নরসিংহ দাস
রবীন্দ্রনগর, মেদিনীপুর শহর
প্রাইভেট টিউশনের জন্য শুধু শিক্ষক দায়ী নন
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে কি টিউশন নির্ভর? উত্তর অবশ্যই হ্যাঁ। শিক্ষকরা আবার সমাজ গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার পুরোটাই শিক্ষকদ…
নরসিংহ দাস
রবীন্দ্রনগর, মেদিনীপুর শহর
প্রাইভেট টিউশনের জন্য শুধু শিক্ষক দায়ী নন
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে কি টিউশন নির্ভর? উত্তর অবশ্যই হ্যাঁ। শিক্ষকরা আবার সমাজ গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার পুরোটাই শিক্ষকদের কাঁধে। প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থায় টোল, চতুষ্পাঠীর মাধ্যমে গুরুর বাড়িতে বা কোন স্থানে শিষ্যরা হাজির হতো শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে। পরে পরে তার পট পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন স্তরে পাঠ্যসূচি ভাগ করে শিক্ষা দান করা হয়। আগে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক শিক্ষাও প্রদান করা হতো। তার সঙ্গে যুদ্ধ বিদ্যারও বিভিন্ন কৌশল প্রদান করা হতো। কিন্তু বর্তমানে পাঠদানের পাশাপাশি শুধুমাত্র কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাও আবার শুধুমাত্র মাধ্যমিক স্তরে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জ্ঞান দান করা সম্ভব নয় বা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের অসম্পূর্ণতা থাকছে, এই ভেবে অভিভাবকবৃন্দ তাঁদের সন্তান-সন্ততীদের বার্ষিক বা মাসিক চুক্তি ভিত্তিক সবেতন প্রাইভেট টিউশনের জন্য গৃহশিক্ষক নিয়োগ করে থাকেন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান সন্ততিদের নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণকেই বেছে নেন। আবার অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা নিজ বাড়িতেই টোল খুলে বসে আছেন।
সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষকদের টিউশন করা যাবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষকরা নিজ আর্থিক রোজগার বাড়ানোর লক্ষ্যে কি ছাত্র ছাত্রীদের ডাকছেন, না কি অভিভাবকবৃন্দ তাঁদের সন্তান-সন্ততীদের বাড়তি শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে ঐ শিক্ষকদের কাছে পাঠাচ্ছেন? এই সত্যের উদ্ঘাটন প্রয়োজন।
রাজ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। বছর বছর ধরে এই সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। একদিকে রাজ্যে নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে গ্র্যাজুয়েট ও পোষ্ট গ্রাজুয়েটদের সংখ্যা বাড়ছে। সেই অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। ফলস্বরূপ, সদ্য পাস করা বা দীর্ঘদিন পাস করা ঐ শিক্ষিত বেকারদের একমাত্র অবলম্বন প্রাইভেট টিউশন। সেক্ষেত্রে যদি চাকুরীরত শিক্ষকরা টিউশন পড়ান, তাহলে রোজগারের প্রাথমিক অবলম্বন টুকুও হারাতে হয় ঐ শিক্ষিত বেকারদের। যে কারণেই শিক্ষিত বেকারদের দাবি - সরকারি চাকুরীরত শিক্ষকদের টিউশন অবিলম্বে আইন মাফিক বন্ধ করতে হবে। এই দাবি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। সরকার পক্ষ থেকেও শিক্ষকদের কাছ থেকে মুচলেকা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে তাঁরা প্রাইভেট টিউশন থেকে বিরত থাকেন। তবুও টিউশন পড়িয়ে চলেছেন কতিপয় শিক্ষক।
আবার অন্যদিকে অভিভাবকবৃন্দের একটা ট্রেন্ড রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানে তাঁর সন্তান সন্ততি পঠন পাঠন করে, সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের কাছে টিউশন পড়ানোর। অনেক সময় এই ধারণার স্বীকার হন যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত মানেই উনি অভিজ্ঞ। এটাও মানেন যে, যে শিক্ষকদের টিউশনের বেতন বেশি, তিনি বেশি অভিজ্ঞ। ঐ ডাক্তারের ফি যেমন হয়। আর এই বাড়তি উপার্জন শিক্ষকরা কি হাতছাড়া করবেন? মোটেই না। যে কারণেই শিক্ষকদের টিউশন পড়ানোর ঝোঁকটা বেড়েই যায়। সব শিক্ষক যে পড়ান এমন নয়।
একটাই সমাধানের পথ রয়েছে, যদি অভিভাবকবৃন্দ চাকুরীরত শিক্ষকদের কাছে উনার সন্তান-সন্ততীদের টিউশনের জন্য না পাঠান, তাহলেই শিক্ষকদের টিউশন পড়ানোর থেকে রদ করা যাবে। আইন যেমন প্রয়োজন তেমনি অভিভাবকবৃন্দের সচেতনতাও প্রয়োজন। যদি সদ্য ডিগ্রিধারী শিক্ষিত বেকার যুবকদের গৃহশিক্ষক হিসেবে বা উনাদের টোলে আপন সন্তান সন্ততিদের টিউশনের জন্য পাঠান, তাহলে একদিকে যেমন শিক্ষিত বেকারদের আংশিক রোজগার বাড়বে, অন্যদিকে চাকুরীরত শিক্ষকদের টিউশন পড়ানোর থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে আলাদা কোনও আইনের প্রয়োজন হবে না আর ।