#বিভাগ_কবিতা#শিরোনাম_আমি জুঁই বলছি#কলমে_মহুয়া ব্যানার্জী28/9/2020
সেদিনও শরতের আকাশ ছিল নির্মল।তুই পরেছিলিস ঐ আকাশের মতো নীল রঙের পাঞ্জাবীটা।আর আমি..... মায়ের সেই কাঁচা হলুদ রঙের শাড়িটা।
মনে আছে..... তোর?
অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে দিতে তু…
#বিভাগ_কবিতা
#শিরোনাম_আমি জুঁই বলছি
#কলমে_মহুয়া ব্যানার্জী
28/9/2020
সেদিনও শরতের আকাশ ছিল নির্মল।
তুই পরেছিলিস ঐ আকাশের মতো নীল রঙের পাঞ্জাবীটা।
আর আমি..... মায়ের সেই কাঁচা হলুদ রঙের শাড়িটা।
মনে আছে..... তোর?
অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে দিতে তুই যে আমাকে দেখছিলিস সেটা অমি খেয়াল করেছিলাম।
আমিও যে হ্যাংলার মতো দেখছিলাম তোকে সেটা অস্বীকার করি কি করে।
তোকে ঐ পাঞ্জাবী টাতে এত ভালো লাগছিল.....
আমি চোখ ফেরাতে পারিনি সেদিন।
মনে আছে..... তোর?
অঞ্জলি শেষে তুই ডেকে আমাকে বলেছিলিস... "নৌকা দেখতে যাবি জুঁই?"
তোর কথা ফেলতে পারিনি সেদিন।
তাই সবার চোখের আড়ালে তোর সঙ্গে নৌকা দেখতে গিয়েছিলাম মেঠো পথ ধরে গ্রাম্য মজে যাওয়া নদীর তীরে।
নদীর দুধারে ফুটে ছিল কাশফুলের রাশি,নদীর শোভা বাড়চ্ছিল নীল পদ্ম।নদীর বুকে ভেসে চলছিল ডিঙি নৌকা।
আমি হা করে নৌকা দেখছিলাম।
শহুরে জীবনে যা ছিল আমার একেবারেই অদেখা।
আর সেই মুহূর্তে তুই আমার হাতটা ধরে বলেছিলিস....
"ভালোবাসবি আমাকে?"
তোর মুখে ভালোবাসার কথা শুনে আমার মুখটা লজ্জায় রাঙা হয়ে গিয়েছিল।মনে মনে যদিও এক চরম আনন্দের ঝড় বয়ে গিয়েছিল।
মাথা নীচু করে শুধু সম্মতি জানিয়েছিলাম তোর কথায়।
তোর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারিনি সেদিন।
মনে আছে....তোর?
দ্বাদশীর দিন যখন কলকাতায় ফেরার প্রস্তুতি চলছে আমাদের.....
তুই জানলা দিয়ে চুপি চুপি আমাকে ডেকে আমার হাতে হাত রেখে বলেছিলিস...
"কলকাতায় গিয়ে আমাকে ভুলে যাবি নাতো জুঁই?"
তোর চোখের কোনে জল টাকে তুই আড়াল করতে পারিসনি সেদিন....
মনে আছে...তোর?
আমি সারাটা রাস্তা খুব কেঁদেছিলাম।
তারপর দীর্ঘ দশ বছর কেটে গেছে......
পড়া শেষ করে চাকরি সূত্রে তুই এখন সাহেবদের দেশে।
আর আমি কলকাতার একটি স্কুলে বাংলা পড়াই।
প্রকৃতির নিয়মে আবার সেই শরতের আকাশে পেঁজা মেঘের আনাগোনা।
দশ বছর পর তোর এবার গ্রামে ফেরার কথা মায়ের আগমনে।
আমিও এসেছি প্রথাগত নিয়ম মেনে।
আজ আবার অষ্টমী.....আজ আমি সেজেছি সেই কাঁচা হলুদ রঙের শাড়িতে।মাথায় দিয়েছি একফালি জুঁই এর মালা। জুঁই ফুল তোর প্রিয়। আমার নামটাও জুঁই বলে তোর খুব ভালোলাগে বলেছিলিস তুই।
মায়ের সামনে দাঁড়িয়েছি পুষ্পাঞ্জলীর ফুল হাতে।
মনের মধ্যে চলেছে কি যেন এক তোলপাড়।
হঠাৎ পিছন থেকে একগুচ্ছ পদ্মফুল হাতে কে একজন এগিয়ে এলো মায়ের দিকে।
আমি পাশ ফিরে দেখলাম নীল পাঞ্জাবীতে দাড়িয়ে এক সুপুরুষ ব্যক্তি।
সেই উজ্বল দুটি চোখ,মুখময় হাসি, যে হাসি ভোলা সম্ভব নয়।
দীর্ঘ এত বছর পরেও যার মুখের সেই কোমলতা যেন এতটুকু বদলায়নি।
কৈশোরের ছেলেমানুষির পুনরাবৃত্তি ঘটল সেদিন আবার।
নদীর ঘাটে গিয়ে আবার পুরনো ছন্দে আমার হাতটা ধরে বললি...
"আমার সাথে থাকবি জীবনের বাকি পথটায়?"
মাথা নেড়ে আমিও আবার সম্মতি জানালাম। এই দিনটার জন্যই হয়তো প্রতিক্ষারত ছিল সেই গ্রাম্য নদী, কাশফুল, নীল পদ্ম আর সেই ডিঙি নৌকা।
যারা সাক্ষী হয়ে রয়ে গেল দুটি ভালোবাসার।