রূপকথার গল্প ---------------------- লেখিকা-----শিপ্রা মুখার্জি
গল্প---- জাদুদণ্ড---- তারিখ 15-10-2020
জাহাজে করে আমীর আবদুল্লা চলেছে।প্রতি বছর বার হয় সমুদ্র যাত্রায়।উদ্দেশ্য বানিজ্য ।সমুদ্র ভালো বেসে ফেলেছে ।উজিরের ছেলে ।বিয়ের বয়…
রূপকথার গল্প
----------------------
লেখিকা-----শিপ্রা মুখার্জি
গল্প---- জাদুদণ্ড----
তারিখ 15-10-2020
জাহাজে করে আমীর আবদুল্লা চলেছে।প্রতি বছর
বার হয় সমুদ্র যাত্রায়।উদ্দেশ্য বানিজ্য ।সমুদ্র ভালো
বেসে ফেলেছে ।উজিরের ছেলে ।বিয়ের বয়স হলে ও পাত্রী জোগার হয়নি ।এরই মধ্যে বিদেশ থেকে
পত্র এসেছে এদেশের রাজার কাছে ।তাতে উল্লেখ
করা হয়েছে পিপ্পীলির রাজকন্যার জন্য পাত্র চাই ।
রাজা মশায় তার উজিরকে বললেন,"তোমার ছেলের
সাথে পিপ্পীলির রাজকন্যার বিয়ে দেবে?"
উজির এক কথায় রাজি ।আমীর আবদুল্লা সমুদ্র
যাত্রায় যাচ্ছে। অতত্রব এই সময়ে বিয়ে করে আসবে ।আবদুল্লা কে বিবাহের কথা বলতে সেও রাজি হয়ে গেল ।
যথারীতি আমীর আবদুল্লা সমুদ্র যাত্রায় রওনা
দিল।আগে পিপ্পীলি গিয়ে বিবাহ সেরে বাণিজ্যে
যাবে তা ভেবে ঠিক করলো ।জাহাজ চলছে তো চলছেই ।সমুদ্রের জলে কতো রকমের মাছ ,কতো রকমের প্রাণী দেখলো ।কোথাও গরু মুখী মাছ,
কোথাও উঠ মুখী মাছ ।দেখে চক্ষু ছানাবড়া ।জাহাজে এক বুড়ো র সংগে আলাপ হলো ।তাঁর
পাশে একখানা পাতলা ব্যাগ ।
দিনের আলো নিভে গেল ।একে একে সবাই খাবার বার করছে ।আমীর ও তার খাবার বার করলো।
তখন দেখলো পাশের ভদ্রলোক একটা ছড়ি ও সিল্কের চাদর বার করলো ।এবার আস্তে আস্তে
চাদর মুড়ি দিয়ে ছড়িটা ভেতরে ঢুকিয়ে বসে রইলো ।আমীর কান পেতে শুনতে লাগল,কি যেন বলছেন তিনি ।শেষের দুটো কথা ই কানে এল।তা হলো---"গোস্ত আরও চাওল" ।
তার মানে মাংস আর ভাত খাবে।আবদুল্লা
কিছু ই যেন শোনেনি এমন ভাবে খাবার খেয়ে নিল।
কিছু ক্ষন পর একটা দ্বীপ এ জাহাজ ভিড়ল ।সওদাগরে রা যে যার মতো বিকিকিনির পশরা সাজিয়ে বসেছে ।পশরার আদান প্রদানে বেশ
ভাব হয়ে গেল দুজনের।
আবার চলছে জাহাজ।সওদাগর,নাবিক সবার
সংগে বন্ধুত্ব হয়ে গেল ঐ বৃদ্ধের ।তখন বেশ রাত ।
আবদুল্লা পট্টবস্ত্র এনেছিল বিক্রি করার জন্য ।জাহাজে ই আবদুল্লার সব পট্টবস্ত্র বিক্রি হয়ে গেল ।
খুশি আবদুল্লা ।তাছাড়া ডুবুরি দের থেকে অনেক
মুক্তো নেওয়া হয়েছে ।এবার পিপ্পীলি গেলে ও ক্ষতি
নেই ।ভালো আয় হয়েছে ।কিন্তু এখন ও তো পিপ্পীলি
পৌঁছতে পনেরো দিন লেগে যাবে ।হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এলো ।হ্যাঁ ।তাই করবে আবদুল্লা ।
ঐ জাদুকাঠি তার চাই ই চাই ।কিন্তু কি করে?
