Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

জাউ_পুষ্টিগুণে_ভরপুর

#জাউ_পুষ্টিগুণে_ভরপুর

শীতকাল এলেই গ্রামীন সমাজে সহজপাচ্য এই খাবারের কথা মনে পড়ে যায়... অনেকেই সারাবছর ধরে স্বাদবদল করতে এই খাবার খেতেন....           লক্ষীপ্রিয়া দেবী তাঁর দুই পুত্রের অকালমৃত্যুর কারনে, চতুর্থ পুত্রের মৃত্যুর আশ…

 


#জাউ_পুষ্টিগুণে_ভরপুর



নরসিংহ দাস
শীতকাল এলেই গ্রামীন সমাজে সহজপাচ্য এই খাবারের কথা মনে পড়ে যায়... অনেকেই সারাবছর ধরে স্বাদবদল করতে এই খাবার খেতেন....

           লক্ষীপ্রিয়া দেবী তাঁর দুই পুত্রের অকালমৃত্যুর কারনে, চতুর্থ পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায়, তৎকালীন সমাজের নিয়ম অনুযায়ী, তাঁর বড়দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে পরবর্তীকালে শিশুটির নাম ক্ষুদিরাম রাখা হয়। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর নামকরণের এই ইতিহাস আমাদের সকলের জানা। এর থেকে বোঝা যায়, তৎকালীন সমাজে গ্রামবাংলার চিরপরিচিত খাদ্য ছিল এই খুদ বা চালের কণা। গ্রাম বাংলার এই প্রচলিত খাবার আজ অবলুপ্তির পথে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি নকল আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালির প্রচলিত আহারগুলো। খুদ ফোটানো জাউ তার মধ্যে অন্যতম। বাংলার প্রধান ও প্রথম সারির খাবারের মূল উপকরণ হলো চাল। আর ঐ চাল থেকে তৈরি করা হয় নানান খাবার। এমন‌ই এক খাবার ছিল জাউ। ধান ভাঙার পর চালের কণা ফুটিয়ে তৈরি করা হতো জাউ। সাধারণত যেমন‌ চাল ফুটিয়ে ফ্যান গেলে ভাত হয়, ঠিক একই রকম ভাবে চালের কণা বা 'খুদ' ফুটিয়ে ফ্যান‌ না গেলে তৈরি করা হতো জাউ। আর ঐ গরম গরম জাউ নুন অথবা গুড় মাখিয়ে প্রাতঃরাশ বা মধ্যাহ্ন আহার সারা হত। বিশেষত মহামারি বা দুর্ভিক্ষের সময় ধনী গরীব নির্বিশেষে এই খাবার গ্রহণ করতেন সকলেই। এছাড়াও গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে এই আহার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। 


           সাধারণত কাঠের উনুনে মাটির হাঁড়িতে ফোটানো হতো খুদ। ফ্যান না গালার জন্য পুষ্টি গুণে ভরপুর ছিল এই জাউ। তবে এই জাউ তৈরি করা হতো নানান পদ্ধতিতে। কেউ কেউ দুধ দিয়েও জাউ তৈরি করতেন। আর্থিকভাবে সক্ষম গৃহস্থের বাড়িতে জাউ এর সঙ্গে চিনি, নারকেল কোরা বা তরকারির সঙ্গে পরিবেশন করা হতো। আর আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া গৃহস্থের বাড়িতে জাউ এর সঙ্গে শুধু নুন, চিনি বা গুড় মাখিয়ে, অথবা আলু সেদ্ধ মাখিয়ে পরিবেশন করা হতো। স্বাভাবিকভাবে বার্ধক্য কালে বা মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা কালীন সময়ে প্রধান খাবার ছিল এই জাউ। আবার এই সময়ে বা অন্য কোনো সময়ে কেউ কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে, সেইসময় প্রধান‌ খাবার হিসেবে বেছে নেওয়া হতো জাউ কে। কারন জাউ সহজে হজম হয় ও শরীরে পুষ্টি যোগায়। গরমকালে এখনও অনেকে পান্তাভাত খান সখে আহ্লাদে। কিন্তু জাউ, একদমই তৈরি করা হয় না। 

    

          আধুনিকতার যুগে প্যাকেটজাত খাদ্য বাজারে এসে যাওয়ায় জাউ এর মতো পুষ্টিকর খাবার আর তৈরি করা হয় না বললেই চলে। তাছাড়া চালকলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে বাড়িতে ধান সেদ্ধ করে চাল তৈরি করার প্রতি ঝোঁক‌ও কমেছে অনেকটাই। ফলে পাওয়া যায় না চালের কণা। পাওয়া যায় না খুদ। তাই তৈরি করা হয়না জাউ।