নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি, ২৯ অক্টোবর: বিমল গুরুঙ্গের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে উত্তাপ বাড়ছে। মোর্চার বিনয় তামাং,ও বিমল গুরুঙ গোষ্ঠীর অস্তীত্ব রক্ষার এই লড়াইকে কেন্দ্র করে পাহাড়কে কি আবার অশান্ত হবে, বাতাসে …
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি, ২৯ অক্টোবর: বিমল গুরুঙ্গের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে উত্তাপ বাড়ছে। মোর্চার বিনয় তামাং,ও বিমল গুরুঙ গোষ্ঠীর অস্তীত্ব রক্ষার এই লড়াইকে কেন্দ্র করে পাহাড়কে কি আবার অশান্ত হবে, বাতাসে বারুদের গন্ধ ভেসে বেড়াবে? উৎসবের আবহ ও করোনা আতঙ্ককে সরিয়ে এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে পাহাড় থেকে সমতল।
কেননা দীর্ঘ অজ্ঞাতবাসের পর বিমল গুরুঙ প্রকাশ্যে এসে তৃণমূলের সঙ্গে করে বিজেপি কে জবাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করতেই পাহাড়ে শুরু হয়েছে এই দুই গোষ্ঠীর শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। বুধবার কালিম্পঙে ও গরুবাথানে বিনয় তামাং গোষ্ঠীর মিছিল থেকে গোব্যাক বিমল গুরুঙ স্লোগান উঠেছে।
বিমল গুরুঙ্গের পাহাড়ে প্রত্যাবর্তন যে বিনয় তামাং গোষ্ঠী মেনে নেবে না তা গত রবিবারই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।
দীর্ঘদিন ধরে অন্তরালের পর প্রকাশ্যে এসেছে বিমল গুরুং। সম্প্রতি কলকাতায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছিলেন শীঘ্রই ফিরতে পারেন পাহাড়ে। বিমল গুরুংয়ের এই ঘোষণার পর থেকেই পাহাড়ে রাজনীতিতে উত্তরজনার পারদ চরতে শুরু করে। কয়েক আগে কালিম্পং বাজারে বিনয় তামাং ও অনিত থাপাকে হুংকার দিয়ে পোস্টারিং হয়েছিল। আর সেই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এবং পাহাড়ে শান্তির লক্ষ্যে এদিন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাং শিবিরের যুব মোর্চার কমিটির তরফে কালিম্পংয়ে মিছিলের আয়োজন করা হয়। কালিম্পংয়ের মেলা ময়দান থেকে সেই মিছিলটি শুরু করে সমগ্র শহর পরিক্রমা করে। গরুবাথানেও এদিন বিনয় তামাং গোষ্ঠী মিছিল করে। এই মিছিল থেকে বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে।
বিমল গুরুঙ্গের পাহাড়ে ফেরার প্রস্তুতি হিসেবে তাঁর অনুগামীরা শনিবার দার্জিলিংয়ের চকবাজারের কাছে বিমলের ছবি লাগানো মোর্চার পতাকা উড়িয়েছিলেন। ঠিক তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গত রবিবার বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে দার্জিলিংয়ের সোনাদায় মিছিলে করে বিনয় তামাং পন্থী মোর্চার যুব সংগঠন। এই মিছিল থেকেও বিমল গুরুঙ্গ গো ব্যাকে স্লোগানও ওঠে।
গতশনি ও রবিবারের এই দুটি ঘটনায় অনেকেই আবার পাহাড় অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন। এক্ষেত্রে তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার কী ভূমিকা নেয় তার উপর নির্ভর করছে পাহাড়ের ভবিষ্যৎ।
বিমল গুরুঙ্গ বিজেপি সঙ্গ ছেড়ে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার কথা ঘোষণা করে মমতা বন্দ্যোপাধায়কে ফের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাহলে বিনয় তামাং, অনিত থাপা গোষ্ঠীর মোর্চার সঙ্গে তৃণমূলের অবস্থান কি হবে? এই প্রশ্নকে সামরে রেখে পাহাড়ের রাজনীতিতে নানা সমীকরণ তৈরি হচ্ছে।
কেননা বিমল গুরুঙ্গ পাহাড়ে ফেরার পর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দখলের জন্য তিনি নেমে পড়বেন। তার অনুগামীরাও সক্রীয় হয়ে উঠবেন। সেক্ষেত্রে বিনয় তামাংদের পাহাড়ের কর্তৃত্ব হারানর আশঙ্কায় পড়তে হবে। তাঁরা যে কোনঠাসা হয়ে রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারেন সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না বিনয় তামাং শিবির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিনয় তামাং পন্থী মোর্চার এক প্রথম সারির নেতা জানিয়েছেন, সম্প্রতি মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের শিলিগুড়ি সফরেই তাঁরা এধরনের পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে যাওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ' প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বিনয় তামংয়ের জিটিএ-র অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী করণের প্রস্তাব খারিজ করে দেন তারপর আমরা বুঝে যাই পাহাড়ে রাজ্য সরকার আর আমাদের উপর এক তরফা ভরসা করতে চাইছে না। আমাদের কাছেও খবর ছিল, তৃণমূলের সঙ্গে বিমল গুরুঙ্গের কথাবার্তা চলছে। তাই আমরাও ঠিক করেছি যার জন্য পাহাড় অশান্ত হয়েছে তাঁর পাহাড়ে ফেরা কোনভাবেই সমর্থন করা হবে না।'
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, বিনয় তামাংরা কোনওভাবেই বিমল গুরুঙ্গের পাহাড়ে ওঠা ঠেকাতে পারবেন না। কেননা শাসকদলের সমর্থন নিয়েই বিমল গুরুঙ্গ পাহাড়ে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। সেক্ষেত্রে বিনয় তামাংরা প্রশাসনিক সহযোগিতা যে পাবেন না তা ধরেই নিচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। তারপরেও বিনয় তামাংরা বিমল গুরুঙ্গের পাহাড়ে ফেরা নিয়ে প্রতিরোধে যান তাহলে সঙ্ঘাত অনিবার্য। আর তার থেকেই আবার পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠতে পারো বলে তাদের আশঙ্কা। সেক্ষেতে জিএনএলএফ সহ পাহাড়ের অন্যান্য দলগুলি কী অবস্থান নেয় সেটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আর এই প্রেক্ষাপটে রাজ্যপালের আসন্ন দার্জিলিং সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।