---*অনুগল্প*----পরিনতি
কবি
********
অতনুর সকাল থেকেই মনটা বিষন্ন। সকালে অফিসের তাড়া, ঠিক মতো খরবের কাগজটাও পড়া হয় না। কোন রকমে চোখ বুলিয়ে নেয়। স্নান করে চা খেয়ে বেরোতে বেরোতেই অফিসের গাড়ি চলে আসে। সঙ্গে পেপারটা নিয়ে নেয়। তবে সব…
---*অনুগল্প*----পরিনতি
কবি
********
অতনুর সকাল থেকেই মনটা বিষন্ন। সকালে অফিসের তাড়া, ঠিক মতো খরবের কাগজটাও পড়া হয় না। কোন রকমে চোখ বুলিয়ে নেয়। স্নান করে চা খেয়ে বেরোতে বেরোতেই অফিসের গাড়ি চলে আসে। সঙ্গে পেপারটা নিয়ে নেয়। তবে সব দিন নেয় না। যেদিন সঙ্গীতা বাড়ি থাকে রেখে যায়।
সঙ্গীতা অতনুর স্ত্রী। পেশায় সাংবাদিক। সঙ্গীতাই বলল মনুর খবরটা।অতনুর অফিসের ঠিক থাকে না। প্রাইভেট সেক্টর, প্রচুর চাপ। তাই সব খবর দেখা হয় না।
তিন্নি, পাঁচ বছরের ফুটফুটে মেয়ে ওদের। রমলাদি ওর দেখা শোনা করে। দুজনের কেউই সময় দিতে পারে না মেয়েটাকে। অতনুর মা কিংবা সঙ্গীতার মা পালা করে এসে থাকে। মাঝে মাঝে অতনু ভাবে বলবে সঙ্গীতাকে চাকরিটা ছেড়ে দিতে। কিন্তু বলতে পারে না অশান্তির ভয়ে। প্রথম থেকেই সঙ্গীতা বলে দিয়েছে কোন অবস্থায় চাকরি ছাড়বে না। এই নিয়ে প্রথম ইস্যু আসার সময় থেকেই ছোট খাটো অশান্তি লেগেই ছিল। তাই এখন যতটা সম্ভব মেনে নেয়। কিন্তু তিন্নি যত বড় হচ্ছে দুশ্চিন্তা মাথায় দানা বাঁধছে। সঙ্গীতা অবশ্য মানতে চায় না । বলে সময়ের সঙ্গে সব কিছু মানতে হবে।
কাল থেকেই অতনুর মন শরীর খুব খারাপ। মানতে পারছে না। কি করে সম্ভব... ভাবতে ভাবতে আনমনে দাঁড়ি কাটতে কাটতে বসে গেল ব্লেডটা।
উফ্ ...করে উঠল অতনু..
রান্না ঘরে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিল সঙ্গীতা...
--কি হল ,? আজও কেটে গেল..! কেন যে দাঁড়ি কাটতে কাটতে অন্য মনস্ক হও ?
কিন্তু অতনু তো চাইলেও পারবে না মন থেকে দুরে সরে যেতে..
কাল খবরের কাগজে দেখল ওদের খবরটা বেরিয়েছে।
ওদের উল্টো ফ্ল্যাটের সেই পুচকে মেয়েটা, লাল ফ্রক পড়ে ছুটে ছুটে আসছে... আজ সে নেই !! তিন্নির মতোই ছিল, খুব মিষ্টি, কবে যে বড় হয়ে গেল, এই নতুন ফ্ল্যাটে দশ বছর হয়ে গেল ওদের।
দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতো অ্যাঙ্কেল কেমন আছো ?? ছোট্ট বেলার মতো চকলেট চাইতো...কি করে কি হয়ে গেল ?
কয় দিন ধরেই মনুদের বাড়িতে একটা অশান্তি চলছে, কি নিয়ে কেন বোঝা যাচ্ছিল না । তবে কানাঘুষো শুনছিল মনু নাকি কোন অন্য কাস্টের ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে।অনেকেই দেখেছে ওদের একসাথে।বাড়িতে জানাজানি হওয়ায় খুব অশান্তি হচ্ছে। মন্দিরা মানে আমাদের আদরের মনু এই উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কলেজে ঢুকেছে। ছেলেটা দু'বছরের সিনিয়র।সেও এই কোন এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে। দুটো তাজা ছটফটে প্রাণ অকালে চলে গেল...
