Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#গল্প
#চলো_আমরাও_উড়ি_আজ_আকাশে#মিষ্টিমৌ27/08/2021-"অলক, আজ বেশ চনমনে লাগছে যে তোমাকে।কি ব্যাপার বলো তো।"
-"ছুটি ছুটি ছুটি।"
-"মানে কিসের ছুটি আজ আবার ???"
-"আজ মঙ্গলবার,ঘুড়ি ওড়াবার দিন।আজ বিশ্বকর্মা …

 


#গল্প


#চলো_আমরাও_উড়ি_আজ_আকাশে

#মিষ্টিমৌ

27/08/2021

-"অলক, আজ বেশ চনমনে লাগছে যে তোমাকে।কি ব্যাপার বলো তো।"


-"ছুটি ছুটি ছুটি।"


-"মানে কিসের ছুটি আজ আবার ???"


-"আজ মঙ্গলবার,ঘুড়ি ওড়াবার দিন।আজ বিশ্বকর্মা পূজা।"


-"তাই ছুটি নেবে অফিস থেকে?"


-"হ্যাঁ হ্যাঁ ছুটি নেব,বাবলু টাবলুকেও স্কুলে যেতে দেব না।ওদের নিয়ে ছাদে সারাদিন ঘুড়ি ওড়াবো।এসব দিন খুব দামি জানো তো বন্দনা।ওরাও বড় হলে এই দিনের কথা মনে করে একটু হাসবে।ওদের সময় তো আরও ব্যস্ততা থাকবে নিশ্চয়ই।তখন ঐ একটু হাসি ওদের স্ট্রেস কমাবে দেখো বন্দনা।"


-"তুমি একটা আশ্চর্য মানুষ বটে।সত্যিই গো।যাও ওদের নিয়ে লেগে পড়ো আর কি।তবে হ্যাঁ, শোনো ওদের দুগাল খাইয়ে দিই আগে।আ্যই কি রে তোরা স্নান সেরে নে রে।তারপর যা বাবার সঙ্গে হুজ্জুতি কর গে ছাদে।"


***********************************************


বন্দনা দেবী ও অলক বাবু বারান্দায় বসে পাশের বাড়ির ছোটকার  দুই ছেলেকে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য বায়না করতে দেখে নিজেদের ফেলে আসা দিনগুলোতে ফিরে গেছেন।আজ তাদের ছেলেরা সত্যিই ভীষণ ব্যস্ত।ওদের কাছে একটুও সময় নেই।শুধু কি ছেলেরা, তাদের বৌয়েরাও কি কম ব্যস্ত নাকি!!!দুই বৌ চাকরি করে।সকালে গিয়ে রাতে ফেরে।সময় ওদের হাতেও নেই।


নাতি নাতনিরাও পড়ার চাপে বই থেকে মাথা তুলতে পারে না।তারপর তো আছে আরও নাচ গান ক‍্যারাটে শেখার লেজুর।ওদের হাতে সময় ধরা দেয় না।খাঁচায় যেন বন্দি ওরা।বড় নামকরা স্কুলে পড়ে বড় বড় ব্যাপার স্যাপার।


আজ তো শনিবার !! অলক বাবুর মনে পড়তেই সে ছুটে যায় নাতনি কিয়ার কাছে।কিয়াকে বুঝিয়ে বলেন আজ যেন আঁকার ক্লাস ছুটি করে ওরা।নাতনি তো দাদুকে এমন কথা বলতে শুনে অবাক।কারণ বাড়ির বড়রা কি কখনও এমন বলে?----এই ছিল ওর ধারণা।তবে প্ল্যানটা মন্দ লাগেনি ওর।তাই তো ভাইকে নিয়ে দাদুর দলে যোগ দেয় ও।


অলক বাবুও কয়েকটা ঘুড়ি,মাঞ্জা সুতো,লাটাই কিনে আনে পাড়ার মোড়ের পঞ্চুর দোকান থেকে।ছোটকার বৌকেও অনুরোধ করে একটা দিন যেন ছেলেদুটোকে একটু ছাড়ে আজ ওনার দলে যোগ দেওয়ার জন্য।সব মিলে ওরা যে আজ ঘুড়ি ওড়াবে।ছোটকার বৌ অনেক বলার পর রাজি হল তবে মাত্র দুঘন্টার জন্য।


