Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

গল্প :সুখের খোঁজে।
কলমে রীনা মুখার্জী।
কপালে সুখ নেই কো আমার পোড়া কপাল ভাল... এই গানটা বেশ আমার মনের কথা বলে দিল।আজ এই সত্তরের ঘরে পা রেখে একটা কাজ হয়েছে পিছনের দিকে ফেলে আসা পথের ভুল- ঠিকগুলোকে পর্যালোচনা করা।খুব সকালে ঘুমটা আপনা…


 গল্প :সুখের খোঁজে।


কলমে রীনা মুখার্জী।


কপালে সুখ নেই কো আমার পোড়া কপাল ভাল... এই গানটা বেশ আমার মনের কথা বলে দিল।আজ এই সত্তরের ঘরে পা রেখে একটা কাজ হয়েছে পিছনের দিকে ফেলে আসা পথের ভুল- ঠিকগুলোকে পর্যালোচনা করা।খুব সকালে ঘুমটা আপনা আপনি ভেঙে যায়।তারপর রেডিও তে কান পাতি।কতোগুলো চ‍্যানেল কি সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে আর এক একটা গানে মাঝে মাঝে ঝুপ করে ডুব দিয়ে বসি।

ছেলেবেলাটা ধানবাদে কেটেছিল।প্রায় পনের বছর বয়সে একটা কাধে ব‍্যাগ ঝুলিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিলাম।প্রেম ট্রেম না শুধুমাত্র পড়াশুনা করব বলে আমার প্রিয় দিদিমনির সাথে যোগাযোগ করে পালাই।

আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি বাবা আর সৎ মা মিলে আমার থেকে দ্বিগুণ বয়সী একটা লোকের সাথে বিয়ে ঠিক করে।আশীর্বাদের দিন আমি জানতে পারি লোকটার কি একটা ছোঁয়াচে রোগ আছে আর তাই লোকটার আগের বৌ ওর চলে গেছে।আমার আর উপায় ছিল না।

ক্লাসে অল্প কদিনের জন‍্য বিনিতা দিদিমনি পড়াতে এসেছিলেন তখন থেকেই দিদিমনির মিষ্টি ব‍্যবহার মনছুঁয়ে গিয়েছিল।তারপর দিদিমনি কলকাতার কলেজে চান্স পেয়ে পড়াতে চলে আসেন।ফোন নম্বর টা দিয়েছিলেন।খুব সাবধানে একটা ফোন পাড়ার এক দাদার ফোন থেকে করি।ব‍্যাস সাহসে ভর করে দিদিমনির বাড়িতে পৌঁছে যাই।

দিদিমনির বাড়িতে দিদিমনির মা আর ওনার স্বামী থাকতেন।ওটা দিদিমনির বাবার বাড়ি মানে মাসীমার বাড়ি।মাসীমা আমাকে খুব ভালোবেসে স্হান দিলেন।পাড়ার ইস্কুলে ভর্তি করে দিলেন।বেশ চলছিল লেখাপড়া আর মাসীমার কাছে গান শেখা।আমার ভালো স্বাস্স‍্য ভালো পরিবেশে অনেক বেশি খোলতাই হয়ে গেল।আর সেটাই বড় বিপদ ডেকে আনল।

মাধ‍্যমিক পরীক্ষার পড়া করতাম রাত জেগে।দিদিমনি কলেজের সাথে কোথায় ঘুরতে গেছেন।মাসীমার ঘুমের ব‍্যাঘাত হবে বলে পাশের ঘরে পড়ছি।দাদাবাবু জল চাইতে ঘরে এলেন।কি ভয়ংকর সেই রাত ;আমাকে জোর করে ধর্ষণ করলেন।জীবনে প্রথমবার খুব ভয় পেয়ে গেলাম।দুদিন খুব জ্বরে পড়ে থাকলাম।দিদিমনি বাড়ি ফিরতে ওনাকে সবটা বলেদিলাম।ভেবেছিলাম দিদিমনি আমার সমস্যাটার সমাধান করবেন কিন্তু তিনি নিজের ঘর বাঁচালেন।

