Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

অস্তিত্বের অন্তরালে অমল ভট্টাচার্য্য ------------------------------'
সাদামাটা একটা হোটেলে খেতে বসেই অপর্ণার দৃষ্টি চলে গেল এক যুবকের উপর।যুবক থালার উপর উপুড় হয়ে একথালা ভাত,আর খানকয়েক রুটি ডাল ও তরকারি সহযোগে একমনে খেয়ে চলেছে।অ…

 


অস্তিত্বের অন্তরালে 

অমল ভট্টাচার্য্য 

------------------------------'


সাদামাটা একটা হোটেলে খেতে বসেই অপর্ণার দৃষ্টি চলে গেল এক যুবকের উপর।

যুবক থালার উপর উপুড় হয়ে একথালা ভাত,আর খানকয়েক রুটি ডাল ও তরকারি সহযোগে একমনে খেয়ে চলেছে।

অপর্ণা ছেলেটার খাওয়া দেখে ঘৃণার ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকালো ও মুখ বেঁকালো। 


এই দৃশ্য অরুণের নজরে পড়তেই অরুণ তড়িৎ গতিতে ছেলেটার কাছে গিয়ে কিছু কথা বলে ফিরে এলো অপর্ণার কাছে।


তুমি চেনো ছেলেটাকে  ?


আগে তুমি বলো যে ছেলেটার খাওয়া দেখে তুমি ওরকম করলে কেন ?


করবো না, ওর পোষাক দেখেছ , কুঁচকানো 

জামা, ইস্ত্রি পর্যন্ত করেনি।  খাবি খা, ধীরেসুস্থে খা, ওর খাবার তো কেউ কেড়ে নিচ্ছে না।  ম্যানার জানে না।  


হা হা হা। হেসে ওঠে অরুণ।  

বলে, ওকে আমি, তুমি সবাই চিনি। 

 ওর খাওয়ার ধরন দেখে অবজ্ঞা আর ঘৃণায় তোমার কাঁধ ঝাঁকাচ্ছিলে,

তুমি জানোনা, আজ ছয় মাস পর ছেলেটা টাটকা ভাত ,রুটি ,ডাল আর তরকারি পেয়েছে। 


তুমি জানোনা,  ওর পোষাক ইস্ত্রি করতে যে সময় লাগবে সেই সময়ের মধ্যে শত্রুপক্ষের গুলিতে অনেকগুলো জীবন ঝরে পড়তে পারে। 

তুমি,  আমি যখন ঠান্ডায় রাতে কম্বলটা টেনে নিয়ে আরও আরাম করে শুই তখন গভীর রাতের হিম করা ঠান্ডায় শ্যেনদৃষ্টিতে ও সীমা পাহাড়া দেয়। 


গ্রীষ্মকালে যখন তুমি,  আমি ঠান্ডা ঘরে বিশ্রাম করি তখন ও মোটা পোষাকের সাথে দুই কেজি ওজনের বুট পায়ে আর কাঁধে পাঁচ কেজি ওজনের বন্দুক আর ম্যাগাজিন সহ আমাদের সীমা পাহাড়া দেয়। 


জানো অপর্ণা,  ঐ ছেলেটা আমার দেশের সৈনিক। ওদের হৃদয়ের একদিকে দেশ অন্যদিকে পরিবার।  


দেশের সেবায় নিয়োজিত ওদের জীবন, পরিবারের উপর কর্তব্যে নিয়োজিত ওদের মন। 


যেটুকু মায়না পায়, ওরা পাঠিয়ে দেয় পরিবারের জন্য।  দেশের প্রতি এতটাই ওরা দায়িত্বশীল যে,

 পরিবারের নিকটাত্মীয়ের বিয়োগেও ওরা কর্তব্য থেকে একচুলও সরে না। বিয়োগব্যাথাতেও ওদের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না।  ওরা আমার, তোমার সৈনিক। 


জানো অপর্ণা,  ওদের জন্যই আমরা নিশ্চিন্তে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারি, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারি, নেতাদের বক্তব্য শুনতে পারি। 


আসলে ওদের জন্যই আমরা আমাদের আমিত্বের জয়গান গাইতে পারি। ওরা সৈনিক, ওদের জন্যই টিকে আছে আমাদের আমিত্বের অস্তিত্ব। 

----------------------------------------------------------