#বিভাগ_গল্প
#ঘরে_ঘরে_দুর্গা
#মধুপর্ণা_ব্যানার্জী
মুখুজ্জেদের বাড়ির দুর্গাপূজা বলে কথা, চারিদিকে শুধু হৈচৈ আনন্দ আর মজা। বছরের এই একটা সময়ে বড়,মেজ,সেজ,ছোট সব তরফের পরিবারের সদস্যদের মিলনোৎসব এই পুজোর সময়। সারাবছর কাজের জন্য সবাই …
#বিভাগ_গল্প
#ঘরে_ঘরে_দুর্গা
#মধুপর্ণা_ব্যানার্জী
মুখুজ্জেদের বাড়ির দুর্গাপূজা বলে কথা, চারিদিকে শুধু হৈচৈ আনন্দ আর মজা। বছরের এই একটা সময়ে বড়,মেজ,সেজ,ছোট সব তরফের পরিবারের সদস্যদের মিলনোৎসব এই পুজোর সময়। সারাবছর কাজের জন্য সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। এই সময়ে সবাই চেষ্টা করে একসাথে থাকার, যারা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চলে গেছে একেকবার তো তারাও আসেন।
এই যেমন এইবছর সেজ তরফের ছোট ছেলে অমূল্য সপরিবারে আমেরিকা থেকে এসেছে। তাঁর পনের বছরের যমজ মেয়ে অজন্তা আর ইলোরা , এই প্রথম দেশের বাড়ির দুর্গাপূজা উপলক্ষে এসে একেবারে মুগ্ধ। পুরোনো দিনের ঠাকুরদালান, বাড়ির মহিলাদের সাবেকি সাজ, গহনা। ঢাকিদের ঢাক বাজানোর সাথে নাচ,তার সাথে নানা ধরনের খাওয়ার আয়োজন।
তবে এতো আনন্দের মধ্যে তাদের পোশাক নিয়ে কিছু মন্তব্য কানে আসে, মেয়েদুটি বাঙলা বলতে, বুঝতে পারলেও সবকথার মানে বুঝতে পারে না। অমূল্যর স্ত্রী সুপ্রিয়া সবকিছুই বুঝতে পারলেন। সমস্যা বেড়ে গিয়ে যাতে পুজোর আনন্দ পন্ড না করে দেয়, সেই জন্য মেয়েদের দেশিয় পোশাক পরতে বললেন।
ছোট তরফের একমাত্র নাতির কিছু বন্ধুবান্ধব শহর থেকে এসেছে, তাদের হাবভাব দেখে ভালো লাগেনি তাঁর। অজন্তা খুব শান্ত তাই চুপচাপ মায়ের কথা মেনে নিলেও, ইলোরা বলে...
“মাম, আমি ইন্ডিয়ান ড্রেস পরে নেব, কিন্তু আমাদের ওয়েস্টার্ন ড্রেসের মধ্যে কিছু খারাপ তো নেই। ছেলেদের স্বভাব খারাপ বলে আমরা নিজেদের ঢেকে রাখবো,এই ব্যাপারটা একদম মানতে রাজি নয়। তবুও শুধু তোমার জন্য আমি সালোয়ার কামিজ পরছি।“
সুপ্রিয়া বুঝতে পারলেন,মেয়ে এখানে কিছু না বললেও আমেরিকায় ফিরে তুলকালাম কাণ্ড করবে। আপাতত শান্তি স্থাপন করে তিনি অন্যদিকে পুজোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
কিন্তু শান্তিটা ছিল সাময়িক, সেদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই খুব হৈচৈ শুনে বুকের ভেতর কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়েছিল, মেয়েদের কোথাও দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ডপে পৌঁছে গিয়ে যা দেখলেন,তাতে তাঁর বাকরুদ্ধ হয়ে যায়...
অজন্তা আর ইলোরা চারটি ছেলেকে মেরে ধরাশায়ী করে ফেলেছে। শহর থেকে আসা ছেলেগুলো নেশা করে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় তাদের দুজনের, এবং বাড়ির অন্যান্য মেয়েদের সাথে অশালীন ব্যবহার করে, তখন তাঁর দুই কন্যা এদের উচিত শিক্ষা দিয়ে দিয়েছে। অজন্তা আর ইলোরা দুজনেই ক্যারাটের ব্ল্যাক বেল্ট ,সুপ্রিয়া আর অমূল্য দুজনেই সন্তানদের কৃতিত্বে গর্ব অনুভব করেন।
যাঁরা মেয়েদের ছোট পোশাক নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তাঁরাও এখন অসুরনাশিনী রূপ দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁদের মুখেই শোনা যাচ্ছে...
” যদি ঘরে ঘরে এইরকম দুর্গা জন্মায় , তাহলে কোথাও মেয়েদের সাথে আর অপরাধ হবে না।“
#সমাপ্ত