জাদুকর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ।আবদুল্লা ভাবলো
একটা মজা করা যাক্ ।একটু দুরে বসে ছিল এক
সাঁপুড়ে ।তার কাছে গিয়ে একটা বিষ হীন সাপ কিনে
নিল।এরপর সাপ টা জাদুকর এর শরীরে একেবারে জামার ভেতরে ঢুকিয়ে দিল ।একটু পরে ই জেগে গেলেন জাদুকর ।ভাবলেন ওরে বাবা রে ।শরীরে কি হেঁটে বেড়াচ্ছে?লাফাতে লাগলেন ।ওর নিজের
ভাষায় দু হাত তুলে,"ওরে বাবা রে মারে "বলে সারা
জাহাজে লাফাতে শুরু করলেন ।লাফাতে লাফাতে
সাপ টা বেড়িয়ে এলো।সাপুড়ে বললো,"একটু আগেই একজন আমার কাছ থেকে বিষ হীন সাপ কিনে নিয়েছে "।জাদুকর বললেন,কে সে?
কিন্তু জাহাজে তাকে পাওয়া গেল না ।এতক্ষণে
জাদুকরের মনে হলো তাঁর ব্যাগের কথা ।ছুটলেন ব্যাগের পেছনে ।সেটা ও বে পাত্তা ।।কপাল চাপড়ানো ছাড়া কিছুই করার নেই ।কারণ তিনি ও
ওটা একজনের থেকে চুরি করেছিলেন ।তার নিজের
কোন শক্তি নেই ।
এদিকে জাদুকাঠি আর সিল্কের চাদর মুড়ি দিয়ে
আবদুল্লা বললো-"পিপ্পীলি চলো।রাজবাড়ী ।"
আকাশ পথে দুহাতে চাদর উড়িয়ে সাঁ সাঁ করে পৌঁছে
গেল পিপ্পীলি রাজপ্রাসাদের দরোজায় ।কিন্তু আশ্চর্য
হলো যখন দেখলো বিশাল দরজায় দুজন দ্বার রক্ষী
দু পাশে দণ্ডায়মান ।কিন্তু দুঃখের বিষয় কারো মুখ
দেখা যাচ্ছে না।
মাথা ঢাকা দেওয়া একটি লোক তাকে ভিতর
বাড়িতে নিয়ে এলো ।আর একটি লোক তাকে
শোবার ঘরে পৌঁছে দিয়ে গেল।আশ্চর্য ব্যাপার এর
ও সর্বাংগ ঢাকা ।আবদুল্লা ভাবলো এদের বুঝি
শীত একটু বেশি ।যাই হোক খাওয়া র পর ঘুমিয়ে
পড়লো ।ঘুমিয়ে সব বিভীষিকাময় স্বপ্ন দেখলো।
চোখ খুলে দেখলো একেবারে সকাল ।ঘরে কোন
জানালা নেই ।টেবলে প্রাতঃরাশ সাজানো ।যাই হোক
খাবার দেখে গব্ গব্ করে খেয়ে নিল আবদুল্লা ।
বরের পোশাক এসে গেছে ।পোশাক পড়ে আবদুল্লা চললো বোরখা পড়া বরযাত্রীর সাথে ।
বিশাল একটা ঘরের ভেতরে বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে ।
সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো এখানে সবাই অবগুণ্ঠিত।বোরখা ই বলা যায় যা তারা পড়ে আছে ।
শুধু চোখ জোড়া দেখা যায় ।রাজা মশাই পরিচয় না
দিলে তাঁকে ও চেনা যেতো না ।কারণ তাঁর ও শরীর ঢাকা ।অবশ্য তাঁর মাথায় মুকুট আছে ।যাই হোক কাজী দু পক্ষের মত নিয়ে ্নিকাহ সম্পূর্ণ করলেন ।
এরপর বরও বঁধূ কে একটা সুদৃশ্য কক্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হলো ।আবদুল্লা র খুব খারাপ লাগছে ।এ কেমন বিয়ে রে বাবা ।বৌয়ের মুখও দেখতে পাচ্ছি না!অনুনয় বিনয় করে বৌ কে বললো--একবার
মুখটা খোলো ।তোমাকে দেখি ।এখানে তো কেউ নেই ।
-----কেউ না থাকলে ও আমি মুখের ঢাকা খুলবো না।
আমি কুরূপা ।
------তুমি যেমন ই হও তুমি এখন আমার বৌ।
এবার বৌ কাঁদতে থাকে ।
আবদুল্লা বললো ---------ঠিক আছে ।আমি তোমাকে দেখতে চাইবো না।তবে যতো দিন তুমি আমাকে মুখ না দেখাবে আমরা এক বিছানায় শোবো না।
রাতে বার বার ভেবেছে কি এমন ব্যাপার যে সারা
রাজ্যে র লোক মাথা ঢেকে রাখছে ।এমন কি
রাজকন্যার অবধি মাথা ঢাকা দেওয়া ।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আবদুল্লা স্ত্রী কে বলে--------আমার টাকা পয়সা,মণিমুক্তো সব
তোমাকে দিয়ে আমি চলে যাবো ।
-----কেন?
আবদুল্লা বলে---------কারণটা বলছো না কেন?কেন
সবারই মাথা ঢাকা?
