Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

অনুলিপি

অনুলিপি
কবি মিশ্র
*********
প্রিয়,
"তুই"---কেমন আছিস্ ? ভালোই আছিস নিশ্চই। কি লিখব ভাবছি ! অনেক কথাই আজ মনে আসছে ।কিছু দিন ধরেই ভাবছি তোকে একটা চিঠি লিখবো,আজ লিখতেই বসলাম।
আমাকে চিনতে পারবি তো ??

আসলে তোর ফোন নং আমার ক…


অনুলিপি
কবি মিশ্র
*********
প্রিয়,
"তুই"---কেমন আছিস্ ? ভালোই আছিস নিশ্চই। কি লিখব ভাবছি ! অনেক কথাই আজ মনে আসছে ।কিছু দিন ধরেই ভাবছি তোকে একটা চিঠি লিখবো,আজ লিখতেই বসলাম।
আমাকে চিনতে পারবি তো ??

আসলে তোর ফোন নং আমার কাছে নেই। তাই অগত্যা চিঠির শরণাপন্ন। তোর কি আমার কথা মনে আছে ? একেবারেই ভুলে গেছিস্ ? তুই মানেই সেই পুরোনো দিনের কলেজ স্মৃতি..!!

জানিস্ সে দিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি তো তোর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম, সুমনাকে সঙ্গে নিয়ে ছিলি কেন ? আমার উপর কি কোন্ ভরসা ছিল না ? আমার কষ্ট হবে জানতিস্। তবুও এনেছিলি। ওই দিনের পর আর কোন যোগাযোগ হয়নি তোর সাথে। তুই ও হয়তো চাসনি। আমি তো অভিমানী, সেটা ভালোই জানতিস্। তবুও একবার ও ফোন বা চিঠি দিসনি। সেটাই ভালো হয়ছিল। তুই নিশ্চই সুমনাকে নিয়ে ভালোই আছিস্।

সেই দিন গুলো খুব মিস করি...
খুব মনে পড়ে জানিস্..যখন আমরা ফাষ্ট ইয়ারে । কলেজ ট‍্যুরে শিলং বেড়াতে গেলাম, উফ্- সে কি আনন্দ।উচ্ছাস। আমার খুব ভালো লেগেছিল, তোর পাশের সিটটা আমার ছিল।কত গল্প করেছিলাম।যেন শেষ ই হতে চায় না।সবাই কেমন অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল।যে মেয়ে কলেজে কথাই বলে না,তার মুখে এত কথা !! বাবলি তো বলেই ফেলল, -- কি রে, তোতা পাখির মুখে কথা ফুটেছে। খুব লজ্জা পেয়ে ছিলাম। তুই তো নির্লিপ্ত ছিলি !

শিলং পিকে যখন গেলাম, যেন স্বর্গ এ পৌঁছে গিয়েছি। আনন্দে তো গান ই গেয়ে ফেলেছিলাম।আর তুই কখন যে অত ছবি তুললি- বুঝতেই পারিনি। দুজনের গলায় তখন একটা ই সুর, "আমার মুক্তি নীল আকাশে..."

তোর মনে আছে? মৌসুমরামের কথা--গাড়ি হুহু করে এগিয়ে যাচ্ছে, কিছু টা দূরেই সব ঝাপসা..বৃষ্টি শুরু হয়েছে,..রোদ বৃষ্টির কি অপূর্ব খেলা.. উফ্, উত্তেজনায় তোর হাত খামচে ধরে ছিলাম।তখন তুই কিছুই বলিস নি। পরে দেখিয়েছিলি, কেমন কালসিটে হয়ে গেছিল।

