দেবাঞ্জন দাস; কলকাতা, ২৩শে মে : 51-বছরের মহিলা দেবযানী দে মার্চে কোলকাতায় Apollo ক্যান্সার সেন্টারে (ACC) মেডিকেল সহায়তা পাওয়ার জন্য যখন আসেন তখন তার ওজন ছিল 60 কেজি আর তিনি জানতেনই না যে তার জরায়ুতে 8 কেজি ওজনের একটি টিউমার আছে।…
দেবাঞ্জন দাস; কলকাতা, ২৩শে মে : 51-বছরের মহিলা দেবযানী দে মার্চে কোলকাতায় Apollo ক্যান্সার সেন্টারে (ACC) মেডিকেল সহায়তা পাওয়ার জন্য যখন আসেন তখন তার ওজন ছিল 60 কেজি আর তিনি জানতেনই না যে তার জরায়ুতে 8 কেজি ওজনের একটি টিউমার আছে। অনেকগুলি পরীক্ষা করার পরে ACC কোলকাতার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা নিদান দেন যে তার জরায়ুর মধ্যে একটি বিরল ও “অত্যন্ত উন্নত পর্যায়ের” একটি টিউমার আছে যা তার পেলভিক অঙ্গ-প্রতঙ্গকে আক্রমণ করেছে। তাকে তার সেরে ওঠার একমাত্র বিকল্প হিসেবে একটি সুপ্রা-মেজর (অত্যন্ত-গুরুতর) সার্জারির কথা বলা হয়, যাতে তার টিউমার, মূত্রাশয়, মলদ্বার, ও তার ডিস্টাল ইউরেটার (দূরবর্তী মূত্রনালী)-এর একটা অংশ কেটে বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। প্রকৃতপক্ষে, টিউমারটা মলদ্বার, সিগময়েড কোলন, মূত্রাশয়, ও ডিস্টাল ইউরেটারের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল।
পূর্ব ভারতে চিকিৎসায় এক গুরুত্বপূর্ণ যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে, Apollo ক্যান্সার সেন্টার (ACC) কোলকাতার বিশেষজ্ঞরা ইউটেরাইন লেইওমাইওসার্কোমা (LSM)-এর একটি বিরল ও জটিল কেসের চিকিৎসা করেন। আট ঘন্টা ধরে চলা এই ম্যারাথন সার্জারিতে, সার্জিকাল ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের একটি দল সফলভাবে 27x27x23 সেমি মাপের টিউমারের একটি ওপেন রাডিকাল এন ব্লক রিসেকশন (কেটে নেওয়া) করেন, এই সার্জারিতে জড়িত সব অঙ্গগুলিকে ফাটিয়ে না দিয়ে ন্যূনতম রক্তপাতের সাথে কেটে বাদ দেওয়া হয়। লেইওমাইওসার্কোমা প্রধানত 45 থেকে 53 বছরের মধ্যে থাকা পেরিমেনোপজাল মহিলাদেরকে প্রভাবিত করে, এবং এটি সব ধরনের জরায়ুর ক্যান্সারের 3 থেকে 7%-এর কারণ হয়। জরায়ুর ক্যান্সারগুলির মধ্যে, সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায় এন্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার। কিছু ক্ষেত্রে, এন্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সারের থাইরয়েড ক্যান্সারের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে, কিন্তু মিস দেবযানী দে-এর LMS রোগটি ধরা পড়েছিল, যা এন্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সারের থেকে একেবারে আলাদা এবং তা থাইরয়েড ম্যালিগন্যান্সির সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। তাকে সার্জারির পরবর্তী পরিচর্যা করে পাঁচ দিন পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ক্ষেত্রের থেকে ডাক্তারদের দলটির নেতৃত্ব দেন Apollo ক্যান্সার সেন্টার কলকাতার সার্জিকাল অঙ্কলজির কনসালটেন্ট, ডা. সুপ্রতিম ভট্টাচার্য এবং সার্জিকাল অঙ্কলজির কনসালটেন্ট, ডা. অমিত চোরারিয়া।
এই সফল বিরল সার্জারি সম্পর্কে বলতে গিয়ে Apollo ক্যান্সার সেন্টার কোলকাতার সার্জিকাল অঙ্কজির কনসালটেন্ট ডা. সুপ্রতিম ভট্টাচার্য বলেন, “এটা একটা জটিল আর চ্যালেঞ্জিং কেস ছিল, এতে ব্যাপক পরিমাণে সমন্বয় করা আর দলগতভাবে কাজ করার প্রয়োজন ছিল। আমি মিসেস দেবযানী দে-এর সেরে ওঠায় অত্যন্ত আনন্দিত আর রোগীকে তার বিভিন্ন বিকল্পের কথা ভালোভাবে জানিয়ে কিভাবে একটা বিস্তারিত কাউন্সিলিং আর ভাগ করে নেওয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ তাকে এই গুরুতর সার্জারির মধ্যে দিয়ে অনায়াসে পার করে দিয়েছে তা দেখে আমি সন্তুষ্ট। আমাদের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা আর ডাক্তারদের দক্ষ দলটি এই কাঙ্খিত পরিণাম অর্জন করাকে সম্ভব করে তুলেছে। এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং কেসগুলো আমাদের আরও ভালো করতে চালিত করে আর আমাদের রোগীদের জন্য সম্ভাব্য সবচেয়ে সেরা পরিচর্যা প্রদান করার দিকে আমাদের ঠেলে দেয়।”
Apollo ক্যান্সার সেন্টার কোলকাতার, সার্জিকাল অঙ্কলজির কনসালটেন্ট, ডা. অমিত চোরারিয়া, যোগ করেন, “রোগীর ইচ্ছা আর লড়াকু মনোভাব আর তার সাথে Apollo ক্যান্সার সেন্টার, কোলকাতার দলগতভাবে করা কাজই পার্থক্য গড়েছে। আমরা খুশি যে মিসেস দেবযানী আমাদের কাছে সঠিক সময়ে এসেছিলেন। সামান্য দেরী হলে টিউমারকে কেটে বাদ দেওয়া যেত না। সব ধরনের কঠিন কেস পরিচালনার জন্য একটা ভালো টিম দরকার, আর আমরা এখানে ACC-তে একটা দুর্দান্ত টিম পেয়ে ধন্য।”
প্রাপ্ত চিকিৎসা সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে, রোগী মিসেস দেবযানী দে বলেন, “আমি Apollo ক্যান্সার সেন্টারের টিমের অবিরাম যত্ন আর মনোযোগের জন্য আর আমাকে আমার স্বাস্থ্য আর জীবনের মান ফিরিয়ে দেওয়ায় সাহায্য করার জন্য তাদের কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ।”