Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#ছোট গল্প # শিরোনাম - শান্তি নীড় কলমে @ ইন্দ্রানী মুখার্জী ২১/ ১০/ ২০২০
এই মান্ধাতার আমলের সাতপুরুষের বাড়ীটা তে তোমার এতো কিসের যে মায়া বুঝিনা বাপু ?চারিদিকে ফাটল ধরেছে , রং - পলেস্তারা সব খসে খসে পড়ছে । জল সোপ করছে চারিদিকে তব…

#ছোট গল্প 

# শিরোনাম - শান্তি নীড় 

কলমে @ ইন্দ্রানী মুখার্জী 

২১/ ১০/ ২০২০


এই মান্ধাতার আমলের সাতপুরুষের বাড়ীটা তে তোমার এতো কিসের যে মায়া বুঝিনা বাপু ?

চারিদিকে ফাটল ধরেছে , রং - পলেস্তারা সব খসে খসে পড়ছে । জল সোপ করছে চারিদিকে তবুও তুমি আর বাপী এই বাড়ীতেই থাকবে । অনুসুয়া দেবী বললেন 

সত্যিই রে এটা একদম ঠিক বলেছিস বাবু , এই বাড়ীটা ছেড়ে আমি আর তোর বাপী একটা মুহর্ত থাকতে পারবো না।

যেদিন আমি এই বাড়ীতে এসেছিলাম তোর বাপীর হাত ধরে তখন আমার বয়েষ ষোল । 

তখন এই বাড়ীতে কতো মানুষ ছিলোরে , তোর দাদু , ঠাকুমা , জ্যাঠা , জ্যাঠিমা , দুই কাকু , কাকিমা আর তাদের ছেলে - মেয়ে , তোর দুই পিশিমনি মাঝে মধ্যে এই বাড়ীতে আসতো ।

আস্তে আস্তে যে যার সুবিধামতো কাজের তাগিদে বা ছেলে -মেয়ে মানুষ করার জন্যেই সকলে এই বাড়ী ছেড়ে চলে গেলো ।

পড়ে রইলাম আমরা এই সাতপুরুষের বাড়ীটা আগলে ধরে ।

অনেক স্মৃতি , অনেক ভালোবাসা জরিয়ে আছে এই বাড়ীটাতে। সবথেকে বড়কথা এই বাড়ীর পুজোগুলো লোকের হাতে দিতে তোর বাপীর বা আমার মন চাইনি।

এই বাড়ীতেই তোরা দুই ভাই আর তোদের বোন রাজশ্রী 

খুব ভালোভাবে লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হলি। আমার সব ইচ্ছা তোরা তিন ভাই-বোনে পুরন করেছিস । আজ আমার আর কিছুই চাইবার নেইরে।

দুই ছেলে - বৌ , নাতি , নাতিনী সব পেয়েছি ।

রুপক বিদেশে থাকলেও বছরান্তে একবার মা দুর্গার পুজোর সময় তো এই বাড়ীতে আসে ।

আর তুই তো আমাদেরকে ছেড়ে অন্যকোথাও যেতেই পারলি না ।

দিদিভাই বড় হচ্ছে পি এইচ ডি করছে , নিজের লেখাপড়া আর গান নিয়ে বেশ আছে ।

জানিস বাবু যত বয়েস বাড়ছে তত যেন একাকীত্ব গ্রাস করছে , তোর বাপী তো সারাদিন বই পড়ে সময় কাটায় । তুই আর বৌমা ডিউটিতে বেড়িয়ে গেলে আমি সবাই কে ফোন করে খবর নিই।

জানিস সেদিন সন্ধ্যায় তোর ছোট কাকুকে ফোন করেছিলাম ছেলে আর বৌমা ব্যাঙ্গালোরে আছে তাই ও এখন বৃদ্ধাশ্রমে থাকে , অথচ ছেলেকে ভালো স্কুলে ভর্তি করেছিল বলেই এই বাড়ী ছেড়ে তোর ছোট কাকু আর কাকীমা অন্যত্র বাড়ী কিনে চলে গিয়েছিল ।

আর তোর শেজকাকীমার অবস্থা তো আরও করুন ।

শেজ কাকু মারা যাবার পর থেকেই কেমন যেন হয়ে গেছে । দুই ছেলে - বৌ নিজেরা তো নিজেদের মতো থাকে । দুই ছেলেই ফ্ল্যাট কিনেছে অথচ সেখানে মায়ের স্থান নেই বলতে বলতে অনুসুয়া দেবী কেঁদে উঠলেন।

হিরোক মা"কে জড়িয়ে ধরে বললো তুমি এভাবে কেঁদো না মা , কি করা যাবে বলো।

জানিস বাবা এই বাড়ীতেই চার ভাই , আমরা , সব ছেলে-মেয়েরা সবাই কতো হাসি -খুশিতে ছিলাম।

আমরা চার " জা"কতো গল্প করতাম ।

সুখে- দুঃখে অনেকগুলো বছর এই বাড়ীতে সবাইমিলে কাটিয়েছি তো । ওদের কিছু শুনলে খুব কষ্ট হয়রে।-

