Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#গল্প _দুর্যোগের রাতে
#কলমে_তুলি চক্রবর্তী

একলা থাকবো বলেই গ্রামের বাড়িতে আসা। দিন দশেক হোলো এসেছি হাওড়া আর মেদিনীপুর জেলার সীমানা আলাদা করা রূপনারায়নের ধারে এই ছোট্ট শান্ত গ্রামে। পুরো গ্রাম আর নেই। এখন আধা শহরও বটে। পুরো জি…


#গল্প _দুর্যোগের রাতে
#কলমে_তুলি চক্রবর্তী

একলা থাকবো বলেই গ্রামের বাড়িতে আসা। দিন দশেক হোলো এসেছি হাওড়া আর মেদিনীপুর জেলার সীমানা আলাদা করা রূপনারায়নের ধারে এই ছোট্ট শান্ত গ্রামে। পুরো গ্রাম আর নেই। এখন আধা শহরও বটে। পুরো জিজিটাল। সব খবরই চলে আসে ইথারে ভেসে চুপচাপ। উত্তাল হয় চারপাশ।

কলকাতা থেকে খুব দূরে না অথচ কি শান্ত আর সবুজ এই #রোদসী গ্রাম। বেশ আত্মার সম্পর্কে বাঁধা এখানে সবাই একে অপরের সাথে। আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যে মোরাম রাস্তা একটু এগিয়ে ডান দিকে বেঁকে নদীর পাশ বরাবর চলে গেছে ঐ বাঁকের মুখেই বড় বড় ঝুরি নামা বট গাছের পাশে শিব মন্দির। আর মন্দিরের পাশের বাড়িটাই নীলিমা বৌদিদের। দাদা সোনার কারিগর মুম্বই তে থাকেন। বৌদি বারো বছরের ছেলে নিয়ে গ্রামেই থাকেন। আমাকে খুব ভালোবাসেন বৌদি। আমার ঘন ঘন চা খাওয়ার অভ্যাস বৌদি জানেন এবং আমার  চা বানানোর আলসেমি, ঠিক মতো সব সরঞ্জাম না থাকায় বৌদি ফ্লাস্কে করে চার কাপ চা একসাথে দিয়ে যান বরাবর। দুপুর রাতের খাবার নদীর ধারে সুবল কাকার পাইস হোটেল থেকে আনিয়ে নি।

এবার এসে ইস্তক সেভাবে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি। কারণ এক বিভৎস ছোঁয়াচে রোগ।এই রোগের ভয়ে সবাই ঘরে আর আমিও খুব ফাঁপরে। চলছে লকডাউন। এসেই দেখি দোকান বাজার প্রায় বন্ধ। নদীর ধারে বা বাড়ি আসতে রাস্তার ধারে সব চায়ের ঠেক বন্ধ। কেমন অদ্ভুত বিরান ছেয়ে আছে পুরো রোদসী গ্রামে।

ভাগ্যিস কিছু শুকনো খাবার আর জল ছিল সাথে। সকাল, দুপুর তো হয়ে গেল। এবার একটু বিশ্রাম। একা একা সব কাজ করে বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম।

তুমুল হাওয়া শুরু হোলো বিকেলের পর থেকে। বৃষ্টি এলো দাপিয়ে তার সাথে সোহাগ করে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর হঠাৎ হঠাৎ চারদিক পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে সেই আলোয়। কারেন্ট নেই। মোমও নেই সাথে। ভাবছি ডিপ টি খাবো। কিন্তু হট প্লেট তো চলবে না। এবার... এই প্রথম বার আমার চা নিয়ে এত সমস্যা। ইসসসস বৌদি যদি একবার আসতে পারতো.....

ভাবছি... এমন সময় মনে হোলো পেছনে কেউ.... আরে বৌদি!! আমি চিৎকার করে উঠি.... আলো আঁধারিতে বৌদির অবয়বটা কেমন সরে গেল...
আমি বলেই ফেললাম 'তুমি নিশ্চয়ই চা নিয়ে এসেছো... এইবার যা কষ্ট পাচ্ছি এই চা না পেয়ে.... আমার লক্ষ্মী সোনা বৌদি.... কলকাতা থেকে ছুটে আসি একা থাকতে আর তোমার বানানো চা খেতে...'

নীলিমাবৌদি কেমন যেন ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো 'আমি জানি তো.... তুমি এসেছো জেনেই এলাম.... কিন্তু আজ চা আনিনি..... জানোই তো সব... কেবল তুমি এসেছো বলেই এলাম একবার দেখতে তোমাকে...

এর মধ্যে জোরে জোরে বিদ্যুৎ ঝলক আর বাজ.... দুহাতে কান চেপে ধরে চারিদিকে তাকিয়ে দেখি কেউ তো নেই কোথ্থাও.... দরজা বন্ধ ভিতর থেকে.....বৌদি কোথায় গেল??.... আমি চিৎকার করে উঠি 'বৌদিইইইইইইইই....' আওয়াজ বেরোয় না গলা দিয়ে.... শুকিয়ে কাঠ আমার গলা...

বৃষ্টি হাওয়া সব থেমে গেছে.. মাথা ভারী হয়ে আছে... ভাবনা জট পাকিয়ে যাচ্ছে.... ঠিক বুঝতে পারছি না যা দেখলাম.... শুনলাম.... সব সত্যি তো..... না কি আমার অবচেতন মনের ভাবনার প্রকাশ..... অথবা সবটাই #হ্যালুসিনেশন...

দুর্যোগের রাত কেটে ভোরের নরম আলো ছড়িয়ে পড়েছে দেখি চারদিকে...বাড়ি.... বাগান.... আরও দূরে নদীর জল সেই আলোয় সোনার মত চিক চিক করছে... কি পবিত্র সকাল....

এক মুহূর্ত দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম দরজা খুলে রাস্তায়.... দেখা হয়ে গেল গোপাল কাকার সাথে....গ্রামের সবার খবর জিজ্ঞেস করে শেষে নীলিমা বৌদিদের কথা জিজ্ঞেস করলাম। গতকাল বৃষ্টির মধ্যে বৌদির আসা এবং হঠাৎ মিলিয়ে যাওয়া.... সব বললাম।

গোপাল কাকা সব শুনে অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর যা বললেন আমার রোম খাঁড়া হয়ে গেল শুনে। দু সপ্তাহ আগে নীলিমা বৌদির হাসব্যান্ড অরূপ দা মুম্বই থেকে চলে আসেন। নিজের অজান্তেই সঙ্গে করে নিয়ে আসেন মারণ রোগ। একসাথে থাকায় কিছু দিনের মধ্যেই বৌদি আর ছেলেও আক্রান্ত হন ঐ মারণ রোগে। দাদা আর ছেলে সুস্থ হয়ে গেলেও বৌদিকে বাঁচানো যায় নি। পরশু রাতে বৌদি মারা যান এবং গতকাল বিকেলে তার সৎকার হয়েছে গ্রামের শ্মশানে.....