Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#গল্প_‌অপ্রাপ্তবয়স্ক_মা#কলমে_পিউ_হালদার_‌আশ                 05/04/2020              "আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে        আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে এই আকাশে "।     এত সহজে তো তোমার মুক্তি নেই মা, এখন ও তো অনেক…

 


#গল্প_‌অপ্রাপ্তবয়স্ক_মা

#কলমে_পিউ_হালদার_‌আশ

                 05/04/2020

              "আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে

        আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে এই আকাশে "।

     এত সহজে তো তোমার মুক্তি নেই মা, এখন ও তো অনেক কিছু করতে হবে তোমাকে, সবে তো জীবন শুরু মা তোমার। 

    ধুর কি সব বলিস না তুই? বুঝতেও পারি না। কখন এলি? 

 এই তো একটু আগে, তোমার গান শুনছিলাম। আচ্ছা মা তুমি কি ছোট থেকেই গান শিখেছো? একটু বলো না মা, আজ তোমার গল্প শুনতে খুব ইচ্ছা করছে,, বলবে মা? 

    আমার গল্প?? আমার আবার কি গল্প আছে রে? কত ছোট বয়সে বিয়ছ হয়ে এসেছি, সেই থেকেই তো শুরু। তবে কি জানিস তো.......... দাঁড়া তোর জন্য একটু খাবার নিয়ে আসি,, তারপর বলছি। 

      আচ্ছা ঠিক আছে মা। 

*******************************************************

       ১৫বছর বয়সে এই মজুমদার পরিবারে বৌ হয়ে আসি, ক্লাস নাইনে পড়তাম, খুব ভালো ছিলাম জানিস পড়াশুনায়, কিন্তু আমরা অনেক গুলো বোন বলে বাবা ভালো পাত্র পেয়ে বিয়ে দিয়ে দিলেন। গ্রামের মেয়ে হলে যা হয়। 

       আমি শ্রীমতী কাননবালা মজুমদার। মজুমদার বাড়ির বড় বৌ। হ্যাঁ আমার অনেক ছোট বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, কিন্তু আমি অশিক্ষিত ন‌ই।আমার শ্বশুর বাড়ি সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত পরিবার। আমার স্বামী আর শ্বশুর মশাই এর ইচ্ছায় আমি বিয়ের একবছর পর আবার পড়াশুনা শুরু করি, প্রাইভেটে মাধ্যমিক দিয়ে ফার্স্ট ডিভিসনে পাশ করি। তারপর উচ্চমাধ্যমিক দিলাম,খুব ভালো রেজাল্ট। 

       তারপর,, ও মা বলোনা,, থামলে কেনো?? 

     বলছি বাবা বলছি...... তারপর তো তুই এলি, তোকে বড় করতে হবে, মানুষের মতো মানুষ হতে হবে, এই ভেবে পড়াশুনা দিলাম শিকেয় তুলে।একদিন তোর দাদুভাই আর ঠাম্মি আমাকে ওনাদের ঘরে ডাকলেন। হ্যাঁ একটা কথা তো বলিনি তোকে, আমার এই পড়াশুনার জন্য তোর বাবা, দাদুভাই আর ঠাম্মির অবদান অনেক, সত্যি কথা বলতে কি কাজ তো কিছু করতে হোতো না, সব‌ই ঠাকুর চাকর ছিল, আমি শুধু দিনরাত পড়াশুনা করতাম। 

        তারপর বলো দাদুভাই আর ঠাম্মি কি বললো তোমাকে?? 

 হ্যাঁ বলছি.....তোর দাদুভাই কে তো তোর মনে নেই , কম কথা বলেন অথচ যেটুক বলেন কত স্নেহ মাখা ভাষায় বলেন। তো উনি আমাকে বললেন... ....

     বৌমা,,,, কি শুনছি?? তুমি নাকি আর পড়াশুনা করবে না বলেছো?? 

   না বাবা, তা নয়,, আসলে হৈমন্তী, আপনার নাতনী তো খুব ছোট্ট,, ওকে তো বড় করতে হবে, মানুষ করতে হবে, আমি কি করে এখন পড়াশুনা করবো? তাই............ 

