....... " বানভাসি "...... ♠..... ' গল্প '..... ~~~ ত্রিদিব কুমার বর্মণ ।
জলে থৈ থৈ । জল বনাম স্থলের যুদ্ধ ।অবিরাম বৃষ্টির দাপটে স্থলের যেন পরাজয়। অতর্কিতে বন্যার আক্রমণ !পথ- ঘাট, পুকুর- বাগা…
....... " বানভাসি "...... ♠..... ' গল্প '.....
~~~ ত্রিদিব কুমার বর্মণ ।
জলে থৈ থৈ । জল বনাম স্থলের যুদ্ধ ।
অবিরাম বৃষ্টির দাপটে স্থলের যেন পরাজয়। অতর্কিতে বন্যার আক্রমণ !
পথ- ঘাট, পুকুর- বাগান, ভিটেমাটি - চাষজমি, খানা- খন্দ, ডোবা- নালা, আল- বিল, সব মিলেমিশে একাকার.... ।
চারপাশ জলের শুধু আধিপত্য, জলাকার
হাওয়া মেশানো গুমোট মেঘলা আকাশ।
রাতে হয়তো আরো জল বাড়তে পারে..।
হারাণের চিন্তা বাড়ে....... ।
জীবনযুদ্ধে হারাণ লস্কর হার মানার পাত্র
নয়। লাগোয়া প্রতিবেশী করিম মন্ডলের পুকুর ডুবেছে, মাছ ভেসেছে। খাপ্ লা জালে মাছ ধরার আনন্দে হারাণ লস্কর আনন্দে আত্মহারা.... ।
একটানা বৃষ্টি ঝরছে। খপাখপ্ চারটে মাঝারি মাপের মাছ ধ'রে হারাণ হাঁক দেয় ; ---
" হ্যাঁই নক্ষ্মীর মা , তু ' কুথানে !
শুন্ , দ্যাখ্ ---চারটে জ্যান্ত ধরিছি..... ।
ই 'গুলান্ বেচি আস্ তিছি...। তু ' রান্না
চাপা। ভাতে--ভাত খাব..অ..। বুঝ্ লি ,
জল্ দি আস্ ব ' খন্..... । "
হারাণ ভাগচাষী। ওর নিজস্ব কোন জমি-
জমা নেই। রয়েছে শুধু ভিটেমাটির ঘর।
দরমা-টালির ছাউনিতে তাও বা একটা মাত্র খুপ্ ড়ি... ।
সুখ- দুঃখের সাথী বলতে হারাণের বৌ,
দুর্গা। আর রয়েছে ফুটফুটে দেড় বছরের মেয়ে লক্ষ্মী । লক্ষ্মী হ'ওয়ার আগে অবধি হারাণ বৌএর নাম ' দুগ্গা ' ব'লে ডাকত... । ইদানিং ' নক্ষ্মীর মা ' সম্বোধনে ডাকে....।ওর বৌ তাতেই যেন খুশী....... ।
দুর্গা চনমন ক'রে ওঠে আনন্দে... ।
তা ' টই-টম্বুর জলে কুঁড়ে ঘর ভাসান যায়।
তবুও যেন দুর্গার আনন্দের বান বইছে মনের ভেতর। আর ক'দিন পর পুজো... ।
রান্না চাপাতে চাপাতে মনে মনে হিসেব কষে, আর ক'দিন পর ই ত ' গোসাই বাড়ীর ঠিকে কাজের মাসমাইনে হাতে আসবে। তা ' দিয়ে তোষক গড়াবে... ।
মাচানে শুতে বড্ড লাগে। চাদর কিনবে।
বালিশ তৈরী করাবে.... ।
এ ' বার মাস মাইনে টা হারাণকে তুলে দেবে না। তা ' লেই ত ' মদ গিলে সব পয়সা ফুক্....... ।
সন্ধ্যের কিছু আগে হাঁটু জল ঘেটে হারাণ ফিরল.... ।
হাতের মুঠোয় চালের সওদা।চপ্ চপে ছেঁড়া জামার পকেটে উঁকি দিচ্ছে দশ টাকার ভাঁজ করা নোট.... । কানে গোঁজা আধ পোড়া ভিজে বিড়ি... । কল্ কল্ শব্দ
ঠেলে, হাঁটুর ওপর জল-কাঁদা ভেংগে ঘরের ভেতর হারাণ ঢোকে.... ।
হাতের চালব্যাগটি মাচার ওপর রাখে।
তারপর মাচার ওপর এক লাফে উঠে বসে জিরোয়.... । দুর্গা এগিয়ে গামছা দেয়। হারাণ দু'টো পা-হাত মুছে নেয়। সারা অংগের জল নিমেষে গামছাতে শুষে যায়। ভেজা বসন ছেড়ে শুকনো লুংগি
গলিয়ে দেয় মুহূর্তে... ।
দুর্গা হারাণের ভেজা বসন গুলো ঘরের মধ্যেই টাংগানো দড়িতে মেলে দিতে দিতে সোহাগ বসে বলে ওঠে ; ----
" ক'ত পেলি গো, মাছ গুলান্ বিক্ কির্ করি..... ? "