মাধ‍্যমিক পরীক্ষার পর আমাকে ওনার পরিচিত একটি সংস্হার হাতে তুলে দিলেন।বৃদ্ধাশ্রমে সহায়িকার কাজ জুটে গেল বিনিময়ে খাওয়া থাকা।বৃদ্ধাশ্রমে এক দিদা আমাকে লেখাপড়া শেখালেন।ওনার চেষ্টাতে বার ক্লাসের পরীক্ষায় পাশ করে ফেললাম।দিদার মেয়ে এসে দিদাকে তার বাড়িতে নিয়ে গেল।দিদা প্রায় বছরখানেক বাদে আমাকে ওখান থেকে ওনার বাড়িতে নিয়ে গেলেন।কতৃীপক্ষ ছাড়তে চাইছিল না।কিন্তু দিদা আমার জন‍্য অনেক লড়াই করে ওনার কাছে নিয়ে গেলেন।

আমি প্রাইভেটে বিএ পাশ করে পরীক্ষা দিয়ে প্রাইমারি স্কুলের চাকরিটা পেয়ে গেলাম।অনেকটা দূরে চাকরীর স্হল বলে স্কুলের কাছেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করলাম।দিদা মারা গেলেন আর ওনার মেয়ে আবার বিদেশে চলে গেলেন।ভীষণ একলা লাগার জন‍‍্য স্কুলের পরে একটা ছোট লাইব্রেরিতে সময় কাটাতাম।সেখানেই অমিতাভর সঙ্গে আলাপ।মায়ের জন‍্য বই নিতে আসতেন।মাঝে মাঝে চা খাওয়াতেন খুব হই হই করে গল্প করতেন।এই আলাপ এমন জায়গাতে চলে গেল আমাদের বিয়েটা করতেই হল।একমাত্র ছেলের ঘরে উত্তরাধিকার আসল না।আমার প্রথম ধর্ষণ হবার পর বিনিতা দিদিমনি ডাক্তার দেখিয়েছিলেন তখন কি সব চিকিৎসা হয়েছিল জানি না আমার একটা শারীরিক ক্ষতি হয়েছিল।আমি আর কখনো মা হতে পারবো না জেনে এমন হাসিখুশি অমিতাভ কেমন গোমরা হয়ে গেল।আমার অতীত আমি গোপন করিনি।আর একটু একটু করে বাঁধন আল্গা হয়ে গেল।

চাকরীটা কে ভরসা করে আবার মনের জোর খুঁজতে চেষ্টা করলাম।বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে কোথায় যেন একটা তৃপ্তি পেলাম।

রিটায়ারমেন্টের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে দুটো অনাথ ছেলেমেয়ের দায়িত্ব নিলাম।ঘটনাচক্রে ওদের মামা ওদের একটা অনাথ আশ্রমে পাঠাবার জন‍্য আমার সাহায্য নিতে এসেছিল। ছেলেমেয়ে দুটোর মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন হয়ে গেল।মামা ভদ্রলোকের সাথে কথা বলে আর আইনি সাহায্য নিয়ে চোদ্দবছরের ছেলে ও বারো বছরের মেয়েটির মাসী হয়ে গেলাম। আজ সেই ছেলে কলকাতা পুলিশে সাব ইনস্পেক্টর আর ওই মেয়ে সরকারি হাসপাতালের নার্স।

মাতৃত্বের অনেকটা স্বাদ আমি পেয়েছি।পেরেছি নিজের কিছুটা জীবনে একটা দাগ কাটতে।আজ আমার সত্তর বছরে প্রথমবার জন্মদিন পালন হবে।ছেলে মেয়ে সারা বাড়িতে বেলুন দিয়ে সাজিয়েছে।আমার পেনশনের খাতায় এই জন্মদিনটা লেখা ছিল।সেখানথেকেই ওরা উদ্বার করেছে।বেশ লাগছে।স্মৃতির খাতাতে আগামীদিনে এই দিনটার কথাও মনে মনে লেখা থাকবে।না পোড়া কপালেও এই সুখটুকু লেখা ছিল।