গদ্য- কবিতাঃ জন্মদিনকলমেঃ শর্মিলা রায় তারিখঃ৫/১০/২০২০
ঘরের এক কোণে পায়েসের বাটি নিয়ে,অনন্ত অপেক্ষায় বসে আছেন মা-- অসহায়, একাকী। ছেলের দীর্ঘায়ু কামনায় জ্বালা দীপ,নিভে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। অনতিদূরে বিশালায়তন হলঘর, ফেটে যাচ্ছে সশব্দ করত…
গদ্য- কবিতাঃ জন্মদিন
কলমেঃ শর্মিলা রায়
তারিখঃ৫/১০/২০২০
ঘরের এক কোণে পায়েসের বাটি নিয়ে,
অনন্ত অপেক্ষায় বসে আছেন মা-- অসহায়, একাকী।
ছেলের দীর্ঘায়ু কামনায় জ্বালা দীপ,
নিভে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
অনতিদূরে বিশালায়তন হলঘর,
ফেটে যাচ্ছে সশব্দ করতালিতে।
সমবেত কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে--
" হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ""।
পঁয়ত্রিশটি রঙিন বাতি, একটি একটি করে,
ফুঁ দিয়ে নেভাচ্ছে অয়ন।
একরাশ মুগ্ধতায়, ছুরির আঘাতে,
খন্ড খন্ড করছে, রঙবাহারী কেকের বুক।
উল্লাস উন্মাদনার বিচিত্র টুকরো টুকরো শব্দ,
ভেসে আসছে মা'র কানে।
মা'র বুকের গভীর ক্ষতস্হান থেকে, নিঃসৃত রক্ত,
অশ্রুজলে মিশে, মাটিতে ঝরে পড়ছে টপটপ।
মাটির বুকে আঁকা হচ্ছে বেদনার আল্পনা।
মা ফিরে যাচ্ছেন পঁয়ত্রিশ বছর আগের,
প্রসব যন্ত্রণার দিনটিতে।
সে দিন ছিল ভরা শ্রাবণ। কাকভোর--
অঝোর ধারাবর্ষণে ঝাপসা চরাচর।
ঘনঘোর বর্ষার বুক চিরে,
মায়ের কোল আলো করে,
ফুটলো চাঁদের ফুল।
ফুলটির নিষ্পাপ মুখমন্ডল, এনে দিলো,
এক অনাস্বাদিত স্বর্গীয় সুখানুভূতি-
ভুলিয়ে দিলো প্রসব যাতনা।
অমূল্য উপহারে আপ্লুত মা, মনে মনে,
বার বার নতজানু হলেন ঈশ্বরের কাছে।
তারপর সুখে- দুখে, ঝড়- ঝঞ্ঝায়,
পার হয়ে গেলো পঁয়ত্রিশটা বছর।
ধীরে ধীরে ছেলের সংসারে,
ব্রাত্য হলেন মা।
সেদিনের সেই নাড়ি ছেঁড়া ধনের,
কেশাগ্র স্পর্শের অধিকারিনী,
আজ আর নন তিনি।
শূন্য দৃষ্টি, চেয়ে আছেন পায়েসের বাটির দিকে।
ঝাপসা হয়ে আসছে তার চোখ জোড়া।
প্রমাদ গুনছেন মা-- তার অশ্রুনীর, ছেলের জীবনে
কোনো অশুভ সংকেত নিয়ে আসবে না তো!
নির্জলা, নিরন্ন উপবাসে করজোড়ে,
প্রার্থণা জানাচ্ছেন তিনি---
শতায়ু হোক তার সন্তান।
সুখে সমৃদ্ধিতে সমুজ্জ্বল হোক
তার দীর্ঘ জীবন।