হারাণ " হুঁ " শব্দের ফাঁকে শুয়ে থাকা
লক্ষ্মীকে দেখে নেয়.... ।তারপর ব'লে ;---
" দাও, খেতি দাও...। বড্ড পেটে ডন্
মার্ তিছে..... । "
হারাণের ঘরে হাঁটু জল খেলা ক'রে... ।
জিনিষ-পত্তর সব মাচার ওপর। বাঁশের খুঁটিতে হারাণের বানানো মাচা। জল ওদের তিন জনকে ছুঁতে পারে না.... ।
অতি কষ্টে উপরে রান্না, শোওয়া-- বসার সংসার। ওপরে টালির নিচে ঘেরা প্লাস্টিকের ছাউনি। একপাশে ছোট্ট মই।
হারাণ--দুর্গার তবু ও নেই কোন ক্লেদ।
বৃষ্টি থামলেই জল সরে যাবে.... ।
এটাই তাদের ধারণা..... ।
বিপুল জল রাশির বুকে এইভাবে শয়্যা
রচনা ক'রে সপরিবারে বাস করছে হারাণ লস্কর......।
দুর্গা শুয়েছে। পাশে লক্ষ্মী, ঘুমোচ্ছে। হারাণের চওড়া বুকের মধ্যে দুর্গা কুন্ডুলী পাকাচ্ছে...। নানান বায়নার ফাঁকে দুর্গা
আসল কথা সারতে চায় ; ----
...." গেলবার তুমি ফাঁকি দিছো। ই ' বারে
কিন্তুক্ পুজায় শাড়ী দেতি হ ' বে। নক্ষীর জন্যি ফ র গ্ - জামা , আর তুমার নুংগি- নিমা....। কী গো, রা ' কর্ তিছো না যে !"
হারাণ দুর্গার আরো গা' ঘেসে শোয়।
'হু ' - 'হু ' শব্দ ক'রে দুর্গাকে আয়েসি টানে
যখন গায়ে - গা ' মেলাতে উদ্যত, অমনি
দুর্গা ব'লে ওঠে ; ----
.... " নক্ষ্মীর ঘুম চটি যাবে... । কি গো , --
আচছা মিন্ সে তো...... ! "
সৃষ্টির আদিম আবেগে মথিত দু'টি হৃদয় ,
শরীর গহন সুখের উচ্ছ্বাসে যখন উন্মত্ত,
প্রারোম্ভিক সম্ভোগের মুহূর্তের সন্ধীক্ষণ যখন.., দুর্গার মুখে মৃদু বোল ফোটে ; ----
...." মাচান্ ভাংগি পড়ি যাব কিন্তুক্ সক্কলে, তেখন্ ভাল. অ হবি ত '! "
এক সময় নিশ্চল, নিশ্চুপ.... । রাত কত
কে জানে ! চারদিক নিস্তব্ধ। প্রহর গুনছে কালরাত্রি ! কিসের শব্দে আচমকা ঘুম ভেংগে যায় দুর্গার। ভয়ে চুপিচুপি স্বামীকে ঠেলা দেয়..; ----
...."হ্যেই, উঠো তো ! জলের মধ্যি কি যেন দাপাদাপি কর্ তিছে ? "
হারাণ লাফিয়ে ওঠে। উত্কর্ণ হ'য়ে শুনতে পায়। সত্যি জল নড়ছে। মাচার ওপর বসে ছেঁড়া বালিশের তল থেকে দেশলাই জ্বালিয়ে আড়ায় ঝুলানো তেল-কুপিটা ধরাল। নিচে জলের দিকে চাইল।
সব অন্ধকার ঠেকছে। জল শুধু ওল্টাচ্ছে।
বিরাট একটা মাছ যেন ঢুকেছে, ওর মনে হ'য়..... ।
মাচানে ঠেস্ দেয়া মইয়ে পা' দিয়ে, কিছুটা নেমে অব্যর্থ শিকারীর মত হাত
জলে ডুবিয়ে দেয় জলের অতলে... ।
হারাণের যেন সবুর সয় না...। কোচে ঠেকেছে মস্ত বড় ভারী মাছ যেন, হারাণ
খুশীতে ডগো ডগো হ'য়ে বৌকে ব'লে ;---....." তু ' কুপিটা নিচে নেমি দেখা দিকি !
আমি কোচ্ না উচান্ ক'রি... । কত্ তো
বড়ো হ'বি মাছটা !..... "
দুর্গার তখন চোখে-মুখে পূজোর দামী শাড়ীর চিক্ মিক্...।
হারাণ লুংগি তুলে জলে নেমে জলের তলে হাত দিয়েই চিত্কার করে ওঠে ; ----
...." দুগ্ গা ; -- তুর নক্ষ্মী কুথানে ? .... "
দুর্গা মাচার ওপর তাকিয়ে, হাত বুলিয়ে...
.... দ্যাখে ; ---- " নক্ষ্মী লাই..... !!! "
~~~~~~~~~~♥~~~~~~~~~~~~
( ১০.০৬.২০১৬.)
~~~~~~~~~~♠~~~~~~~~~~~~