Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

|| শেষবেলায় ||কলমে- দেবাশ্রিতা মজুমদার
খুব অবাক হচ্ছো জানি।ভাবছো Skype আর টেলিফোন ছেড়ে হঠাৎ করে চিঠি পাঠাচ্ছি কেন?না গো এমনিতে আমি এখনও সুস্থই আছি, তবে এটাকে তুমি তোমার পাগলের প্রলাপ বলে ধরতেই পারো।দীর্ঘ  ৩০ টা বছর একসাথে থাকার পর…

 


|| শেষবেলায় ||

কলমে- দেবাশ্রিতা মজুমদার


খুব অবাক হচ্ছো জানি।

ভাবছো Skype আর টেলিফোন ছেড়ে হঠাৎ করে চিঠি পাঠাচ্ছি কেন?

না গো এমনিতে আমি এখনও সুস্থই আছি, তবে এটাকে তুমি তোমার পাগলের প্রলাপ বলে ধরতেই পারো।

দীর্ঘ  ৩০ টা বছর একসাথে থাকার পর যখন আমরা ভাগের হলাম তখন কি করবো বুঝতে পারছিলাম না গো।

বারবার তোমার কথাগুলো মনে হচ্ছিল!

তুমি বলেছিলে,"আমরা মরে গেলে ওরা পাবে ক্ষন– সম্পত্তি, বাড়ি সব। এখন দেওয়ার কি আছে বাপু?"

আমি ভেবেছিলাম ওদের সব দিয়ে দিলে ওরা হয়তো ঐসবের টানে ফিরে ফিরে আসবে আমাদের কাছে ,দেখভাল করবে আমাদের। 

হায় ঈশ্বর, কি চরম ভুল ছিলাম আমি!

সত্যিই তো তোমার গর্ভজাতদের তোমার চেয়ে ভালো কে-ই বা চেনে?

আমি বোধহয় জিততে চেয়েছিলাম জানো, ভাগশেষে যোগফল খুঁজে পেতে চেষ্টা করেছিলাম।

অথচ আজ অদৃষ্টের কি অদ্ভুত পরিহাস দেখো একেবারে হারিয়ে দিল আমাদের!

শেষে কিনা অন্তরফল অপেক্ষমান ছিল  আমাদের জন্য।

আমাদের মাঝে দেশান্তরের বিভেদ হল?

এই দুমাসে আমি পদে পদে হোঁচট খেয়েছি তোমাকে ছাড়া।

নিজের জিনিস আজকাল সব নিজেকেই গুছিয়ে রাখতে হয়,ওরা যে বড্ড ব্যস্ত।

বেশিরভাগ সময়ই আমার হাল ‘খুঁজি খুঁজি নারি’।

তোমার বোধহয় বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে না, তাই না?

ও দেশে তো আবার দেখভালের লোকও পাওয়া যায় না।

তবে তুমি তো সবটা একাই  করে এসেছ এতকাল!

না না, ওরা কিন্তু আমার এতটুকুও অযত্ন করছে না, একটা কাজের লোকও তো রেখেছে আমার জন্য!

কিন্তু আমার জীবনের তৈরি হওয়া এই শূন্যতাটা কি করে মিটবে গো?

সেদিন তোমার চোখ দুটোতে একটা অব্যক্ত কষ্ট দেখেছি আমি।

আর কেউ না বুঝুক ঐ কাজলনয়নে জমাট বাঁধা একাকীত্বের ভাষাটা আমি পড়তে পারি।

কম্পিউটার এ দেখা কিংবা মোবাইলে কথা বলার সময় সর্বক্ষণই পিগলু তোমার আশেপাশে থাকে।

কতবার বলেছিলুম তোমায়, এসো শিখিয়ে দিই, তুমি রাজি হওনি।

পিগলু শেখাতে চেয়েছে তোমায়, কিন্তু তোমার সেই একই ভয় যদি খারাপ হয়ে যায় যন্ত্রগুলো।

তার ফলেই আমরা দুদণ্ড একা কথা বলার সময় পাইনা।

ওর ঐ বিদেশি ঢঙে ‘hurry up, ঠাম্মু’ কথাটাতে আমিও বেশ বুঝতে পারি যে ও বিরক্ত হচ্ছে।

তুমি বলবে,"আসলে  ও তো বাচ্চা মানুষ, ধৈর্য্য কম, তাই ঐ যন্ত্র পরিচালনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে ওর বেশ কষ্ট হয়৷"

তা সেদিন সে কি বলে জানো? বলে,“দাদুভাই, তুমি আর ঠাম্মু ঐরকম করে শুধু চেয়ে থাক কেন? কথা যদি ফুরিয়েই যায় তাহলে তাকিয়ে থেকে লাভ কি?”

আসলে ওরা জানে না যে চোখে চোখে কত কথা হয়… মনে আছে  কলেজে আমাদের প্রথম চোখাচোখি।

ঐ একদেখাতেই খোঁজ মিলেছিল আমার নাটোরের বনলতা  সেনের। 

আজ আর একবার লাইনগুলো বলতে খুব  ইচ্ছে হচ্ছে,জানো!

বলি, হ্যাঁ-


“চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,

মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর

হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা

সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’

পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।


সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন

সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;

পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন

তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;

সব পাখি ঘরে আসে— সব নদী— ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;

থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।"

      

একি একি কাঁদছো কেন?

আবার দলা পাকিয়ে বুকে ধরছো কাগজটাকে?

তুমি একই থেকে গেলে গো…

তাই তো  অনেক ভেবে ঠিক করলুম এবার থেকে রোজ একটা করে চিঠি লিখব তোমায়।

পত্র  দিয়েই আবার শিশির ছোঁয়াব শুকনো ঘাসের ডগাগুলোতে।

ফুরিয়ে যাওয়ার আগে আবার প্রাণ ভরে বাঁচব দুজনে।

দূরে থেকেও যে কাছে থাকা যায়, সাথে বাঁচা যায় তা আমরা আবার দেখিয়ে দেবো, কি বলো?

পারবো  তো আমরা? এই ওরা জানলই না, তোমাকে আমার থেকে আলাদা করে দিয়ে ওরা আমাদের আরেকবার প্রেম করার সুযোগ করে দিল।

শেষ বয়সে আবার একবার ফিরিয়ে দিল আমাদের যৌবনের সেই নানা রঙের দিনগুলি।

তোমার আবির রাঙা গালদুটো এখন আমি দিব্যচোখে ছুঁতে পারছি বুঝলে।

থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। খুব তাড়াতাড়ি ভ্রমরের গুঞ্জন শোনার অপেক্ষায় রইলাম। 

                                           ইতি –

                                   তোমার বনফুল


#শব্দগ্রাফি

অঙ্কনে- সোহিনী