কলকাতার পর এবার জেলা স্তরে ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিকা সত্বেও দীর্ঘ লকডাউন এ জেলার বেসরকারি স্কুল গুলিতে অতিরিক্ত ফি আদায়ে বাধ্য করা হচ্ছে। কাজেই এমনই অভিযোগে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিরুদ্ধে ক্রমেই ক্ষ…
অভিযোগ পত্র পাঠানো হল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। স্বভাবতই নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে প্রায় শতাধিক ছোট-বড় নামী-দামী বেসরকারি স্কুল রয়েছে। যেখানে মূলত বাংলা শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে আধুনিক শিক্ষাদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আর তাতেই লকডাউন এর বাজারে চরম রকমের বিপদের মুখে পড়েছেন অভিভাবক অভিভাবিকা। তাদের অভিযোগ, এমনিতেই লকডাউন এর বাজারে চরম অর্থ সংকট। বহু ক্ষেত্রেই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত অভিভাবক অভিভাবিকা দের কাজ হারিয়েছেন। কোপ পড়েছে বেতন কাঠামো তে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেওজেলার ওই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির থেকে কোনভাবেই রেহাই মিলছে না। বর্তমানে এই সংকটময় সময়ের মধ্যে প্রতিমাসে তাদের ধার্য্য টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। গ্রাম গঞ্জের এমন অনেক স্কুল আছে দূরাভাষ এর মাধ্যমে অভিবাবকদের কাছে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
এমন অভিযোগ উঠেছে, খোদ সি আই এস সি ই অনুমোদন প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান মহিষাদল-সংলগ্ন দিশারী পাবলিক স্কুলের বিরুদ্ধেও। এই স্কুল সুনামের সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদানের অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও বর্তমান সময়ে এই করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়ে উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছে অভিবাবকরা। এমনই পরিস্থিতিতেই স্কুলের ফী বৃদ্ধি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা।বিষয়টি প্রতিকারের জন্য ইতিমধ্যেই পথ অবরোধ করে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তারা।
অভিযোগ, যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত বেসরকারি স্কুলগুলিতে ফী নেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ করেছে, এই সংকটময় অবস্থার কথা ভেবে। সেখানে স্কুল কর্তৃপক্ষ এসএমএস বা ই মেল করে বর্ধিত ফী অনলাইনে স্কুলের একাউন্টে জমা দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করেছে। ক্ষুব্দ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে গৌরাঙ্গ সামন্ত, মন্টু কুমার বেরা, দীপঙ্কর নাথ রা অভিযোগ করে বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় যে টাকা নেওয়া হয়েছিল সেই সময় বলে দেওয়া হয়েছিল যে প্রতি বছর নতুন ক্লাসে প্রমোশন এর সময় ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবক কাছ থেকে আর নতুন কোন ভর্তি ফী বা অ্যানুয়াল ফী লাগবে না।
কিন্তু, বর্তমান শিক্ষাবর্ষে কর্তৃপক্ষ ফের রি-অ্যাডমিশনের জন্য মাথাপিছু বারো হাজার টাকা করে অ্যানুয়াল ফী চাইছে। দীর্ঘ লকডাউন এর বাজারে আমাদের কাছে যা প্রায় মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়া অবস্থা। শুধু তাই নয়, লকডাউন এর জেরে এখন স্কুল বন্ধ থাকলেও জোর করে ছাত্র-ছাত্রীদের খাবারের জন্য মোটা টাকা আদায় করা হচ্ছে। একইভাবে আদায় করা হচ্ছে স্কুলবাসের ভাড়াও। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, স্কল বন্ধ থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের খাবার ও পরিবহন বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে কেন? অভিভাবকদের অভিযোগ, তাঁদের হাজার অনুনয়, বিনয়েও কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ। এভাবে একটার পর একটা স্কুল কর্তৃপক্ষের অন্যায় সিদ্ধান্তে তাঁরা বিচলিত। কাজেই কলকাতার পর জেলার বেসরকারি স্কুল গুলির বিরুদ্ধে এমন ভুরিভুরি অভিযোগ তুলে এদিন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার সহ জেলা শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিক কের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেয় অভিভাবকরা।
এদিকে অভিবাবকদের এই ক্ষোভের কথা আঁচ করে ইতিমধ্যে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক হলদিয়া সার্কেলের এ আই কে তদন্ত করে তার রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে তলব করতে চলেছে জেলা পরিষদ। যদিও এবিষয়ে তেমন মুখ খোলেনি অভিযুক্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ। এবিষয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক( মাধ্যমিক) আমিনুল আহসান জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।