#নির্ভুল_হিসাব
#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য
সেই যে পুলিশ এসে ওদেরকে নিয়ে গেল,
কই! আর তো ফিরলো না কেউ।
আজ একমাস হয়ে গেল।
আমি একা বুড়ি মানুষ --
ভালো করে চোখে দেখি না, কানে শুনি না,
চিন্তা ছাড়া আর কিইবা করতে পারি!
খোকা, বৌমা আর নিতুর…
#নির্ভুল_হিসাব
#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য
সেই যে পুলিশ এসে ওদেরকে নিয়ে গেল,
কই! আর তো ফিরলো না কেউ।
আজ একমাস হয়ে গেল।
আমি একা বুড়ি মানুষ --
ভালো করে চোখে দেখি না, কানে শুনি না,
চিন্তা ছাড়া আর কিইবা করতে পারি!
খোকা, বৌমা আর নিতুর জন্য
দুশ্চিন্তায় ঘুম হয় না আমার।
কাজের মেয়ে, জ্যোৎস্না, বলছিলো --
চিন্তার কিচু নেই গো মাসি মা,
ওরা টি-ক ঘরে ফিরে আসবে, দেকে নিও।
পাড়ার ওনেককেই তো তুলে নিয়ে গ্যাচে,
তারা কেউই ঘরে ফেরেনিকো একোনো।
ওর কথাই সত্যি হোক।
ঈশ্বর যেন তাই করেন --
ঘরের মানুষকে সুস্থ করে ঘরে ফিরিয়ে দেন।
করোনা না করুণা -- কি একটা রোগ এসেছে!
ঐটা হলেই নাকি পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
কালে কালে আর কতো কি দেখবো!
কি দিন এলো বাবা! আগে তো জানতাম
কোনো অপরাধ করলেই পুলিশে ধরে নিয়ে যায়,
এখন দেখছি রোগ হলেও......
এখন কি যেন একটা নতুন কথা উঠেছে
-- 'হোম কোয়ারেন্টাইন'।
এটা কি আর নতুন কিছু?
আমি তো সেই কতকাল আগে থেকেই....
একটা রুমে একলা পড়ে থাকি।
আমার কাছে ঘেঁষাতো দূর অস্ত,
ঘরের কেউ আমার সঙ্গে একটা কথাও বলে না।
এমনকি খাবারটাও ঠিক করে দেয় না কেউ --
অচ্ছুতের মতো খাবার থালাটা
মেঝেতে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় ওরা।
ছেলে ডিউটি আর নিজের পরিবার নিয়ে শশব্যস্ত,
বৌমা ঘরের কাজ, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ,
আর আমার একমাত্র নাতনি নিতু,
সে পড়াশোনা, মোবাইল আর বন্ধু বান্ধবেই ব্যস্ত।
আমার মতো একটা জড় ভরতের জন্য
আর কারো সময় কোথায়?
বরং আজ আমি ওদের কাছে একটা গলগ্রহই।
সে আমার বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়াতো
একপ্রকার ঠিকঠাক,
সমস্ত জিনিসপত্রও গোছগাছ হয়ে গিয়েছিল,
শুধু গাড়ি আসার অপেক্ষা।
বিধাতা হয়তো কপালে অন্যকিছুই লিখেছিলেন।
বাদ সাধলো এই উদ্ভট রোগটা --
হঠাৎ করে লক ডাউন হয়ে গেল,
গোটা দেশ নাকি প্রধানমন্ত্রীর এক ইশারায় স্তব্ধ।
সেদিন আমার আর যাওয়া হলো না,
ঘরের সবার মন খারাপ।
শুনলাম লকডাউন নাকি ধীরে ধীরে উঠবে।
কিছুদিন পর শুরু হলো আনলক ওয়ান --
ঘরের সবাই আমাকে পাঠানোর জন্য
একেবারে শশব্যস্ত হয়ে উঠলো।
আমি খোকার কাছে অনেক কাঁদলাম --
এইসব রোগের মধ্যে আমাকে ঘর থেকে বাইরে
বার করে দিস না খোকা!
কে শোনে কার কথা --
ওখানে নাকি আমার অনেক যত্ন হবে,
অনেক বন্ধু পাবো আমি,
মন ভালো থাকবে।
তাই আবার গাড়ি ঠিক করা হলো।
আমি বাবার ঘর থেকে শ্বশুর ঘর আসার সময় যেমন অঝরে কেঁদেছিলাম,
তার থেকেও অনেক বেশী চোখের জল ঝরছিল।
ঘরের সবাই যেন পাল্কি আসার অপেক্ষায় --
অবশেষে পাল্কি এলো।
তবে বেহারারা এলো পুলিশের বেশে,
আর তাদের পাল্কিতে চড়লো ওরা তিনজন।
চোখের জল সমানে ঝরতে লাগলো আমার...
ওপরদিকে তাকিয়ে বললাম --
এমনটা তো চাইনি ভগবান!
হিসাবে কিছু ভুল করছো না তো?