*****
---হ্যালো..মিলন
--হ্যাঁ বলো...
--আজ বিকেলে গঙ্গার ঘাটে, বিকেল পাঁচটায়..
---ওকে..
পড়তে যাবে বলে বেড়িয়েছে মনু, কিন্তু বাড়িতে একা ছাড়বে না, পৌঁছে দিয়ে গিয়েছে মা। মা চলে যেতে শরীর খারাপের অজুহাতে বেড়িয়ে এসেছে স্যারকে বলে..
মনিরুল বিশ্বাস ওরফে মিলন ,ওরা মুসলিম। মন্দিরা ব্যানার্জি, এদেশীয় ব্রাম্ভন। তাই দুই বাড়ি থেকে সম্পর্কটা মেনে নেয়নি। কিন্তু কেউ ভাবেনি এর পরিনতি এতটা চরম হবে।
*******
শান্ত তিরতির করে বহে যাচ্ছে গঙ্গা। গোধুলির পূর্ণিমার চাঁদ তার উপর রূপোলি চাদর বিছিয়ে দিয়েছে..দুই সদ্য যৌবনে পা দেওয়া যুবক যুবতী না বলা যত কথা বলে নিচ্ছে একমাত্র সাক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে। গভীর চুম্বনে ভরে নিচ্ছে জীবনের স্বাদ। দুজনেই শেষ আলিঙ্গনে আবদ্ধ। আস্তে আস্তে ওরা স্টিমার ঘাটের দিকে এগিয়ে গেল। দুজনে হাতে হাত ধরে স্টিমারে বসে রইল।যেন জীবনের সব কিছু বিসর্জনের প্রস্তুতি। স্টিমার যখন মাঝ নদীতে, সমস্ত নিস্তব্ধতা ভেঙে দুটো প্রাণ হারিয়ে গেল মাঝ গঙ্গায়...
চিৎকার করে উঠল অতনু...
তিন্নি গলা জড়িয়ে আবদার করছে... আমার চক এনোছো পাপা...??
****************
কবি
********
অতনুর সকাল থেকেই মনটা বিষন্ন। সকালে অফিসের তাড়া, ঠিক মতো খরবের কাগজটাও পড়া হয় না। কোন রকমে চোখ বুলিয়ে নেয়। স্নান করে চা খেয়ে বেরোতে বেরোতেই অফিসের গাড়ি চলে আসে। সঙ্গে পেপারটা নিয়ে নেয়। তবে সব দিন নেয় না। যেদিন সঙ্গীতা বাড়ি থাকে রেখে যায়।
সঙ্গীতা অতনুর স্ত্রী। পেশায় সাংবাদিক। সঙ্গীতাই বলল মনুর খবরটা।অতনুর অফিসের ঠিক থাকে না। প্রাইভেট সেক্টর, প্রচুর চাপ। তাই সব খবর দেখা হয় না।
তিন্নি, পাঁচ বছরের ফুটফুটে মেয়ে ওদের। রমলাদি ওর দেখা শোনা করে। দুজনের কেউই সময় দিতে পারে না মেয়েটাকে। অতনুর মা কিংবা সঙ্গীতার মা পালা করে এসে থাকে। মাঝে মাঝে অতনু ভাবে বলবে সঙ্গীতাকে চাকরিটা ছেড়ে দিতে। কিন্তু বলতে পারে না অশান্তির ভয়ে। প্রথম থেকেই সঙ্গীতা বলে দিয়েছে কোন অবস্থায় চাকরি ছাড়বে না। এই নিয়ে প্রথম ইস্যু আসার সময় থেকেই ছোট খাটো অশান্তি লেগেই ছিল। তাই এখন যতটা সম্ভব মেনে নেয়। কিন্তু তিন্নি যত বড় হচ্ছে দুশ্চিন্তা মাথায় দানা বাঁধছে। সঙ্গীতা অবশ্য মানতে চায় না । বলে সময়ের সঙ্গে সব কিছু মানতে হবে।
কাল থেকেই অতনুর মন শরীর খুব খারাপ। মানতে পারছে না। কি করে সম্ভব... ভাবতে ভাবতে আনমনে দাঁড়ি কাটতে কাটতে বসে গেল ব্লেডটা।
উফ্ ...করে উঠল অতনু..