    কেনো বৌমা, দিদিভাই কে মানুষ করতে গেলে তোমাকে পড়াশুনা কেনো বন্ধ করতে হবে?? তোমার মা আছেন, আমি আছি, একটা লোক রেখে দেবো,, তুমি পড়াশুনা ছেড়ো না মা,, যাও ঘরে যাও, আমি খোকা কে বলবো কলেজে ভর্তির ফর্ম এনে দিতে। 

     আমার তো ওনার ওপর কিছু বলার ক্ষমতা নেই,, এত ভালোবাসতেন আর স্নেহ করতেন যা আমি আমার বাবার থেকে কোনোদিন পাইনি। 

     আবার শুরু করলাম পড়াশুনা, কলেজে যাওয়া,নতুন নতুন কত বন্ধু, খুব ভালো লাগতো জানিস, মেয়েদের কলেজ।আমাদের একটা গ্রুপ ছিল পাঁচ বন্ধুর, সুমনা, সোমা, আমি, মধুমিতা আর শ্রী। মধুমিতা হয়ে গেলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘরে এসেই তোকে নিয়ে আদর করতাম, এত লক্ষ্মী মেয়ে তুই কোনোদিন ও ঠাম্মি কে আর মালতী মাসি কে জ্বালাস নি। 

      তারপর দেখতে দেখতে আমি ইতিহাস নিয়ে বি .এ পাশ করি, যদিও এখন কার দিনে বি. এ পাশ টা কিচ্ছুই নয়, ঘরে ঘরে লোকে বি. এ পাশ করে বসে আছে। 

       তারপর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলাম, রাত জেগে পড়ে পড়ে মাথায় হঠাৎ যন্ত্রণা শুরু হোলো, অনেক ডাক্তার দেখিয়ে, চিকিৎসা করে তারপর ঠিক হলাম। ব্যাস পড়াশুনায় ইতি টানলাম। 

        তারপর তোকে বড় করা, মানুষ করা, লেখাপড়া করানো, তোর বাবা তো ব্যবসার কাজে বাইরে বাইরে থাকতেন বছরের অর্ধেক টা সময়, তাই তোর সব দায়িত্ব ছিল আমার। দাদুভাই, ঠাম্মির ও বয়স হয়েছে, ওনাদের দেখতে হোতো, ওনারা অনেক করেছেন আমার জন্য, আমি তো তার এক কণাও করতে পারি নি। হঠাৎ তোর দাদুভাই অসুস্থ হয়ে পড়লেন, দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে উনি ও চলে গেলেন, তোর ঠাম্মি ও যেনো আসতে আসতে কেমন হয়ে গেলেন, তখন তো তুই খুব ছোটো,ওনার সমস্ত দায়িত্ব আমি নিজের কাঁধে তুলে নিলাম। গল্প করা, একসাথে টি. ভি দ্যাখা,বিকালে তোকে আর তোর ঠাম্মি কে নিয়ে পার্কে যেতাম, একসাথে আইসক্রিম খেতাম। এইভাবে ওনাকে সুস্থ করে তুলতে আমার কয়েক বছর সময় লেগেছিল। 

        তারপর তুই মাধ্যমিক দেওয়া পর্যন্ত আমি ঘরেই ছিলাম, আমি যে পড়াশুনা করেছিলাম সেটা তোকে পড়াতে খুব কাজে দিয়েছে রে। তারপর তো সব তুই জানিস। 

        হ্যাঁ তারপর তোমাকে বাবাই একটা সেলাই মেশিন কিনে দিলো, তুমি পাড়ার বেলা জেঠিমার কাছ থেকে সেলাই শিখলে, কি দারুণ তোমার হাতের কাজ মা। সবাই খুব নাম করতে লাগলো তোমার কাজের। আমার খুব গর্ব হয় জানো মা তোমাকে নিয়ে।সেই কত ছোট বয়সে বিয়ে হয়েছে তোমার। লোকে বলে না কি ছোট বয়সে বিয়ে হয় অশিক্ষিত দের। কিন্তু তুমি তো যথেষ্ট শিক্ষিত হয়েছো মা, সবটাই তো বিয়ের পর, বি. এ পাশ করা, তারপর সেলাই শিখে নিজের দোকান খোলা। এখন কত কাস্টমার তোমার দোকানে সারাবছর!!! সংসার সামলে, বাবাই, আমি, ঠাম্মিকে দেখাশোনা করে, সেলাই করে ,দোকান সামলেও আবার তুমি গানের রেওয়াজ করো। 

