জয়ন্ত কুমার দাস ১৯৭৭ সালে গ্রাম ( জগদীশপুর, হাওড়া) ছেড়ে চাকরির সূত্রে বিশাখাপত্তনম এসেছিলাম । দীর্ঘ চাকরি জীবনের অবসরের পর আজও বিশাখাপত্তনমেই আছি । আমারই চোখের সামনে ছোট টাউন থেকে এক পরিচ্ছন্ন, সুন্দর শহরে পরিণত হল । পাহাড় আর সম…
ঠিক তেমনিই ১৯৯৫ এ আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ছোট একটি দূর্গাপুজোর আয়োজন করি - "সার্বজনীন শ্রী শ্রী দূর্গাপূজা", অশোকা পার্ক, বিশাখাপত্তনম । ডিফেন্স এ কাজ করার সুবাদে ডিফেন্স কলোনির সব সুবিধা পাই । গতবছর ২৫ বছরে সেই পূজা এক মহীরূপ ধারন করেছে । আজ কয়েকশত বাঙালি ও অবাঙালি পরিবার এ পূজায় জড়িত ।
এ পূজায় বাংলার মত আড়ম্বর নেই, নেই বিশাল পান্ডেল বা চোখ ধাঁধানো আলোর রোশনাই । তবু ও এত লোককে আপন করে নেওয়া, এত প্রানবন্ত পূজা আমি কমই দেখেছি ।
এ পূজায় সর্বজনীন পূজার সব গুন বর্তমান । এ পূজা এক মিলন স্থল । সারা বৎসর ঐ একবারই সকলের সঙ্গে দেখা হয় । হয় আলাপ আর জমজমাট গল্প । পূজা কদিন জাতি বা ধর্মের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে মিলন উৎসব ।
পূজা কদিন কারোরই উনুন জ্বলে না । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সবাই পূজা পান্ডেলই থাকি । পুজা হয় কমিউনিটি হলে আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় হলের বাহিরে পার্কে। সকালে চা,ফল, দুপুরে খিচুড়ি আর রাত্রে অন্য নিরামিষ খাবার । সবাই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে দুপুরে ও রাত্রিরে মহাভোগ গ্রহণ করেন । দুপুরে ৭০০ থেকে ১০০০ জন মহাভোগ গ্রহণ করেন ।
যতবার পূজা ততবার ধুনুচি নাচ । ৫ থেকে ৫০ সবাই নাচেন । ঠাকুর গড়ার শিল্পী, বামুন, ঢাকি সবাই বাংলা থেকে আসেন।
আগেই বলেছি এ পূজা শুধু বাঙালির নয়, সবার । প্রতিদিন সন্ধ্যা আরতির পর রাত্রি ৮টা থেকে ১০টা পযন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । এ অনুষ্ঠানে সারা ভারতের সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয় । তেলেগু, তামিল, মালয়ালম, পাঞ্জাবি উত্তর ভারত সবার জন্য আলাদা সময় ভাগ করা থাকে । কলোনির এবং আমরা ছেলে বুড়ো সবাই এতে অংশ গ্রহণ করি ।
বাংলা অনুষ্ঠানের রিহার্সাল তিন মাস আগেই শুরু হয়ে যায় । প্রতি রবিবার রিহার্সাল হয় । আর এভাবেই তিন মাস আগেই আমাদের পূজা শুরু হয়ে যায় ।
পঁচিশ বছর পূজা হয়ে গেল । এই একটি পূজা ছাড়া অন্য কোন পূজা দেখবার প্রয়োজন হয় নাই ।
এ বৎসর শুধু ঘটপূজা করার অনুমতি মিলেছে । তাও শুধু নবমীর দিন । দীর্ঘ ২৫ বৎসর পর এবার বিরতি । সবাই আশা করছি আগামী বছর আবার সবকিছু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসবে । আবার বলতে পারব -" সামনের বছর আবার হবে ।"
জয়ন্ত কুমার দাশ