Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

গল্পভালোবাসার পাগলামি বনাম ভালোবাসার শৈত্যকৌশিক ভট্টাচার্য্য5.4.21-অমল স্ত্রী অমলাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।তাকে সর্বদা চোখে হারায়।কিন্তু তার আদরের বাহুল্য অমলার লজ্জা ও বিরক্তির কারণ হয়েছিল।শেষে অমলা অমলকে এমন কটু কথা শোনালো যে তা …

 


গল্প

ভালোবাসার পাগলামি বনাম ভালোবাসার শৈত্য

কৌশিক ভট্টাচার্য্য

5.4.21

-

অমল স্ত্রী অমলাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।তাকে সর্বদা চোখে হারায়।কিন্তু তার আদরের বাহুল্য অমলার লজ্জা ও বিরক্তির কারণ হয়েছিল।শেষে অমলা অমলকে এমন কটু কথা শোনালো যে তা অমলের মর্মে শেলের মতো বিঁধল।তা শৈত্য এনে দিল তাদের সম্পর্কে। সেই কথাই লিখতে বসেছি।

দৃশ্য1: অমল সবে অফিস থেকে ফিরেছে।এসেই ডাকল,"অমলা!" "কি বলছো" বলে অমলা অমলের কাছে এসে দাঁড়াতেই,অমল অমলার বিশাল চুলের কুন্ডলী খুলে চুলের জট ছাড়াতে লাগল। তারপর চিরুণী দিয়ে চুল আঁচড়াতে আরম্ভ করল। অমলা বলছে,"আ:, কি করছো? মা দেখছে সব।' অমলের মা বলল,"থাক,বৌমা। তোমাকে আর লজ্জা পেতে হবে না। আমার ছেলেটা এমন বউ পাগলা! তা কি করা যাবে। তোমার শ্বশুর তো ওনার ভালোবাসাটা মনে মনেই রাখতেন।সবার সামনে খোলাখুলি আমায় আদর করতেন না।তবে তোমরা এ যুগের মেয়েরা হয়ত সেটাই পছন্দ করো।" অমলা অমলের হাত থেকে চুলটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,"দেখলে,মা কি বলে গেল!" অমল বলল,"শোনো,মা ও রকম বলে। তা বলে আমার বউকে আমি আদর করবো না?" অমলের কথা শুনে, অমলা কপাল চাপড়ে বলছে,"হায় ভগবান,একে শোধরানো শুধু আমার নয়,সকলের সাধ্যের বাইরে।একটা অদ্ভূত লোক!"

দৃশ্য 2: অমল আর অমলা বাড়ির থেকে একটু দূরে অমলার দাদার বাড়ি গেছে। অমলার দাদা আর বৌদি ওদের থেকে মুচকি মুচকি হাসছে। অমলা অবাক।"কিরে,তুই আর বৌদি এত হাসছিস কেন?"

বৌদিকে ইশারা করে ওর দাদা তখন জিজ্ঞেস করল, "কি,আমি বলবো, নাকি তুমি বলবে?আচ্ছা,তুমিই বল।"এবার অমলার বৌদি বলতে গিয়ে তো হেসে কুটি কুটি। "ও: সেদিন যা রগড় করেছিলে না অমল!" অমল অপ্রস্তুত। অমল তখন আমতা আমতা করে, অমলার বৌদির দিকে তাকিয়ে বলল,"মানে,আপনি কি বলছেন,আমি কি করলাম,কখন কি করলাম?কিছুই ত বুঝছি না।"

"আচ্ছা,ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানো না,না?তুমি তো বেশ স্টেশনে পাশের সীটে বসে তোমার বউয়ের ঘাম মুছিয়ে দিচ্ছিলে রুমাল দিয়ে। আমি একটু দূরেই ছিলাম। আমি ইচ্ছে করেই আর সাড়া করিনি।তোমাদের ভাব ভালোবাসা মাটি করবো?"ওর দাদা বৌদির হাসি থামতেই চায় না।এবার অমলও মুখ কাঁচুমাচু করে বসে আছে।এবার

অমলা বলল,"দেখেছিস,দাদা,ও কি রকম অসভ্য!"

দৃশ্য 3: অমলার বড়দি ওর পাড়াতেই থাকে,বাড়ির খুবই কাছে। একদিন অমলা ফোন করছে। আর অমল ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু খাচ্ছে। হঠাৎ হাসির শব্দে দুজনেই চমকে উঠে দেখে,ওর দিদি কখন চুপিচুপি ওদের ঘরে ঢূকেছে। হয়ত বাইরের দরজা ভেজানো ছিল বলেই ঢুকেছিল আর ওদের এই অবস্থায় দেখেই ডাকেনি। শুধু হাসির উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ফেলেছে। "আচ্ছা,আমি পরে আসছি"বলে ওর দিদি চলে যেতেই,অমলা ঝংকার দিয়ে বলে উঠল,"তুমি না কারো কাছে আমার মান সম্মান রাখবে না। বুঝতে পারছি।"

দৃশ্য 4: অমলা অমলের হাত মুচড়ে দিয়ে বলে উঠল,"নির্লজ্জ ব্যাটাছেলে,আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি। কখনো যদি লোকের সামনে অসভ্যতা করো তবে আমি তুমুল অশান্তি করবো।তোমার এই সব পাগলামি করতে ইচ্ছে হয়,বাড়ির বাইরে গিয়ে করো। আমার সাথে নয়,বুঝলে?" অমল এবার আর কোনো কথা বলল না।শুধু গুম হয়ে বসে রইল।

দৃশ্য5: অমলার ধারেকাছেও অমলকে আর দেখা যাচ্ছে না। কারো সাথে কারো কথা নেই। শুধু খাবারের সময় অমলা অমলকে ডাকে। অমলও অমলাকে ডাকে তার অফিসের জামা কাপড় এগিয়ে দিতে। অন্য সময় কেউ কাউকে চেনে না।এটা বোধহয় অমল কিংবা অমলা কেউই ভাবেনি।

ওপরে বলা গল্পটি এক রোজকার জীবনের বাস্তব উপাদান থেকে নেওয়া।সম্পর্কের মধ্যে জোয়ার ভাঁটা চলে ঠিকই। কিন্তু এটা হল চরম অবস্থান।কিছু আবেগপ্রবণ মানুষ স্থান,কাল,পাত্র ভুলে তাদের ভালোবাসার আবেগ অনুভূতি এইভাবে প্রকাশ করতে গিয়ে ঘোর সংসারী ও নিয়ম সংস্কারে পরিপক্ক মানুষের কাছে নাস্তানাবুদ হয় ঠিকই।তবে যুক্তির পথ কোনো নতুন আলো দিতে পারে না। বরং নিয়মের এই বজ্রকঠিন পথে চলতে চলতে দুটো মন যখন হাঁপিয়ে উঠবে তখন এক সময় গিয়ে মনে হতে পারে -এ অসহ্য।বরং ঐ ছেলেমানুষিই ভালো ছিল।তবে মানুষ অহমাত্মক বলে এই মনোভাব হয়ত বাইরে ব্যক্ত হবে না। তবে ভিতরে ভিতরে গুমরে কাঁদবে দুজনেই।তা বলে কি মুখে স্বীকার করা যায়?