তোর কি এখনো সেই সব দিনের কথা মনে পড়ে ? সেই দিন গুলো কেমন তাড়াতাড়ি চলে গেল.. কিন্তু এতটুকু ও ভুলতে পারিনি। তুই কি পেরেছিস ? আজ কত দিন পর চিঠি লিখছি । তখন তো মুঠোফোন ছিল না.. চিঠিই লিখতাম..তুই কি  সেগুলো রেখেছিস ? আমি কিন্তু রেখেছি..খুব যত্ন করে..ওগুলো যে আমার পরম পাওয়া...
তোর মনে পড়ে সেকেন্ড ইয়ারের কথা- সেবার বিশাখাপত্তম যাওয়া হবে কলেজ থেকে।আমাকে বাড়ি থেকে তো কিছুতেই ছাড়বে না কি একটা কাজ পড়েছিল,তুই গিয়ে মা কে বুঝিয়ে পার্মিশেন নিয়ে ছিলি।বাবলি তখন থেকেই পেছনে লাগতে শুরু করে ছিল, ভেবেছিল তুই হয়তো আমার প্রতি দুর্বল। কিন্তু ও তো জানত না,শুধু গানের জন্যই তুই আমাকে পছন্দ করিস।কলেজ ফাংসানে দুজনে যখন একসঙ্গে গান করতাম-সবাই সন্দেহ করত।কেউ তো জানত না তুই সুমনাকেই ভালোবাসিস। আমি ও তো জানতাম না। সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট ছিল ওদের। তাই কলেজে দেখা হলেও সেভাবে যোগাযোগ ছিল না আমাদের সঙ্গে।খুব ভালো ছাত্রী ছিল।তোর ও রেজাল্ট খুব ভালো ছিল। ক্লাস টপার আমাদের জিওগ্রাফি ডিপার্টমেন্টে।এখন নিশ্চয়ই পিএইচডি করে কোন বড় কলেজের প্রফেসারি করছিস? ওটাই তোর অ্যাম্বিশন ছিল।সব সময় বলতিস প্রফেসর হবি।আমার আর কিছুই হলো না।শুধু শুধু দিন গুলো চলে গেল।আমাদের মতো গরীব ঘরের মেয়েদের আর কিই বা হবে সংসার ছাড়া !!

সত্যিই আজ খুব নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি।সব পুরোনো স্মৃতি যেন মনের উপর ভীড় করছে। বিশাখাপত্তমের কথা তোর মনে পড়ে? ৪২ টা গুহা পার হয়ে যখন আরকুভ‍্যালির দিকে যাচ্ছে অন্ধকার গুহার মধ্য দিয়ে- সবাই চিৎকার করছে আনন্দে। আমি ভয়ে তোকে জড়িয়ে আছি, মনে হয়েছে কখন শেষ হবে এই পথ। তুই এত প্রশয় দিতিস কেন ?
তবে ওখান থেকে নামার পর সময় খুব ভালো লাগছিল।এক একটা পাহাড় টপকে নামছি, আমাদের টাটা সুমোটা হঠাৎ থেমে গেল, কি একটা গন্ডগোল হয়েছে। সবাই নেমে হইচই,এধার ওধার এগিয়ে যাচ্ছে।আমি ও অনেক টা ধারের দিকে চলে গিয়েছিলাম। নীচে গাড়ি গুলো যেন ছোট ছোট পিপীলিকার মতো লাগছিল।হুঁশই ছিল না কখন পাহাড়ের ধারে চলে গিয়েছি ! তুই এমনভাবে টেনে নিলি- সোজা তোর বুকে গিয়ে পড়লাম। আমাকে জাপটে জড়িয়ে ছিলি।তোর নিশ্বাস তখন আমার ঘাড়ে এসে পড়ছে, তোর বুকের গরম তাপ তখন আমার সারা শরীর জুড়ে।কিন্তু আমি মুখে কিছুই বলতে পারিনি। সেই অনুভূতি কি করে ভুলবো বল।তোর হয়তো মনে নেই।না মনে থাকলেই ভালো। কষ্ট পেতিস আমার মতো।

জানিস তোকে খুব দেখার ইচ্ছে ছিল।কিন্তু আর হবে না মনে হয়।ফোন নংটা থাকলে তবুও একবার কথা বলতাম।কারো সঙ্গেই যে আর যোগাযোগ নেই তোর নংটা পাব। যাক গে, তবে তুই যখন চিঠিটা পাবি -তখন হয়তো আমি পৃথিবী থেকে অনেক দূরের আকাশের তারা হয়ে যাবো। আমার এখন ক‍্যানসারের লাষ্ট স্টেজ। ডাক্তার বাবু আমাকে কিছু বললেন নি,কিন্তু বুঝতে পেরেছি, আর কিছু দিন হয়তো এই পৃথিবীতে আছি। তাই হয়তো তোর কথা খুব মনে পড়ছে।

যা মনে এসেছে, লিখে ফেললাম। কিছু মনে করিস না। সুমনাকে বুঝিয়ে বলবি, ও ঠিক বুঝবে। আর একটা কথা, আমার আলমারি চতুর্থ তাকের বাঁদিকে রবীন্দ্ররচনাবলীর ১৬টা খন্ড আছে। প্রতিটা খন্ডে তোকেই লেখা কবিতা আছে। ইচ্ছে ছিল বই রেব করবো। তা আর হলো না। পারলে তুই করিস।
     ইতি
       তোর
           "অসমাপ্তি"