---তুমি অত চিন্তা করোনা" মা "দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

কিজানি বাবু তাই যেন হয় ।

বেশকিছু দিন পরে হিরোক অফিস থেকে এসে মা কে বললো , আমাদের সকল কে এবার বাংলো তে চলে যেতে হবে , তুমি আর বাপী যেন না করোনা ।

যদিও আরও আগেই যাওয়া হলে ভালো হতো ।

অনুসুয়া দেবী ছেলেকে বললেন বাবু দুর্গা পুজোর সময় যেন এই বাড়ীতে সবাই আসবো ।

আদি আমল থেকে আমাদের বাড়ীতে দুর্গা পুজোর প্রচলন । তিনশ বছর পূর্ণ হবে এবারের পুজো ।

--- আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি মা আমি তোমাদের দুজনকে নিয়ে আমরা সবাই এই বাড়ীতে ফিরে আসবো । সময়ের সাথে সাথে অনুসুয়া দেবী আর অবিনাশ বাবু ছেলের বাংলোতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে ।

দেখতে দেখতে অনেকগুলো মাস এখানে কেটে গেলো । ছোট ছেলে বৌমা ফোন করে জানায় তারা ষষ্ঠীর দিন সকালে আসছে। 

মেয়ে মাকে বলে আমরাও তাহলে ওই দিনেই যাবো ।

বড় বৌমা সকলের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনে আনে।

অনুসুয়া দেবী , অবিনাশ বাবু ছেলে , বৌমা , নাতিনী সকলেমিলে রওনা হয়ে যায় গাড়ী নিয়ে ।

গাড়ী থামতেই অনুসুয়া দেবী অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে কোথায় নিয়ে এলি বাবু ?

হিরোক সকলকে গাড়ী থেকে নামতে বলে।

গাড়ীটা থামতেই সবার চোখে পড়লো গেটের উপর বড় করে লেখা "শান্তি নীড় "।

অনুসুয়া দেবী আর অবিনাশ বাবু নামতেই , হিরোকের ছোট কাকু আর শেজ কাকীমা প্রনাম করলো ।

একটু দুরে বড় গেটের কাছে রাজশ্রী আর রুপক , ছোট বৌমা নাতি - নাতিনী সকলেমিলে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে ।

হিরোকের মেয়ে মানে অনুসুয়া দেবীর বড় নাতিনী একটা কাঁচি হাতে দিয়ে বলে দাদু আর ঠাম্মী তোমরা দুজনে এই লাল ফিতেটা কাটো , তবেই সবাই বাড়ীতে যেতে পারবে ।

অবিনাশ বাবু আর অনুসুয়া দেবী ফিতে কাটতেই সবাই বাড়ীতে প্রবেশ করলো ।

বড় ছেলে হিরোক এসে বাপী , মাকে প্রনাম করে বললো মা আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমরা সবাই এই বাড়ীতে ফিরে আসবো ।

অনেকদিন সময় লেগে গেলো বাড়ীটা ঠিকমতো করে তৈরি করতে। এবার থেকে ছোট কাকু আর শেজ কাকীমা আমাদের সাথেই থাকবে । আর ওই পাশের সব বাড়ীগুলোতে থাকবে যে সব বাবা - মা দের কেউ দেখেনা , ছেলে - বৌমা থাকতেও দিনের পর দিন কষ্ট সয্য করতে হয় তাঁরা ।

অনুসুয়া দেবীর দুচোখ দিয়ে জলের ধারা বইতে লাগলো ।

মন্দিরে ঢাকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । অবিনাশ বাবু আর ছোট ভাই অনেকদিন পরে একসাথে মন্দিরে গেলো ।

পাঁচিরের পাশেই শিউলি গাছের তলায় শিউলি ফুল তুলে আনতে গেলো বড় বৌমা ।

ছোট বৌমা পুজোর বেলপাতা , ফুল , ফল সব নিয়ে মন্দিরের গেলো ।

অনুসুয়া দেবী বাড়ীর সবাই কে নিয়ে" মা" কে বরণ করবে বলে মন্দিরে যেতেই চারিদিক থেকে শঙ্খ ধ্বনি আর উলুধ্বনি শোনা গেলো ।

আজ অনুসুয়া দেবী একা নয় ।, অনেক " মা" আজ মন্দিরে এসেছে মা দুর্গাকে বরণ করবে বলে ।

আজ থেকে সবায়ের আশ্রয় স্থল হবে" শান্তি নীড় ".।

হিরোক মন্দিরে এসে প্রনাম করে নীচে নামতেই অনেক গুলো হাত একসাথে হিরোকের মাথার ওপর রেখে আশীর্বাদ করলো , সবাই একসাথে বলে উঠলো তোমার মঙ্গল হোক বাবা । তোমার জন্যেই আমরা আজ নতুন জীবন পেলাম।

মন্দির থেকে ভেসে আসছে পুজোর মন্ত্র ।

" রুপং দেহি জহং দেখি যশ দেহি ,দ্বিষো জহি নমঃ নমঃ "