রোগটার ভয়ে জ্যোৎস্নাকেও কাজে আসতে
বারণ করে দিয়েছিল ওরা।
কিন্তু সেদিন যদি ও ঘটনাক্রমে না এসে পড়তো,
মায়ের মতো করে আমার সেবা না করতো,
কে জানে! হয়তো অযত্নে, অনাহারে --
আমিও নাম লেখাতাম
ঐ মৃত্যু মিছিলেরই আরো একজন সদস্যা হিসেবে।
#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য
সেই যে পুলিশ এসে ওদেরকে নিয়ে গেল,
কই! আর তো ফিরলো না কেউ।
আজ একমাস হয়ে গেল।
আমি একা বুড়ি মানুষ --
ভালো করে চোখে দেখি না, কানে শুনি না,
চিন্তা ছাড়া আর কিইবা করতে পারি!
খোকা, বৌমা আর নিতুর জন্য
দুশ্চিন্তায় ঘুম হয় না আমার।
কাজের মেয়ে, জ্যোৎস্না, বলছিলো --
চিন্তার কিচু নেই গো মাসি মা,
ওরা টি-ক ঘরে ফিরে আসবে, দেকে নিও।
পাড়ার ওনেককেই তো তুলে নিয়ে গ্যাচে,
তারা কেউই ঘরে ফেরেনিকো একোনো।
ওর কথাই সত্যি হোক।
ঈশ্বর যেন তাই করেন --
ঘরের মানুষকে সুস্থ করে ঘরে ফিরিয়ে দেন।
করোনা না করুণা -- কি একটা রোগ এসেছে!
ঐটা হলেই নাকি পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
কালে কালে আর কতো কি দেখবো!
কি দিন এলো বাবা! আগে তো জানতাম
কোনো অপরাধ করলেই পুলিশে ধরে নিয়ে যায়,
এখন দেখছি রোগ হলেও......
এখন কি যেন একটা নতুন কথা উঠেছে
-- 'হোম কোয়ারেন্টাইন'।
এটা কি আর নতুন কিছু?
আমি তো সেই কতকাল আগে থেকেই....
একটা রুমে একলা পড়ে থাকি।
আমার কাছে ঘেঁষাতো দূর অস্ত,
ঘরের কেউ আমার সঙ্গে একটা কথাও বলে না।
এমনকি খাবারটাও ঠিক করে দেয় না কেউ --
অচ্ছুতের মতো খাবার থালাটা
মেঝেতে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় ওরা।
ছেলে ডিউটি আর নিজের পরিবার নিয়ে শশব্যস্ত,
বৌমা ঘরের কাজ, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ,
আর আমার একমাত্র নাতনি নিতু,
সে পড়াশোনা, মোবাইল আর বন্ধু বান্ধবেই ব্যস্ত।
আমার মতো একটা জড় ভরতের জন্য
আর কারো সময় কোথায়?
বরং আজ আমি ওদের কাছে একটা গলগ্রহই।
সে আমার বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়াতো
একপ্রকার ঠিকঠাক,
সমস্ত জিনিসপত্রও গোছগাছ হয়ে গিয়েছিল,
শুধু গাড়ি আসার অপেক্ষা।
বিধাতা হয়তো কপালে অন্যকিছুই লিখেছিলেন।
বাদ সাধলো এই উদ্ভট রোগটা --
হঠাৎ করে লক ডাউন হয়ে গেল,
গোটা দেশ নাকি প্রধানমন্ত্রীর এক ইশারায় স্তব্ধ।
সেদিন আমার আর যাওয়া হলো না,
ঘরের সবার মন খারাপ।
শুনলাম লকডাউন নাকি ধীরে ধীরে উঠবে।
কিছুদিন পর শুরু হলো আনলক ওয়ান --
ঘরের সবাই আমাকে পাঠানোর জন্য
একেবারে শশব্যস্ত হয়ে উঠলো।
আমি খোকার কাছে অনেক কাঁদলাম --
এইসব রোগের মধ্যে আমাকে ঘর থেকে বাইরে
বার করে দিস না খোকা!
কে শোনে কার কথা --
ওখানে নাকি আমার অনেক যত্ন হবে,
অনেক বন্ধু পাবো আমি,
মন ভালো থাকবে।
তাই আবার গাড়ি ঠিক করা হলো।
আমি বাবার ঘর থেকে শ্বশুর ঘর আসার সময় যেমন অঝরে কেঁদেছিলাম,
তার থেকেও অনেক বেশী চোখের জল ঝরছিল।
ঘরের সবাই যেন পাল্কি আসার অপেক্ষায় --
অবশেষে পাল্কি এলো।
তবে বেহারারা এলো পুলিশের বেশে,
আর তাদের পাল্কিতে চড়লো ওরা তিনজন।
চোখের জল সমানে ঝরতে লাগলো আমার...
ওপরদিকে তাকিয়ে বললাম --
এমনটা তো চাইনি ভগবান!
হিসাবে কিছু ভুল করছো না তো?
রোগটার ভয়ে জ্যোৎস্নাকেও কাজে আসতে
বারণ করে দিয়েছিল ওরা।
কিন্তু সেদিন যদি ও ঘটনাক্রমে না এসে পড়তো,
মায়ের মতো করে আমার সেবা না করতো,
কে জানে! হয়তো অযত্নে, অনাহারে --
আমিও নাম লেখাতাম
ঐ মৃত্যু মিছিলেরই আরো একজন সদস্যা হিসেবে।