       হ্যাঁ আমার মা,, সর্বগুণ সম্পন্না এক মহিলা। অনেক অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে তারপর একের পর এক ধাপ পেরিয়ে আজ মা এই জায়গায়। আমার বন্ধুরা তো আমার মায়ের গুণমুগ্ধ ভক্ত, সবাই আমার মা কে মা বলে ডাকে। এতে আমার মা খুব খুশি হয়।মা বলে আমার পেটের সন্তান একটি হলে কি হবে আমার যে অনেক অনেক সন্তান। আমার মা খুব সুন্দর রান্না করে। গ্রামের অশিক্ষিত সরল মেয়েটি এখন শহরের কায়দায় বিরিয়ানী, পোলাও, চিকেন চাঁপ ও রাধতে পারে। আমার বন্ধুরা প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে আসে তাদের মায়ের রান্না খেতে। 

               শুধু আমার বন্ধুরা কেনো আমাদের পাড়ায় যত বয়স্ক মানুষ আছে, সবাই আমার মা কে মা বলে। আমি খুব হিংসা করতাম, বলতাম সবাই কেনো তোমাকে মা বলবে? মা তখন  বলে......   

        ওরে আমার তো অনেক সৌভাগ্য রে, সবাই আমাকে মা বলে, মা ডাক যে কত মধুর আর কত সম্মানের, সবার কি সেই কপাল হয় রে?? আমার পরম সৌভাগ্য যে এই বিশ্ব পৃথিবীতে আমার একটা নয় অসংখ্য সন্তান  আট থেকে আশি সবার মা আমি। 

            তারপর মা একটা হোম খোলে, বাবার অনুমতি নিয়ে, সেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব বয়সের মানুষ আসে, সবাই তাদের মনের কথা বলে, কেউ ভালো রান্না করে নিয়ে আসে, কেউ ভালো গান করে, আমার ঠাম্মি ও থাকে ওদের সাথে,, সারাদিনের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা মা ই করে। ওরা ও সবাই মা কে মা বলে ডাকে। 

         এখন আবার কদিন হোলো মা দেখি একটা ডায়েরী তে কি সব লেখে, একদিন মা দোকানে ছিল সেই সময় আমি ডায়েরী টা পড়ে ফেলি। কি সুন্দর সুন্দর ছোট ছোট কবিতা, গল্পে ডায়েরীর পাতা গুলো ভর্তি, আর কি দারুণ হাতের লেখা। 

      আমি বাবা কে বলে মা কে একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিলাম।ফেসবুক খুলে বললাম মা তুমি এখানে লেখো তোমার গল্প গুলো। মা কিছুতেই রাজি হবে না। অনেক বলার পর একটা গল্প লেখে মা, আর অনেক লাইক কমেন্ট পেয়ে খুশিতে মায়ের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে যায়। সেই থেকে শুরু মায়ের লেখা। 

         এখন। অনেক গুলো গ্রুপের সাথে যুক্ত আছে আমার মা। সেখানে গল্প, কবিতা লিখে ভালোই সুনাম অর্জন করছে। 

  আমি গর্বিত আমার মায়ের জন্য। এমন একজনকে মা পেয়ে আমি ধন্য। আর ও বেশী গর্বিত যে আমার মাকে আমি ছাড়াও অসংখ্য মানুষ মা বলে ডাকে। আমার মা অনেক সন্তানের জননী। 

       এই হোলো আমার মায়ের কাহিনী। 

(নিছক‌ই গল্প এটা, আমার মনের কল্পনা প্রসূত, ছোট বয়সে বিয়ে হলেই সে অশিক্ষিত হয় না বা তার জীবন সংসারের গন্ডিতে বাধা পড়ে শেষ হয়ে যায় না।মনের জোর আর ভালো মানুষের সান্নিধ্যে বিয়ের পরেও অনেক করা  যায় ।)