Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

দৈনিক সেরা কলম সন্মাননা প্রতিযোগিতা
পর্ব-১৬
বিভাগ-ছোটো গল্প
শিরোনাম-বর্ষা লিপি
কলমে-মিতা দাস বিশ্বাস
তারিখ-৫.৭.২০২০
প্রীয় জুই
              বহুদিন বাদে তোকে মনে পড়লো । জানি না তুই এই ঠিকানায় আছিস কিনা ? এটা তো তোর ছোটো বেলার …


দৈনিক সেরা কলম সন্মাননা প্রতিযোগিতা
পর্ব-১৬
বিভাগ-ছোটো গল্প
শিরোনাম-বর্ষা লিপি
কলমে-মিতা দাস বিশ্বাস
তারিখ-৫.৭.২০২০
প্রীয় জুই
              বহুদিন বাদে তোকে মনে পড়লো । জানি না তুই এই ঠিকানায় আছিস কিনা ? এটা তো তোর ছোটো বেলার ঠিকানা ছিল । আমি এখন বার্ধক্যের দোড়গোড়ায় । তুইও তাই । তবুও এটা তোর আমার ছোটো বেলার ঠিকানা ।জানিস জুই ভোরে উঠে দেখি আকাশের মুখ বেজায় ভার । মনের কালো সে সারাআকাশে ছড়িয়ে দিয়েছে।কালো মেঘে আমার আকাশ আজ ঢাকা ছিল। দেখলাম দুচারটা বক উড়ে যাচ্ছে । কালো আর সাদার মিশ্রন দারুন লাগলো জানিস । আমি চেয়ারটা নিয়ে বারান্দায় বসলাম । ওমা আমার পুরো বারান্দায় জুই ফুল ছড়িয়ে আছে । হ্যাঁ রে এখনো আমি জুই ফুল ভালোবাসি । আমার ঘরের কার্নিশ বেয়ে উঠে গেছে । একটু হাওয়া দিলেই ঝড়ে পড়ে । বর্ষার সন্ধ্যায় জুই ওর সুবাস ছড়িয়ে দেয় । আমি এক করতল ভরা জুই কুড়িয়ে নিয়ে তোকে মনে করছি ।মন আজ আমার লাগামছাড়া ঘোড়া ।সেই ধানের খেত ধরে তোর হাত ধরে ছুটছে ।মেঘ করলেই আমরা দৌড় লাগালাম ।মা চিৎকার করত ।তখন খুব বাজ পড়ত ।এখন কৈ ?আকাশ ভরা মেঘ মাথায় করে দুই বন্ধু একছুটে ক্ষেতে গিয়ে দেখতাম, আমাদের খেতভরা ধান আষাঢ়ের বাদলা বাতাসে কি সুন্দর ঢেউ তুলেছে ।এরপর যেই না ঝড় উঠতো দৌড় লাগালাম আমি বাগানে ।আমি কুড়িয়ে কচুপাতা মাথায় দিয়ে আম খেতে খেতে বৃষ্টির সাথে একছুটে বাড়ি ।একবার তুই তো জলের মধ্যে ধপাস করে পড়েছিলিস । আমি হেসে উঠেছি দেখে তুই আমাকে এমন ধাক্কা দিয়েছিলি জুই , আমি পড়ে জলে কাঁদায় ল্যাজে গোবরে হয়েছিলাম।মনে পড়লে এখনো হাসি আমি ।দেখ জুই আজও বৃষ্টি নামলো । আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল খানিকটা ভিজি । কিন্তু লজ্জা পেলাম জানিস । ছেলে বৌ দেখলেই রে রে করে তেড়ে আসবে । বলবে বুড়োর ভিমরতি ধরেছে । আমি শহরতলীতে একটা ছোট্ট বাড়ি বানিয়েছি ।সেই ছোটবেলার গ্রামটাকে আজো ভুলতে পারি নি জুই । মনের মনিকোঠায় যত্ন করে তুলে রেখেছি কিন্তু মাঝে মধ্যে উঁকি মারে ।আজ এই বর্ষামুখর সকালে আমি বারবার আমার ছোটো বেলার চলে যাচ্ছি জানিস ।বাবা পোষ্ট মাষ্টার হয়ে তোদের গ্রামে গিয়েছিল ।সাথে আমি আর মা ।বছর পাঁচেক ছিলাম ওখানে , বয়ঃসন্ধিকালে ।তাই স্মৃতি গুলো গেঁথে গেছে । প্রকৃতি কথা বলত ও গ্রামে ।ওখান থেকে এসে অনেক জায়গায় গিয়েছিল কিন্তু ভালো লাগে নি ।