ক্ষুদেদের দল নিয়ে ছাদে উঠে মেতে ওঠেন ঘুড়ি ওড়াবার নেশায়।বন্দনা দেবীও ওদের জন্য নানা ফলের সরবত,টুকিটাকি খাবার সাজিয়ে দেয় ওদের জন্য।ঘন্টা দুই পর ছোটকার দুই ছেলে চলে গেল।ছোটকার বৌয়ের মুখটা ভার ওদের অঙ্ক মাস্টার কুড়ি মিনিট বসে ছিল।কথায় কথায় শুনিয়ে দিয়ে গেল সে ওর ছেলেদের জীবনের থেকে অমূল্য কুড়ি মিনিট নষ্ট হয়ে গেল।কুড়ি মিনিট যেন কুড়িটা বছর এমন করে বলে গেল।কিয়ার মাকেও ফোন করে জানিয়েছে এই সব তাও বলে গেল।


কিয়া ও টুবান দুজনেই বেশ ভয় পেয়ে গেল।দাদুকে ভয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো টুবান।ওর মা জানলে খুব বকবে যে।আঁকার ক্লাসে না গিয়ে ঘুড়ি উড়িয়েছে শুনলে একটা মারও মাটিতে পড়বে না তখন।দাদু ওদের কানে কানে বলে-"উফফফ!!তোরা না দুটোই বোকা।বলবি আঁকতে গিয়েছিলি।"


-"এম্মা,মিথ্যে বলতে হবে?"


-"মিথ্যে কেন?এই তো এখন নীচে গিয়ে দুজনে ঘুড়ির ছবি বা ঘুড়ি ওড়াবার ছবি আঁকবি?হ্যাঁ, ক্লাসে যাওয়া হয়নি ঠিকই আঁকা তো হয়েছে।সঙ্গে আসলে ঘুড়ি কেমন হয়,কি ভাবে ওড়াতে হয় সবটাও জেনে গেছিস।চল নীচে গিয়ে আগে হাত পা ভালো করে ধুয়ে আঁকতে বস।বন্দনা তুমি কড়া করে এক কাপ লিকার চা দাও তো।মাথাটা ঝাঁঝাঁ করা রোদে ছিল,একটা চাপ অনুভব করছি।চা খেলেই ছাড়বে।"


***********************************************


বন্দনা দেবী নাতি নাতনিদের আঁকতে বসিয়ে রান্নাঘরে যান।হঠাৎ করে এমন ছেলেমানুষি করা এর স্বভাব চিরকালের, কিন্তু ছেলেরা বা বৌয়েরা কি এসব?সময় কাল বদলেছে।সব কিছু কি আর এক আছে?পেনশন আছে বলে রক্ষে না হলে---এই মানুষটাকে ছেলেদের কাছে হাত পাততে হত।আর আজকাল ছেলেদের কথাবার্তা খুব একটা সুবিধার না।বাবা মাকে সরাসরি কিছু বলে না তবে বন্দনা বোঝে সবটাই।বাবা মা যেন বিশাল ভারি বোঝা।


লিকার চা দিয়ে অলক বাবুকে বলেন,-"এটা ভালো করোনি অলক।এভাবে ছুটি কেন করালে ওদের?ছেলেরা বৌয়েরা অসন্তুষ্ট হবে।"


-"হোক অসন্তুষ্ট, তাতে আমার কি?আর ছুটির কথা বলছো তো?ওদের বাপ মায়ের চাইতেও যখন ওরা ওদের সময়ে ব্যস্ততার গ্ৰাসে চলে যাবে, ঠিক তখনই এই দিনটার কথা মনে করে একটু হাসবে।আজকের এই সময় ওদের কাছে তখন ওদের কাছে অতীত হবে।অতীতের ফেলে আসা দিনের স্মৃতি চারণ করে আনন্দ পাবে।"


-"কি জানি বাবাহ, তোমার সব ফিলোজফি তোমার মতোই উদ্ভট ও খামখেয়ালিপনায় ভর্তি।"