----''কাঁদতে কাঁদতে আবদুল্লার স্ত্রী মাথার ঢাকা
খুলে বলে-------এই দেখো-আমায়।আমি মানুষের মতো নই।
আবদুল্লা চেয়ে আছে ।এ কী দেখছে?মানুষের শরীরে প্যাঁচার মাথা?
আবদুল্লা বললো----জন্ম থেকে?
বৌ বললো----না গো ,দু মাস আগে এক জাদুকর
এসেছিল ।বাবা র উপর কি কারণে রাগ করে সবারই এমন মাথা করে দিয়েছে ।
আবদুল্লা বললো-----চিন্তা করোনা ।সব ঠিক হয়ে যাবে ।
পরদিন রাজামশাই কে এত্তেলা পাঠালেন আবদুল্লা । ।-----রাজ্যে র সবাই কে রাজসভায় আমন্ত্রণ জানানো হোক ।আমি ম্যাজিক দেখাবো।---কেউ
যেন অনুপস্থিত না থাকেন ।এমনকি রানীমা ও।
পরদিন আবদুল্লা আর আবদুল্লার স্ত্রী রাজ সভায়
গিয়ে পৌঁছায়।রাজ সভা গম্ গম্ করছে ।
রাজা আবদুল্লা কে বললেন---কি ম্যাজিক দেখাবে?
ম্যাজিক আমি ভয় পাই ।
আবদুল্লা বললো---'আপনার ভয় পাওয়ার কারণ
নেই ।আমি আছি তো।
আবদুল্লা রাজা কে বুঝতে ও দিলো না যে রাজকন্যার কাছে সব জেনে ফেলেছে ।আবার রাজা কে বললো----রানী মা এসেছেন তো?
রাজা----হ্যাঁ ।এই তো ।
রাজা ,রানী আর তাদের কন্যা আবদুল্লার নববিবাহিতা স্ত্রী ওপরে উচ্চাসনে আসীন ।
যথাসময়ে উপস্থিত রাজ্যের সকলে উপস্থিত ।
।রাজ সভা একেবারে সরগরম ।লোকে লোকারন্য চারদিক । সার দিয়ে সবাই দুভাগে বসেছে ।আবদুল্লা র প্রচণ্ড উচাটন ।কি জানি কি হবে ।যদি সাফল্য না
আসে ?অজস্র কালো।মাথায় ভরে গেছে ।কেউ
জানে না কি হবে ।সফল হবে তো আবদুল্লা?
আবদুল্লা জাদুদণ্ড আর সিল্কের চাদর বার করলো।
সবার দিকে উদ্দেশ্য করে বললো---
এবার আমি জাদু দেখাবো।কেউ শব্দ করবেন না ।
এবার সভা কক্ষের সামনে থেকে পেছনে হেঁটে গেল।তার পর চাদর গায়ে জড়িয়ে জাদুদণ্ড চাদরের
ভেতরে নিয়ে বললো-----আবার সকলের
আগের রুপ ফিরিয়ে দাও ।
বারে বারে বলে ই চলেছে আবদুল্লা ।
রাজা মশায় উত্তেজিত হয়ে উঠলেন ।কারণ তাঁর
মুখে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে ।মাথায় হাত দিয়ে
অন্য অনুভূতি হলো ।মুখে হাত দিয়ে নাকের স্পর্শ
পেলেন।মাথায় আবার হাত দিয়ে চুল অনুভব করলেন ।
আবদুল্লা তাঁর ব্যাগের ভেতর থেকে একটা আয়না
দেখালেন রাজা কে।রাজা মশায় আয়নায় নিজেকে
দেখলেন ।সত্যি তো মানুষের মুখ।আনন্দে জড়িয়ে
ধরলেন আবদুল্লা কে ।
প্রজারা মাথার ঢাকা ফেলে দিয়েছে ।সবাই খুশি ।
সমবেত কন্ঠে বলছে-----মহারাজ কি জয় হো।
দামাদ জি কি জয় হো।
এবার মহারাজ,আবদুল্লা কে জড়িয়ে ধরে জোর করে
সিংহাসনে বসিয়ে দিলেন।পিপ্পীলির রাজা আগে
বলেছিলেন জামাইকে টানা এক বছর পিপ্পীলি তে
থাকতে হবে ।কিন্তু তিনি এখন এতো খুশি যে
নিজের কথা ফিরিয়ে নিলেন ।জামাতাকে অনুমতি
দিলেন কিছু দিনের জন্য দেশে নিজের দেশে স্ত্রী কে
নিয়ে ঘুড়ে বেড়িয়ে আসতে ।
তাই হলো,রাজকন্যা রেশমি আর আবদুল্লা দেশের
উদ্দেশ্যে রওনা দিলো জাহাজে করে ।সংগে গেল
এক বস্তা টাকা,মনি-মুক্তো আর পিপ্পীলি রাজের
দেওয়া উপঢৌকন ।
--(!--আমার কথাটি ফুরালো আর নটে গাছটি মুড়ালো) ।
----------