Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

মিলন -------- নীলাঞ্জনা ------------- : রণ, বাবার গিফটের প্যাকেট গুলো নিয়েছ তো ঠিক করে? মিকার কথায় হেসে ফেলে রণজয়। এই নিয়ে তেতাল্লিশ বার জীজ্ঞেস করল মিকা। : হ্যাঁরে বাবা, নিয়েছি। : ঢুকেই গ্র্যাণ্ডপাকে ঢিসুম ঢিসুম! লাফাতে লাফাতে …



মিলন
--------
নীলাঞ্জনা
-------------
: রণ, বাবার গিফটের প্যাকেট গুলো নিয়েছ তো ঠিক করে?
মিকার কথায় হেসে ফেলে রণজয়। এই নিয়ে তেতাল্লিশ বার জীজ্ঞেস করল মিকা।
: হ্যাঁরে বাবা, নিয়েছি।
: ঢুকেই গ্র্যাণ্ডপাকে ঢিসুম ঢিসুম!
লাফাতে লাফাতে বলে তাতান।
: নো তাতান। একদম না। গ্র্যাণ্ডপা বুড়ো মানুষ। তোমার অত্যাচার সহ্য করতে পারবে না।
: অত্যাচার মানে কি মম্?
এবার ভূমিকা হেসে ফেলে।
: মানে দুষ্টুমি। যেটা তুমি কর সব সময়।
বলতে বলতে তিন জনে গলির মধ্যে ঢোকে। পুরো এলাকাটা আলোয় জমজম করছে। সব বাড়িতে ডেকোরেটিভ লাইট ঝিলমিল করছে। একটার পর একটা শেল ফাটছে আকাশ আলো করে।
: কতদিন পরে এলাম বল তো মিকা।
: হ্যাঁ, প্রায় বছর আটেক। যখন চলে গেলাম, তখন তাতান মোটে তিন। ভীষণ ন্যাওটা ছিল বাবার। সেদিন বাবার সে কি কান্না। আচ্ছা রণ, আমরা তো মাঝেমাঝে আসতে পারি বাবার সঙ্গে দেখা করতে?
: সময় সুযোগ হয়ে ওঠে না। যাক গে। এবারে বাবাকে অবাক করে দেব।
: ঠিক বলেছ পা। সারপ্রাইজ!
তাতান আবার লাফায়।
দূর থেকে ফ্ল্যাট বাড়িটা চোখে পড়ে তাদের। সব ফ্ল্যাটে আলোর মালা। শুধু তেতলায় বাবার ফ্ল্যাটটা অন্ধকার। আরো বেশি করে চোখে পড়ছে সে জন্যে।
: ইশশ্! কমলাদি আলো গুলোও জ্বেলে দেয় নি। বাবা কিছু বলেনও না। ভীষণ ফাঁকিবাজ হয়েছে কমলাদি।
: এবার ছেলের বউ এসে সব ঠিক করে দেবে।
হাসি মুখে বলে রণজয়।
তিন জনে বাড়িতে ঢোকে।
***********************
ঘুমটা আচমকা ভেঙ্গে যায় রজতাভর। আস্তে আস্তে উঠে বসেন তিনি। মাথার ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা। জানলার ফ্রেমে ধরা আকাশের টুকরোটায় ফুলের মত ছড়িয়ে পড়ে বাজির আলো। চারদিকে বাজি ফাটছে।
: ও, আজ তো ভুত চতুর্দশী। একটু পরেই কালীপুজো শুরু হবে।
আপন মনে বলেন রজতাভ। তারপর খেয়াল হয়, ঘরটা কি অন্ধকার। শুধু ঘর নয়, পুরো ফ্ল্যাটটাই অন্ধকারে ডুবে আছে। তিনি বেহুঁশ ঘুমোচ্ছিলেন। কমলা বোধহয় বেরিয়েছে কোথাও। লুঙ্গীর কষি সামলে বিছানা থেকে ওঠেন। হাতড়ে হাতড়ে টেবিলের ড্রয়ারে ছোট টর্চটা খুঁজলেন। কিন্তু পেলেন না।
: কোথায় যে রাখে সব জিনিস কমলা। দরকারের সময় কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না।
গজগজ করতে করতে সুইচবোর্ডের দিকে আন্দাজে এগিয়ে যান রজতাভ।
: মিকা থাকতে এসব ভাবতেই হত না। সব দিকে চোখ ছিল মেয়েটার।
একটু থমকান রজতাভ। ভীষণ মনে পড়ছে ওদের কথা। রণজয়, ভূমিকা আর... আর... তাতান। তাঁর ছোট্ট তাতান। চোখের কোল থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল তাঁর গালের শুকনো চামড়া বেয়ে।
কিসের টানে যে চলে গেল ওরা, তাঁকে একলা রেখে।
তারপরেই চোখ মোছেন রজতাভ। বচ্ছরকার দিনে কাঁদতে নেই। আহা, তিনি একলা কোথায়? কমলা তো আছে। হোক না কাজের লোক। এখন তো একেবারে ফ্যামিলি মেম্বার। আবার ভাবেন,
: কত দিন দেখি নি ওদের।
অন্ধকার ঘরে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন রজতাভ। কলিং বেলটা সেই সময়েই বাজল।
***************************
বেলটা আবার একবার বাজাল রণজয়।
: কমলাদি কি করছে? দরজা খুলছে না কেন?
মিকা বেশ অধৈর্য্য।
: দেখ হয়ত বাথরুমে আছে। বাবা বোধহয় ঘুমোচ্ছে।
বলতে বলতে দরজা খুলে যায়। সামনে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রজতাভ। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁর।
: সারপ্রাইজ! গ্র্যাণ্ডপা সারপ্রাইজ!
বলতে বলতে তাঁর কোলে ঝাঁপিয়ে আসে তাতান। মিকা আর রণ এগিয়ে এসে নিচু হয়ে প্রণাম করে তাঁকে।
: আপনাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছিল বাবা। দেখুন সবাইকে নিয়ে কেমন চলে এলাম।
বলে মিকা। আনন্দে রজতাভর বুক উথাল পাথাল করছিল। রণ আর মিকাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। তারপর চারটে শরীর আস্তে আস্তে ধোঁয়া হয়ে মিলিয়ে গেল অন্ধকারের মধ্যে।
ঠিক সেই সময় আকাশে একটা শেল ফাটল। তার আলো জানলা দিয়ে এসে পড়ল দেয়ালে ঝোলান, ফুলের মালায় সাজান গ্রুপ ফটোটার ওপরে। রণ, মিকা আর তাতান। ওদের প্লেন অ্যাকসিডেন্টের কদিন আগেই তোলা। বিছানায় রজতাভর শরীরে তখন রিগর মর্টিস সেট করতে শুরু করেছে।