রান্না ঘরে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিল সঙ্গীতা...
--কি হল ,? আজও কেটে গেল..! কেন যে দাঁড়ি কাটতে কাটতে অন্য মনস্ক হও ?
কিন্তু অতনু তো চাইলেও পারবে না মন থেকে দুরে সরে যেতে..
কাল খবরের কাগজে দেখল ওদের খবরটা বেরিয়েছে।
ওদের উল্টো ফ্ল্যাটের সেই পুচকে মেয়েটা, লাল ফ্রক পড়ে ছুটে ছুটে আসছে... আজ সে নেই !! তিন্নির মতোই ছিল, খুব মিষ্টি, কবে যে বড় হয়ে গেল, এই নতুন ফ্ল্যাটে দশ বছর হয়ে গেল ওদের।
দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতো অ্যাঙ্কেল কেমন আছো ?? ছোট্ট বেলার মতো চকলেট চাইতো...কি করে কি হয়ে গেল ?
কয় দিন ধরেই মনুদের বাড়িতে একটা অশান্তি চলছে, কি নিয়ে কেন বোঝা যাচ্ছিল না । তবে কানাঘুষো শুনছিল মনু নাকি কোন অন্য কাস্টের ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে।অনেকেই দেখেছে ওদের একসাথে।বাড়িতে জানাজানি হওয়ায় খুব অশান্তি হচ্ছে। মন্দিরা মানে আমাদের আদরের মনু এই উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কলেজে ঢুকেছে। ছেলেটা দু'বছরের সিনিয়র।সেও এই কোন এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে। দুটো তাজা ছটফটে প্রাণ অকালে চলে গেল...
*****
---হ্যালো..মিলন
--হ্যাঁ বলো...
--আজ বিকেলে গঙ্গার ঘাটে, বিকেল পাঁচটায়..
---ওকে..
পড়তে যাবে বলে বেড়িয়েছে মনু, কিন্তু বাড়িতে একা ছাড়বে না, পৌঁছে দিয়ে গিয়েছে মা। মা চলে যেতে শরীর খারাপের অজুহাতে বেড়িয়ে এসেছে স্যারকে বলে..
মনিরুল বিশ্বাস ওরফে মিলন ,ওরা মুসলিম। মন্দিরা ব্যানার্জি, এদেশীয় ব্রাম্ভন। তাই দুই বাড়ি থেকে সম্পর্কটা মেনে নেয়নি। কিন্তু কেউ ভাবেনি এর পরিনতি এতটা চরম হবে।
*******
শান্ত তিরতির করে বহে যাচ্ছে গঙ্গা। গোধুলির পূর্ণিমার চাঁদ তার উপর রূপোলি চাদর বিছিয়ে দিয়েছে..দুই সদ্য যৌবনে পা দেওয়া যুবক যুবতী না বলা যত কথা বলে নিচ্ছে একমাত্র সাক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে। গভীর চুম্বনে ভরে নিচ্ছে জীবনের স্বাদ। দুজনেই শেষ আলিঙ্গনে আবদ্ধ। আস্তে আস্তে ওরা স্টিমার ঘাটের দিকে এগিয়ে গেল। দুজনে হাতে হাত ধরে স্টিমারে বসে রইল।যেন জীবনের সব কিছু বিসর্জনের প্রস্তুতি। স্টিমার যখন মাঝ নদীতে, সমস্ত নিস্তব্ধতা ভেঙে দুটো প্রাণ হারিয়ে গেল মাঝ গঙ্গায়...
চিৎকার করে উঠল অতনু...
তিন্নি গলা জড়িয়ে আবদার করছে... আমার চক এনোছো পাপা...??
****************