Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকা দৈনিক সেরা সম্মাননা

অণুগল্প03/09/2020
রোহন
শিবাজী  সান্যাল
           রোহনের স্কুল থেকে ফেরার  সময় হল , দিশা নীচে গিয়ে ও বাস থেকে নামলে ওকে নিয়ে এল। বাড়িতে ঢুকেই ও ব্যাগ ফেলে ছুটে আগে ঠাকুমার কাছে গেল। প্রতিমা লেবুর সরবত ওর জন্য তৈরি  করে রেখেছিল , কোল…

 


অণুগল্প

03/09/2020


রোহন


শিবাজী  সান্যাল


           রোহনের স্কুল থেকে ফেরার  সময় হল , দিশা নীচে গিয়ে ও বাস থেকে নামলে ওকে নিয়ে এল। বাড়িতে ঢুকেই ও ব্যাগ ফেলে ছুটে আগে ঠাকুমার কাছে গেল। প্রতিমা লেবুর সরবত ওর জন্য তৈরি  করে রেখেছিল , কোলে বসিয়ে খাওয়াতে লাগল। রোহন ভীষণ ঠাকুমার নেওটা। ওর খাওয়া  , স্নান , পড়া সব ঠাকুমার কাছে।  এতে দিশার ভালই হয়েছে , বাড়ির  অন্য কাজে সময় দিতে পারে। সমস্যা শুধু প্রতিমা ওকে একেবারে পুরোনো দিনের মত করে মানুষ করছে , সুপের বদলে ঘন্ট , চচ্চরী খাওয়াচ্ছে , ঠাকুমার ঝুলির গল্প বলছে , ইংরেজীর জায়গায় সবসময় বাংলা কথা শিখছে।  ওর ভয় রোহনের গোড়াটাই এভাবে দুর্বল না হয় পড়ে। কয়েকবার দিশা বলেছে , “ মা আপনি ওকে এযুগের যেমন দরকার সেসব শেখান , নইলে ও সবার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে  পড়বে। ” কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় নি, প্রতিমার মতে ভীত শক্ত হতে হবে , তাহলে তার ওপর সব কিছু গড়ে তোলা হম্ভব। 

             দিশা বিষয়টি সঞ্জয়কেও বলেছে , “ দেখ , তুমি মাকে একটু বোঝাও ।  নইলে আমাদের রোহন কিন্তু সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না। এটা আলিপুরদুয়ার নয় , মুম্বাই শহর , এখানে টিকে থাকতে অন্যভাবে তৈরি  হতে হবে। ” সঞ্জয় বলেছে “ মা যা করছে করতে দাও , তাতে ওর কোনো ক্ষতি হবে না , বাকি দিকগুলো তুমি দেখে নাও । ” এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দিশার সঙ্গে প্রতিমার একটু ব্যবধানটাও বেড়েছে। আগে রোজ কি রান্না হবে জিজ্ঞেস করত , আজকাল আর করে না । 


             কদিন থেকে রোহনের শরীর ভাল যাচ্ছে না।  কাশি যেন বেড়েই চলেছে , সঙ্গে সর্দি । প্রতিমা কিছু টোটকা করতে বলেছিল দিশা তা করতে দেয় নি। ডাক্তার দেখিয়ে  ওষুধ  এসেছে , সময়মত তা খাওয়ানো হচ্ছে কিন্তু তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। টেলিফোনে ডাক্তারকে বলাতে কাল কিছু টেস্ট করাতে বলল।  বাড়িতে সবাই অস্থির হয়ে পড়ল। রাতে শোবার  পর রোহনের কাশি নিয়ে দিশা আর সঞ্জয় কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। কাশির চোটে রোহন বমির উপক্রম ।  চোখ লাল হয়ে গেছে , কপালে ঘাম ।  ওষুধ  দিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। রাত দুটো , রোহনের অবস্থা দেখে ওরা দুজন অস্থির হয়ে পড়ল ।  দিশা এবার ছুটে প্রতিমার ঘরে গিয়ে ডাকল , “ মা আপনি এক্ষুণি আসুন , রোহনের কাশি থামছে না।”  প্রতিমা তাড়াতাড়ি গিয়ে ওকে কোলে তুলে বুকে চেপে ধরল , তারপর দিশাকে বলল , “ তুমি শিগগির আদার রস কর , সঙ্গে মধু আর দেখ বারান্দায় টবে তুলসী গাছ আছে , তুলসী পাতা তুলে মিশিয়ে নিয়ে এস। ” সেই রস দিশা নিয়ে এলে রোহনকে খাওয়াতে ওর কাশির কিছুটা কমল।  প্রতিমা বলল , “ এবার একটি পাত্রে সরষের তেল আর কালো জিরে মিলিয়ে গরম করে আনো। ” সেই তেল দিয়ে প্রতিমা রোহনের বুকে পিঠে মালিশ করে দিল।  আস্তে আস্তে কাশির উপশম হল,  একসময় রোহন ঠাকুমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ল। সবার স্বস্তি এল। 

           পরদিন প্রতিমা একটি বই পড়ছিল , দিশা কাছে এসে বলল , “ মা , রুইমাছ আছে , কিভাবে করব ? ” প্রতিমা বলল , “ সঞ্জয় সরষে দিয়ে ভালবাসে , তাই কর। আর দাদুসোনাকে যদি তোমরা সুপ খাওয়াতে চাও , তাও কর। এসময় ওর ভাল লাগবে । ” কাল অনেক ধকল গেছে , রোহন এখনও ঘুমোচ্ছে।