(অণু গল্প )
"দিন ফিরে আসে "
প্রবীর কুমার চৌধুরী
সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি নিলয় ,শুধুই ভেবেছে কি পেল এতে ? তৃপ্তি না প্রতিশোধ ? বুকের মধ্যের বহুদিনের যন্ত্রণাটার কতটা নিবৃত্তি হল ? কোন সদুত্তর …
(অণু গল্প )
"দিন ফিরে আসে "
প্রবীর কুমার চৌধুরী
সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি নিলয় ,শুধুই ভেবেছে কি পেল এতে ? তৃপ্তি না প্রতিশোধ ? বুকের মধ্যের বহুদিনের যন্ত্রণাটার কতটা নিবৃত্তি হল ? কোন সদুত্তর পাইনি । চিন্তায়,চিন্তায় শুধু রাত কেটে গেছে।
বহু দিন আগের একটি অসহায় বৃদ্ধার করুণ দুটিচোখ সেই মুহূর্তে ভেসে উঠেছে আর যেন বলেছে - দাদু ভাই আমি যে তোকে ছেড়ে আমি থাকতে পারব না কিন্তূ তোর বাবা আর মা আমাকে রাখতে চাইছে না ,আমি এখন বোঝা হয়ে গেছি দাদু । তোর মাকে খুশি করার জন্যে তোর বাবা নিজের মাকেও আজ বিসর্জন দিতে পিছুপা নয়।
দশমীর সকালে চোখের জল ফেলতে ফেলতে
নিলয়ের প্রিয় ঠাম্মা চলে গেছিল বৃদ্ধাশ্রমে । এর ঠিক এক মাসের মাথায় ঠাম্মা মারা গেলেন ।দূঃখ রাগ ,,একাকীত্ব ,আর নিঃসঙ্গতার মাঝে বেড়ে উঠতে লাগলো নিলয় । ছোট্ট বুকে তার অনুচ্চারিত শপদ। মনে সঞ্চিত হল অভিমান ,প্রতিহিংসা ।
কালের নিয়মে নিলয়ও সংসারী হল ,স্ত্রী ,সন্তান এলো ,আর এলো অমোঘ নিয়তির বিধান শাশুড়ি- বৌয়ের সাংসারিক অধিপত্য দখলের লড়াই ।জেদী ও দাম্ভিক মায়ের " বিনা রণে নাহি দিব সুচাগ্র মেদিনী " মনোভাবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠল জীবন ,বাড়ীতে কাক চিল বসতে পারেনা ।
নিলয় তার কর্তব্য স্থির করতে দেরি করে নি ।চারিদিকে সমস্থ বন্দোবস্ত পাকা করে এসে মাকে বলল -মা তুমি সব গুছিয়ে নাও কাল তোমায় বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যাব ।খুব সুন্দর আয়োজন ,আলাদা ঘর ,সুন্দর খাওয়ার ব্যবস্থা ও সর্বক্ষনের জন্যে ডাক্তার আছে ।টাকাটা একটু বেশী নেবে মাসে আঠারো হাজার তা নিক তুমি তো ভাল থাকবে ।
মা চিৎকার করে উঠেছিল -তোর কি মাথা খারাপ হল নীলু ? নিজের মাকে বলছিস বৃদ্ধাশ্রমে যেতে ।কেউ কি এমন কাজ করে?
নিলয় করুণ হেসে বলল -বাবা তো করেছিল ,তোমার দম্ভের কাছে হার মেনে আপন গর্ভধারিণীকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে ! কত অনুনয় ,বিনয় কত চোখের জল .....।
একবার দেখতে যাবে না মা ৭৫ বছরের বৃদ্ধা ঠাম্মা কত সুখে ছিল সেখানে .........?