অরুণ কুমার সাউ, তমলুক: “ব্যাকবেঞ্চ থাকবে না” এই স্লোগানকে সামনে রেখে ইউ-শেপড ক্লাসরুমের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সরকারি বেসরকারি স্কুলগুলোতে। কয়েকদিন থেকেই বিভিন্ন সমাজ মাধ্যমে তার চিত্র ধরা পড়ছে। স্কুল হোক বা ক…
অরুণ কুমার সাউ, তমলুক: “ব্যাকবেঞ্চ থাকবে না” এই স্লোগানকে সামনে রেখে ইউ-শেপড ক্লাসরুমের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সরকারি বেসরকারি স্কুলগুলোতে। কয়েকদিন থেকেই বিভিন্ন সমাজ মাধ্যমে তার চিত্র ধরা পড়ছে। স্কুল হোক বা কলেজ, পিছনের সিটে বসে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের চিরকালই তির্যক চোখে দেখেন সকলে। পিছনে যারা বসে, তারা পড়াশোনায় যে ভালো নয় এমন ধারণা ছোট থেকেই তৈরি হয়ে যায় মানুষের মনে। খুব স্বাভাবিকভাবেই ক্লাসে প্রথম সারিতে বসা ছাত্র-ছাত্রীদের সমীহ করে চলে সকলে।
কেরালা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার স্কুলের শ্রেণিকক্ষে 'ব্যাকবেঞ্চার' ধারণা দূর করতে এক নতুন বসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি মালায়ালাম ছবি ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’ ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কেরালার বেশ কিছু স্কুল ক্লাসরুমে এনেছে বিশেষ বদল।
ওই স্কুলের কোনও ক্লাসরুমেই পিছনের সারিতে বসতে হবে না ছাত্র-ছাত্রীদের। সাধারণত ক্লাসরুমে পর পর কয়েক সারিতে বেঞ্চ থাকে। তবে বর্তমানে সেই প্যাটার্ন বদলে বেঞ্চগুলিকে অর্ধবৃত্তাকারে সাজানো হয়েছে। কিংবা পরিসর আরেকটু কম থাকলে ‘U’ আকারে বেঞ্চ রাখা যাচ্ছে। এতে অনেকের ধারণা সব পড়ুয়ার দিকেই সমান ধ্যান দিতে পারবে শিক্ষক-শিক্ষিকারা।সবাই সমান মনোযোগ পায়। আবার সব পড়ুয়ারাও সমানভাবে শিক্ষকের সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারছেন।খেলার ছলে শিক্ষা দেওয়া যায়। অমনোযোগী ছাত্রছাত্রীদের পাঠের মধ্যে রাখা যায়। ফলে এতে যে শিক্ষার্থীদের মনন গঠনে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তেমনটা আশা করাই যায়।শিক্ষক শিক্ষিকাগণ সকল ছাত্রছাত্রীদের কাছে গিয়ে তার সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারেন বা সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
ব্যাকবেঞ্চার থাকবে না, স্কুলে স্কুলে ইউ-শেপড ক্লাসরুম রূপ নিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেশকিছু স্কুলে । চণ্ডীপুর ব্লকের শ্যামসুন্দরপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণাংশু প্রধান বলেন, “ফেসবুকে এই বিষয়টা নিয়ে ক দিন থেকেই চর্চা চলছিল। তাই বিষয়টা নিয়ে সহকর্মীগণের সাথে আলোচনা করে শুক্রবার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ক্লাসে চালু করলাম। নতুন ব্যবস্থাপনায় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একটা উন্মাদনা কারণ কোনোদিনই এমন করে ক্লাসে বসেনি। তাই সবাই খুশি। আরও ক দিন চলুক, ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক মহাশয়গণ যাঁরা ক্লাস নিচ্ছেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কি হয়, সেটা দেখার। তবে, বেশি ছাত্র-ছাত্রীর ক্ষেত্রে এটা অসুবিধাজনক, বড় ক্লাস রুম হলেও বোর্ড দেখতে অসুবিধা হবে। কম সংখ্যার ছাত্র-ছাত্রী থাকলে বেশ ভালোই।" তমলুকের বহিচাড় দক্ষিণপল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয়তে বৃহস্পতিবার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে একটি শ্রেণিকক্ষে “ইউ-শেপড" আকৃতির করে ছাত্র- ছাত্রীদের বসানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌতম নন্দ বলেন-"এই ধরণের শ্রেণী সজ্জায় গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হল -
এক , শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামনের বেঞ্চ বা পেছনের বেঞ্চ এর ছাত্র- ছাত্রী হিসাবে তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরী হয়না। দুই, সমস্ত শিক্ষার্থীকে শিক্ষক মহাশয়ের নজরের মধ্যে রাখা যায়।"
তবে একশ্রেণীর শিক্ষকের অভিমত- ব্যাকবেঞ্চার মানেই অমনোযোগী- এই ধারণাটি আসলে শিক্ষকের মনস্তাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা। যদি শিক্ষক ক্লাস রুমে এক্টিভ থাকেন, যদি ক্লাসরুম সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে পিছনের সারিও শিক্ষার সমান অংশীদার হতে পারে। পটাশপুর থানার শ্রীরামপুর এইচ.পি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষক অতনু দাস মহাপাত্র বলেন, ৭০/৮০ জন ছাত্র নিয়ে ইউ-শেপড আকৃতি করার মতো শ্রেণিকক্ষ সব সরকারি স্কুলে নেই, সেক্ষেত্রে সব সরকারি স্কুলে এটা সম্ভব নয়।বেসরকরকারি স্কুলে হয়তো সম্ভব ৷"