছে, যুবশক্তি মরছে, মানবসম্পদ নষ্ট হচ্ছে। দেশের নাগরিকদের কাছে এসব বিষয়ে সরকারের দায়বদ্ধতার অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন এক একজন মন্ত্রী এবং আমলা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেন একই বিষয়ে। নাগরিকদের বিভ্রান্ত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কুটনীতি আর রাজনীতির কূটকৌশল ব্যবহার করে মানুষকে চুপ করিয়ে রাখা হয়েছে। কখনো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দোহাই, কখনো রাষ্ট্রসংঘ তো কখনো পররাষ্ট্র নীতি। যা সরকার পাল্টে গেলেই পাল্টে যায়। এ বিষয়ে দেশের মানুষের মতামতের কোনো গুরুত্ব কি কোন সরকার অনুধাবন করেছে কোনদিনও? আমাদের বিচারব্যবস্থা বা কনশ্টিটিউশন কি এ ব্যাপারে কোনো ভুমিকা নিতে পারে না? অনন্ত দেশের মানুষের অবগতির স্বার্থে। যদিও সেই ব্যবস্হার ইম্প্লিমেনটেশনের ভার আবার সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের হাতে। সেখানেও নিরপেক্ষতার বড় অভাব। যখন যে দল সরকারে থাকে সেই দল যাবতীয় সমস্যার বিচার করে সেই দলের দৃষ্টিভঙ্গীতে। অর্থাৎ নাগরিক পন্হী দৃষ্টিভঙ্গির অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পুরোপুরি নাগরিক পন্হী দৃষ্টিভঙ্গির অভাব অবশ্য সবাই ভাববেন না, কারণ সেই নাগরিকদের একটা বড় অংশ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। তাহলে বাকি নাগরিকদের অধিকার, তাদের চাওয়া পাওয়া, তাদের অভাব অভিযোগের কি হবে? তারা অপেক্ষা করবেন পরবর্তী সরকারের? যদি তার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সহমত পোষণকারী সরকার তার জীবদ্দশায় না ক্ষমতায় আসে তাহলে সে সারাজীবন রাষ্ট্রের কাছে বঞ্চিত থেকে যাবে না? এইখানেই প্রয়োজন অভিন্ন নাগরিকপন্থী কর্মসূচির। এবং তা হতে হবে অধিকাংশ (সর্বোচ্চ সংখ্যক) নাগরিকের মতামতের ভিত্তিতে। সেখানেই প্রয়োজন নিবিড় মতগ্রহনের সমীক্ষা। যা জনগণনার অংশ হিসেবে নাগরিকের মতগ্রহনের মাধ্যমে সম্ভব। এবং আমাদের মতো বিরাট দেশের সর্ববৃহৎ সংবিধানের ত্রিস্তরীয় শাসন ব্যবস্থায় শেষ ভরসা হিসেবে তখনই মনে হয় বিচারব্যবস্থার কথা। শেষ কথা বলতে হবে তাঁদেরই।
এবং আরও একটি বিষয় যা আপাতভাবে একটু ভিন্ন ধরনের হলেও বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা দেখানো ছাড়া আমজনতার উপায় নেই। সেটি হল বিজ্ঞাপন। আমাদের মতো গরীব দেশের ততোধিক গরীব জনতা বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হচ্ছে এ ঘটনা হামেশাই ঘটছে। এবং ঘটছে লিগ্যালি। এখানেই প্রয়োজন বিচারব্যবস্থার হস্তক্ষেপ। সরকার লটারির ব্যবসা করছে কোটি কোটি টাকার আর সেই ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে তাদেরকে নির্বাচিত করা নাগরিক। কি পরিহাস! এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের বিজ্ঞাপনের ফাঁদ। তার মধ্যে অন্যতম হল ফেয়ারনেস ক্রিম, সে ক্রিম মাখলে নাকি চামড়ার রং বদলে যাবে। কি ভীষন অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক এই সমস্ত বিজ্ঞাপন চলছে আমার-আপনার বাড়ির টিভি এবং স্মার্টফোনের পর্দায়।কত নাগরিকের মনোজগতে প্রভাব ফেলছে সে সমস্ত বিজ্ঞাপন, কে ভেবে দেখবে? শেষ ভরসা সেই কোর্ট। আর ঐ প্রায় অদৃশ্য অক্ষরে ছোট ছোট করে লেখা 'শর্ত প্রযোজ্য' বা 'কন্ডিশনস এপ্লাই' লিখে সেই সমস্ত বিজ্ঞাপনকে আইনী মোড়ক দেওয়ার ব্যবস্থা দেখলে বিচারব্যবস্থার প্রতিই আস্থা ভেঙে যেতে সময় লাগবে না। তাই এখনই সতর্ক হওয়ার সময়, সমস্ত ধরনের বিজ্ঞাপনের মধ্যে ভালো এবং মন্দ প্রতিটি গুনাবলী উপভোক্তাকে জানানো বাধ্যতামূলক করা হোক। ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের জানুক প্রতিটি জিনিসের ভালোমন্দ, দোষগুণ, কোনো আড়াল না রেখেই। সিগারেটের প্যাকেট যেমন ছাপা থাকে ধূমপান জনিত ক্ষতির কথা তেমনি প্রতিটি দ্রব্যেই থাকুক সেই দ্রব্যের ভালো এবং খারাপ দিকগুলো। শেষ ভরসা হিসেবে বিচারব্যবস্থার উপরে আস্থা আছে তাঁরা এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন তাড়াতাড়ি। নাগরিকদের স্বার্থে। যেমনটি আমরা দেখেছি ভোটের ইস্তেহারে রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া অসম্ভব প্রতিশ্রুতি বা বেআইনি ঘোষণা বন্ধ করতে ভারতের নির্বাচন কমিশন বর্তমানে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছে।