Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

অনলাইন ক্লাস
(শিক্ষক/শিক্ষিকাদের অনুরোধ,রম্য তার আড়ালে দেখুন।)
রবিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনে সকাল বেলা রাসু বাবুর ঘুম ভাঙতেই চায় না। তাড়াতাড়ি নাকে মুখে গুজে অফিসে দৌড়ায়।     কিন্তু রবিবার রাসু বাবু অন্য মুডে থাকেন।খুব ভ…

 


অনলাইন ক্লাস


(শিক্ষক/শিক্ষিকাদের অনুরোধ,রম্য তার আড়ালে দেখুন।)


রবিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনে সকাল বেলা রাসু বাবুর ঘুম ভাঙতেই চায় না। তাড়াতাড়ি নাকে মুখে গুজে অফিসে দৌড়ায়।

     কিন্তু রবিবার রাসু বাবু অন্য মুডে থাকেন।খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিজের চা নিজে বানিয়ে খেয়ে তাড়াতাড়ি সপ্তাহের বাজার করে আসেন ।তার পর ছাদ বাগানের পরিচর্যা ,ঘরদোর পরিষ্কার করে স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে ১১ টার ভিতর বেরিয়ে পড়েন।

     না, রাসু সেন কে কোনো শত্রু ও বলবে না যে গৃহিণী বা সন্তানদের সঙ্গ দেন না।প্রয়োজন থাকলে ওই রবিবারের দিনটাও ঘরের কাজে থাকেন।স্ত্রীর সাথে থাকেন। 

     এই রাসু সেন ওরফে রাশভারী সেন মহাশয় আদতে কোনরকম রাশভারী নন বরঞ্চ ভীষণ হাসিখুশি সরল মানুষ।তবে উনি নাকি জন্মের পর অনেকদিন হাসেন নি তাই রাসু বাবুর নাম ওনার পিসি রাশভারী রেখেছিলেন।রাশভারী বাবু সংক্ষেপে এখন রাসু বাবু নামে পরিচিত। 

প্রতি রবিবার এই রাশভারী সেন তার ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে একটু গাল গপ্পো করার জন্য তাদের এক পরিচিত ঠেক এ গিয়ে বসেন।সেখানে রাশভারী বাবুদের একটা গ্রুপ আছে। উনিই মধ্যমণি।

ওই আড্ডাতে শিক্ষক ,ব্যাংকার, প্রাক্তন ফৌজি সবাই থাকেন। আট দশ জনের গ্রুপ।আড্ডাতে জুতো সেলাই থেকে চন্ডী পাঠের মহড়া হতে থাকে।

আজ এই আড্ডার আসরে রাসু বাবুর উপর  বিপুল আর সুজন  খুব রেগে গেছেন।আমি ,অমিত আর স্বরূপ দেখে যাচ্ছি।কিন্তু মিটাবার কোনো চেষ্টায় নেই।চলুক। বলা বাহুল্য এই রাশভারী বাবু আমাদের সবার থেকে বছর পাঁচেকের বড়।আমরা সবাই রাসু দা বলি।

কথা প্রসঙ্গে রাসু দা বলেছেন, যে সব শিক্ষক শিক্ষিকারা সাত মাস ধরে ছুটি উপভোগ করছেন।

কি মজা ওনাদের । কোনো কাজ নেই,

খাও দাও আর মজা করো।

ব্যাস যায় কোথায়? পেশায় শিক্ষক বিপুল আর সুজন তীব্র প্রতিবাদ করে বলছে এর বিহিত চাই।রাসু দার এমন বলার কারণ কি? আমরা কি ইচ্ছা করে স্কুলে যাই না!!সরকার বাহাদুর করোনা র কারণে আমাদের ছুটি দিয়েছেন।তাই বলে রাসু দা এভাবে কেন বলবেন?


আমাদের সাক্ষ্য মানছে।আমাদের মধ্যে আবার অমিত খুব শান্ত কিন্তু এক্কেবারে ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড। 


এই যে সাত মাস ধরে সরকারি কোষাগার থেকে এনারা মাইনে নিচ্ছেন ?কি করছে?

স্বরূপ ফোরণ কাটছে বলছে মাসে একদিন গিয়ে আলু চাল দিচ্ছে তো!!!

