#হিসাব_মেলে_না
#কলমে: #ভারতী_দাস
#তারিখ_২৬_০৭_২০২০
এই কলেজে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে ছেলেটা রাতদিন এক করে খেটেছে।আজ সেই শুভদিন। কোলকাতার নামজাদা আইন কলেজের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভাবে অয়ন। তপ্ত দুপুরে ছায়ার বিন্দু পর্যন্ত ধারে প…
#হিসাব_মেলে_না
#কলমে: #ভারতী_দাস
#তারিখ_২৬_০৭_২০২০
এই কলেজে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে ছেলেটা রাতদিন এক করে খেটেছে।আজ সেই শুভদিন। কোলকাতার নামজাদা আইন কলেজের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভাবে অয়ন। তপ্ত দুপুরে ছায়ার বিন্দু পর্যন্ত ধারে পাশে কোথাও নেই। ছেলেটাকে একটু দূরের গাছতলায় বসিয়ে বলে এসেছে...
"ডাক পড়লেই ফোন করবো। চলে আসবি। দেরী করবি না একদম।"
আজকের ছুটিটা অফিস দেয়নি, মাইনে কাটা যাবে একদিনের। বেসরকারী চাকরির এটা বিরাট সমস্যা। তবুও সে নিরুপায়। এক দুটো ডিগ্রী সম্বল করে বিশ হাজারী চাকরিটাই তার প্রাপ্তি। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ছাপোষা অয়নের বুক থেকে।
"অনিক দত্ত ,এর পর স্যারের রুমে যাবেন"
কথাগুলো শুনতেই ছেলেকে ফোন করে অয়ন। বিগত দিনের কালবৈশাখীর কারণে নেটওয়ার্ক নেই বললেই চলে। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর ফোন লাগতেই
"বাবী,চলে আয়..... এবার তোর নাম ডাকবে" বলতে না বলতেই আহ্বান এলো ভেতরে যাবার। ছেলের আসতে দেরী দেখে নিজেই ঢুকে গেল উপাচার্যের ঘরে। টেবিলের অপর প্রান্তের মানুষটা তখনও নিমগ্ন সার্টিফিকেটের চুলচেরা বিশ্লেষণে। উপাচার্য বেশ কড়া ধাতের মানুষ, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেই শুনেছে অয়ন।
তখন সবে হাইস্কুলে গেছে অয়ন। একদিন হেডমাস্টার এসে বললেন, "এর নাম সৌরভ দাস।অন্য স্কুল থেকে এসেছে। আজ থেকে তোদের সহপাঠী। সবাই মিলেমিশে থাকবি। "
সারা ক্লাসে তখন মৃদু হাসির গুঞ্জন, স্যার বলেন কি! এর তো দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়া উচিৎ! মাথা নীচু করে ছেলেটা এসে বসে লাস্ট বেঞ্চে। তার ভেজা চোখদুটো দেখার সময় নেই কারোর। হাসি, মজা বিদ্রুপ তার নিত্যসঙ্গী। তবুও ছেলেটা সদা হাস্যমুখে থাকার চেষ্টা করে। সময় পেরিয়ে যায় আপন খেয়ালে। বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম হয় সৌরভ। এর পর থেকে চলতে থাকে প্রথম হবার ধারাবাহিকতা।
আজ মাধ্যমিক পরীক্ষার তৃতীয় দিন। অঙ্ক চিরদিন অপছন্দ অয়নের। তবু পাশ তো করতে হবে! সামনের বেঞ্চে বসা সৌরভকে ক্রমাগত বিরক্ত করতে থাকে উত্তর বলে দেবার জন্য। ছুটির ঘন্টা পড়লে হলের বাইরে সৌরভ আসতেই.....
"তোর খাতাটা দেখালে কি ক্ষতি হতো?তিনফুটিয়া একটা মাল, তার এতো অহংকার! ভগবান তোকে বুদ্ধি ছাড়া আর কিছুই দেয়নি.... " বলতে বলতে হিংস্র বাঘের মতো ঝাপিয়ে পড়ে অয়ন। কিল, চড়, লাথিতে খর্বাকৃতি সৌরভ তখন রক্তাক্ত। পরের পরীক্ষাগুলো মনের জোরে হাসপাতালে বসে দিলেও, একটা চোখের দৃষ্টি হারিয়ে গিয়েছিল চিরতরে।
"বসুন" শব্দটা শুনেই সম্বিৎ ফেরে অয়নের। পাথুরে চোখে তাকিয়ে আছে সৌরভ, তার বাল্যবন্ধু!
রাস ভারি গলায় বললেন উপাচার্য, "আপনার ছেলের রেঙ্কিং অনেক পেছনের দিকে। আপনি অন্য জায়গায় চেষ্টা করুন।"
"তুই আমার বাল্যবন্ধু, আমি অয়ন। তোর মনে আছে! সেই জয়দেব উচ্চ বিদ্যালয়ে একসাথে পড়তাম। একটা কিছু কর ছেলেটার জন্য। বড় আশা করে আছে ছেলেটা।"
"ইস্কুল টা এক হলেও বন্ধু কেউ ছিল না আমার। আপনার কোথাও বোধহয় ভুল হচ্ছে।"
"পুরোনো ক্ষতের ক্ষতিপূরণ এভাবে নিস না, সৌরভ। আমি লজ্জিত সেদিনের ঘটনাটার জন্য। হঠাৎ মাথাটা গরম হয়ে, কি যে হয়ে গেল! ছেলেটাকে ভর্তি নিয়ে নেয় তোর কলেজে।"
"মিস্টার অয়ন, এখানে ন্যায় শেখানো হয়। এই চেয়ারে বসে অন্যায় করতে পারবো না আমি। মাপ করবেন। বিগত দিনের মতো আজও আপনার হিসাবে ভুল হয়ে গেল।"
বাঁ হাত বাড়িয়ে ঘন্টা বাজালেন উপাচার্য, পরবর্তী প্রার্থীর জন্য।