দেখ উঠোন ভরা জল হয়েছে আজ ।মনে পরছে তোর সেই কাগজের নৌকা ভাসাতাম দুজনে ।তারপর দেখতাম কার নৌকা বেশি দুর যায়।কাগজের নাও কিছুদুর গিয়েই ডুবে যেত ।আজ আর নৌকা ভাসানোর বয়স নেয়। আমার নাতির আবার ওসব বোকা বোকা ব্যাপার ভালো লাগে না ।ইস্ কাকটা ঐ আমগাছটাই বসে কি মেজাজটাই না ভিজছে রে ।একেই বলে কাকভেজা । আজকের সকালটা অন্য সকাল থেকে আলাদা । তুই জানিস আমি বৃষ্টি ভালবাসি । আমি বৃষ্টি পড়ার আওয়াজে সুরধ্বনি শুনতে পায়। নিস্তব্ধতায় শুনতে হয় । আমি এখন একাকিত্বকে সাথে করে বাঁচি জুই । তাই নিস্তব্ধতা আমার চারিপাশে । অনেক ক্ষন আজ বৃষ্টি পড়া দেখলাম ।আজ খিচুড়ি খাব ইলিশ ভাজা দিয়ে । আমরা দুজনে বর্ষা এলেই মায়ের হাতে রান্না খিচুড়ি খেতাম বল্।তার স্বাদ আলাদা ছিলো ।এখন আর সেই স্বাদ পাই না । তবে ভালো লাগে ।এই খিচুড়িটা বৃষ্টির আমেজটাকে বাড়িয়ে দেয়।এই দেখ আমি বকেই যাচ্ছি ।কতো কথা জমে আছে রে ।আজ তার কিছুটা এই বৃষ্টি মুখর সকালে মন থেকে বেড়িয়ে এলো । চিঠিটা পেলে জানাস । আমি এখন মুক্ত। যাব তোর কাছে । তুই তো আমার ছোটো বেলা । আজকের বৃষ্টি ভেজা সকালটা তোকে দিলাম।
            ভালো থাকিস ।
                            ইতি
                                টগর
কিছুদিন পর চাকরটা একটা খাম নিয়ে টগরবাবুকে দিয়ে গেল । ছেলে এসে বলল ,বাবা এযুগে তোমার কাছে চিঠি? নস্টালজিক ব্যাপার ।কে পাঠিয়েছে ?টগরবাবু বললেন বন্ধু । ছেলে চলে যেতেই চিঠিটা খুললেন ,
        প্রীয়, টগর ,
    কেমন আছ? জীবন সায়াহ্নে তোমার 'বাদলা চিঠি' নামক চিঠি পেলাম । যদিও নামটা আমি দিয়েছি।অবাক হলাম , তুমি একরকম আছ । ভুলে গেছি তোমাকে তুই না তুমি বলতাম ।তাই তুমি করেই বলছি । আমি এখন একজনের বিধবা ।একটা ছোট্ট বাড়িতে থাকি । তোমার বৃষ্টি আমার বৃষ্টি ভেজা সকাল এক নয় টগর।আজ সেই ভোর থেকে বৃষ্টি । অঝোর ধারায় ঝরে পড়ছে । রান্নাঘরটা দুরে ।উঠোন পেরিয়ে যাচ্ছি ।জল জমে আছে ।নাগো নৌকা ভাসানোর স্বপ্ন দেখতে পারি না ।বাতের রুগী ।পা  ব্যাথায় আজ ঘুমাতে পারবো না । বৃষ্টি এখন বিরক্তিকর।সাপ,ব্যাঙ, কেঁচো ইস বাবা একটু ও ভালো লাগছে না আজ । সারা দিন জল আর এইসব ঝাটাতে হবে । বুড়ো বেলায় এসব সয় না জানো। আমিও আজ খিচুড়ি করেছি । তবে আলু সেদ্ধ আর পাঁপড় ভাজা সাথে । তোমার জুইফুল বৃষ্টিতে  ভিজে তোমার আঙ্গিনায় ছড়িয়ে থাকে আর আমি জুই ঝি খাটি ছেলের সংসারে । স্বপ্ন গুলো সব হারিয়ে গেছে জীবন থেকে।আচ্ছা শেষ করলাম টগর । ভালো থেকো ।
                   জুই
চিঠিটা হাতে নিয়ে বসে থাকলেন। আকাশের মেঘ এখন ওনার মনে জমেছে।না জানি কখন বৃষ্টি হয়ে নামবে।।
*************†***†****†**†শব্দসংখ্যা-৪৪৮