-"ভয় পাচ্ছো বন্দনা?ছেলেরা বৌয়েরা বকবে কি না?কি বলতে কি বলবে---এসব ভাবছো তো?ড়াদ দাও ঐসব ।নিজের মত করে বাঁচো।আর কতদিন ঘানি টানবে সংসারের?আমি পেনশন যা পাই তাতে দুজনের ভালো মত হবে।ওদের কথার ধার ধারি নাকি?তবে হ্যাঁ,.......... ওদের ভরকি খাইয়ে দেব আজ।কথা বাড়ালেই বলবো  দুই বাচ্চাকে দেখাশোনা করার আয়া রাখিস না তো,আমরাই যত্নে রাখি। মনে কর কাল থেকে দেখাশোনা করবো না।তখন কি করবি?"


-"বেকার অশান্তি বাড়িও না তো।মুখটা সেলাই কি রাখো।"


-"এই যে ম্যাডাম, আজ কত তারিখ জানো কি?"


-"১৫ই সেপ্টেম্বর।কেন?কি আছে?"


-"আজ থেকে বহু বছর আগে আমি তোমাকে ঠিক আজকের দিনে পটিয়েছিলাম।তোমার দিদির বন্ধুরা দেখে ফেলেছিল মনে আছে।বকা খেয়েছিলে বাড়িতে।তাও আমার দেওয়া গোলাপ ও কলম আগলে রেখেছিলে ভালোবাসা দিয়ে।"


-"বাবাহ এত পুরানো কথা মনে আছে?তখন খুব কবিতা লিখতাম, আ‌্যই মনে আছে তোমার অলক?"


-"আলবাত আছে।তবে আগের কবিতা ছাড়ো ওসব এখনকার প্রেক্ষাপটে ঠিক মানাবে না এবার নতুন করে লেখাটা শুরু করো।বই প্রকাশ করো।সংসারের কাজ থেকে অবসর নাও এবার।এই নাও এই উপহার তোমার আগামীর জন্য।"


-"কবিতার খাতা, কলম,গোলাপ সবইতো আছে দেখছি।খুব ভালো লাগলো কিন্তু অলক তোমার এই সারপ্রাইজ গিফ্ট।বলছো আবার লিখতে?"


-"একদম ম্যাডাম।"


***********************************************


দাদু ঠাম্মির কথার মাঝেই কিয়া, টুবান ওদের আঁকা দেখাতে আসে দাদুদের।কিয়া সত্যিই খুব ভালো এঁকেছে।টুবানের প্রচেষ্টারও জবাব নেই।দারুণ হয়েছে আঁকা দুটো।ওদের আরও কিছু আঁকতে দিয়ে অলক বাবু ইশারা দিয়ে বন্দনা দেবীকে বলে-"চলো না কে কি বললো, বা বলবে এসব উপেক্ষা করে নিজেদের মত করে বাঁচি।চলো আমাদের পৈতৃক বাড়িতে যাই।হ্যাঁ একটু মেরামতি করতে হবে তবে আমরা আমাদের মত থাকবো সেখানে।অনেক তো হল,ছেলেদের মানুষ করা,নিজের পায়ে দাঁড় করানো,ওদের বিয়ে,সন্তান সব দেখা।এক জীবনে এত কিছু দেখতে পাওয়া ভাগ‍্যের আর তাই তুমি ভাগ্যবতী বন্দনা।চলো আমরা আমাদের মতোই বাঁচি।"


-"তুমি না একটা আশ্চর্য মানুষ বটে।"


-"ধুররর!!! থামো তো তুমি।এখন চলো আমরাও উড়ি আজ আকাশে,ঐ রঙিন ঘুড়িগোল মতোই।স্বপ্নের মেঘ ছুঁয়ে ফেলি আমরা।"


-"তুমি না সত্যিই একটা পাগল।বয়স বেড়েছে বোঝা যাচ্ছে।"


বন্দনা  দেবীর হাত ধরে নিয়ে যায় ছাদে অলক বাবু, আকাশের বুকে ঐ রঙিন ঘুড়িদের দেখানোর জন্য।এভাবেই জীবনের প্রতি মুহুর্তকে উপভোগ করতে থাকে দুই জন পরিণত বয়সের মানুষ।


**********♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️***********