Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

আনন্দের শরতঅণুগল্পগৌতমী ভট্টাচার্যদৈনিক গল্প প্রতিযোগিতা-----------------------------------টিনের চালে ঝমঝম করে বৃষ্টি আছড়ে পড়ার শব্দে সারারাত ঘুম আসেনি  বীনার। উৎকন্ঠায় উদগ্রীব হয়ে থেকেছে সমস্তক্ষণ, যদি স্বামী অবিনাশ এসে দরজা…

 


আনন্দের শরত

অণুগল্প

গৌতমী ভট্টাচার্য

দৈনিক গল্প প্রতিযোগিতা

-----------------------------------

টিনের চালে ঝমঝম করে বৃষ্টি আছড়ে পড়ার শব্দে সারারাত ঘুম আসেনি  বীনার। উৎকন্ঠায় উদগ্রীব হয়ে থেকেছে সমস্তক্ষণ, যদি স্বামী অবিনাশ এসে দরজা ধাক্কা দেয়। সাতদিন হলো ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে গেছে অবিনাশ, তারপর থেকে কোন খবর নেই। টিভিতে খবর দেখেছে সাগরে নিম্নচাপ ঘণীভূত হয়েছে সাথে ঝোড়ো হাওয়া। মৎস্যজীবিদের ঘরে এ এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার----উৎকন্ঠা আর দুশ্চিন্তার সঙ্গে বাসকরা।


 ভোরের হিমেল হাওয়ায় চোখদুটি একটু লেগে  গেছিল। হাওয়ায় খুলে যাওয়া জানালার পথে ভেসে আসা মিষ্টি সুবাসে ঘুমের চটকা ভেঙে গেল বীনার। মনের মধ্যে ভিড় করে থাকা দুশ্চিন্তা নিয়ে দরজা খুলে বাইরে উঠোনে পা রাখতেই মনটা খুশির আমেজে রিনরিনে গলায় গেয়ে উঠতে ইচ্ছা করলেও কিন্তু গলাটা কে যেন চেপে ধরল। সারা রাত অবিরাম বৃষ্টির ধারাবর্ষণে ক্লান্ত সূর্য দেব হাসি মুখে তাকিয়েছেন। উঠোনে  শিউলি ফুলের গাছ  হাতছানি দিয়ে ডাকছে। নীল আকাশে সাদা তুলোর মতো মেঘগুলো খেলে বেড়াচ্ছে। মনটা যেন শুভ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর কদিন পর দুর্গাপুজো। সবার মনেই আনন্দের সুর কিন্তু বীনাদের ঘর অন্ধকার। 


ক'মাস আগে আমফানের সময় বীনার শ্বশুর ও ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসে নি।


বাড়ির পাশে দুর্গাচালা থেকে ভেসে আসল চিৎকার কান্নাকাটির আওয়াজ। কয়েকটি ট্রলার   ফিরে এসেছে কিন্তু অবিনাশদের টি আসে নি। একই ঘটনা হয়ত ঘটতে চলেছে বীনাদের সঙ্গে। বীনার শাশুড়িমা সবে মাটি পড়া দুর্গাঠাকুরের কাঠামো র সামনেই মাথা ঠুকতে ঠুকতে আকুল মিনতি জানাতে লাগলো। বীনার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেতে থাকলো। পাড়াপড়শি ঠাকুরের কাছে জোড়া পাঁঠা মানত করার কথা বললে শাশুড়ি বৌ দুজনেই তীব্রস্বরে প্রতিবাদ করে ওঠে---না প্রাণের মূল্যে প্রাণ চাই না। মা দুর্গা যদি অন্তরের ডাক শোনেন তবেই অবিনাশ ফিরে আসবে। কথা শেষ হতে না হতেই বীনার হাতের মোবাইল বেজে ওঠে অচেনা নাম্বারের। বীনা চিৎকার করে ওঠে, বাবা তুমি বেঁচে আছ! তোমার ছেলে আর তার সঙ্গীদের নিয়ে ফিরে আসছ। পাড়াপড়শি সমেত দুটি অসম বয়সী নারী হৃদয়ের শিশির ভেজা  আনন্দের রেশ নীল আকাশে  পেঁজা তুলোর শুভ্র মেঘের ডানায় ভর করে মাঠে-প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা সতেজ কাশফুলের  মতো আন্দোলিত হতে থাকল গ্রামময়।।