রাশ ভারী বাবু এই শুনে প্রবল উদ্যমে বলে চলেছেন,এই যে এত সরকারি দপ্তরে কর্মী নেই,সরকার এদের সেখানে কেনো এটাচড করবেন না,সেখানেও তো কিছু কাজ করতে পারতেন। তাতে দেশের কাজ হতো ,সমাজের উন্নতি হোত।এই সাত মাস ধরে সব খেয়ে খেয়ে ওজন বাড়িয়ে চলেছে।দেখ!! বিপুল সুজন তোদের ও ওজন বেড়েছে ।আমি অমিত আর স্বরূপ বলছি হা রাসু দা ঠিক বলেছে তোরা তো অনলাইনে ক্লাস ও নিচ্ছিস না। দেখ ,প্রাইভেট স্কুলের টিচার রা কত সুন্দর অন লাইন ক্লাস ,পরীক্ষা নিচ্ছেন।আর তোরা এই আড্ডা ,ধোয়া আর চায়ের পর চা খাচ্ছিস।


আমি রাসুদা কে সাপোর্ট করে বললাম সত্যি তো আগে ক্লাস টেস্ট এ আমার ছেলে ২০ তে ১১/১২ পেত ইদানিং ২০ তে ১৯/২০ পাচ্ছে। বই রেফার করে এক্সাম দিচ্ছে,স্নাতকোত্তর বাচ্চাদের মত।এখনই বই রেফার করে কিভাবে পরীক্ষা পাস করা যায় তা সহজেই বুঝে যাচ্ছে!!!

এতে তো বাচ্চাদের উন্নতি হচ্ছে!!!শিক্ষার মান কত উচুতে পৌঁছে গেছে!!!

রাসু দা বলছে ওনার ছেলে তো সকাল ৯টা থেকে ক্লাস করার জন্য ফোন নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করছে আর দের টা তে বেরোচ্ছে। ক্লাসের মধ্যে ১৫মিনিটের ব্রেক এও ঘর থেকে আসছে না।

তখন নাকি গ্রুপ ডিসকাশন করে whatsapp এ বন্ধুদের সাথে।

রাসু দা বলছে এই জন্য সবাই প্রাইভেট স্কুলে ছেলে মেয়েদের ভর্তি করছে।

দেখো রাসু দা আমরাও চাই পড়াতে,প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রী আমাদের সন্তান সম।কিন্তু পরিকাঠামো আর সদিচ্ছার অভাব আমাদের আছে।আমি আর বিপুল নিতে চাইলেও পারি না।যদিও কেউ ফোন করে তাদের বলে দি, 

বাংলা স্কুলের উচু ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীদের প্রতিটি বিষয়ের উপর কোশ্চেন উত্তর সব করে ফোন এ দিছি এ ছাড়া আর কি করতে পারি রাসু দা?


দেখ ইচ্ছা করলে তোরাও করতে পারিস,মানছি সবার কাছে স্মার্ট ফোন নেই কিন্তু কিছু ছেলে মেয়ে র তো আছে ,তারা কেনো তোদের হেল্প পাবে না।তারাও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।কেনো এমন অসামঞ্জস্য?

প্রাইভেট স্কুল এর পরিচালন কমিটি যদি অন লাইনে ক্লাস করাতে পারে ,তোরা কেনো পারবি না?

না এর উত্তর বিপুল সুজন বা আমাদের কারুর কাছে নেই তাই আমরা চুপ করে গেলাম।

আর আমাদের রাসু দা ঘনও ঘন সিগারেট এ টান মেরে বলছে আমাদের উন্নতি নাই।আমাদের কিচ্ছু হবে না।

আমাদের ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড অমিত রাসু দা কে জিজ্ঞাসা করলো রাসু দা তোমার ছেলে ফোন এ পড়াশুনাই করে তো নাকি !!!না গেম খেলে ,ভিডিও দেখে!!!এটা কিন্তু একটু দেখো!!!

এইভাবে ওর হাতে ফোন ছেড়ে দিও না।শুধু পড়াশুনা করলে ঠিক আছে কিন্তু ফোন এমনি এক জিনিস যে এর প্রলোভন থেকে দূরে আসা খুব কঠিন।

সময় আছে আমরা সবাই সজাগ হই।প্রয়োজনের অধিক ফোন বাচ্চাদের হাতে যেন না দি। কারণ আজকের দিনে ফোন ব্যাধি না ব্যাধির উপসম আমরা কেউ জানি না!!

তাই আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।বাচ্চাদের স্বার্থে ,তাদের ভবিষ্যত এর স্বার্থে।