পূজোর অন্য কথা✍সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
এসে গিয়েছে বাঙালির সবচাইতে বড় উৎসব দূর্গাপূজো। হোক না তা করোনা অতিমারি আবহে। থাক না মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ। এ যে শারদোৎসব! ষষ্ঠীর বোধনে যার শুরু। তারপর দ্রুতবেগে সপ্তমী ছুঁয়েই অষ্টমী-নবমীর স…
পূজোর অন্য কথা
✍সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
পল্লীমঙ্গল সমিতিতে কোয়ালিটি ওয়ালশের স্টলটা বসেছে কিনা কে জানে! আর প্রভাত সংঘের 'দুগ্গা ঠাকুরের' মুখটা কি আগের বছরের থেকেও মিষ্টি হয়েছে? একাই বসে ভাবছে শিঞ্জিনী। মন্ডলকাকুর দোকানের ক্যাপ ফাটানো পিস্তলগুলি নীরব হাতছানি দিচ্ছে রাজদীপকে! এ বছর নবোদয় ক্লাবের মাঠে আর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা হবে না! ঢাকের ঢ্যাম কুড়াকুড় শোনা যাচ্ছে না। কানে আসছে না কাঁসরের কাঁইনানা কাঁইনানা। ঢাকের ওপরে পালকটা নাকি শেয়ালের লেজ। ধ্যাত্ মা যে কি বলে না!
আসলে বেরুনোর উপায় নেই ক্লাস ফাইভের রাজদীপের। একই অবস্থা ক্লাস থ্রিতে পড়া শিঞ্জিনীর। ওদের আবাসন কমিটির নিয়মে সকলে স্বেচ্ছাবন্দী। আবাসনের একই পরিবারের চারজন কোভিড আক্রান্ত। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বেরুচ্ছেন না।
জয়বাবা ফেলুনাথ সিনেমাতে দুগ্গা ঠাকুরের পূজো আছে! রাজদীপ জানে। কিন্তু সে তো একটুখানি। হীরের আংটি সিনেমাতে অনেকখানি আছে! শিঞ্জিনী একটু বেশিই জানে। বাবার মোবাইলে সিনেমা দেখা যাবে। আর আছে টুনটুনির বই, ঠাকুমার ঝুলি। নতুন জামা পরে কি আর ঘরে বসে থাকা যায়? একটা করে নতুন জামা ফ্রক অবশ্য দুজনেরই হয়েছে।
একজনের বাবা বিমা এজেন্ট আর অন্যজনের বাবা গৃহশিক্ষক। দুজনে সবসময়ই চিন্তিত। করোনা আর অর্থনৈতিক সংকট রাজদীপ বা শিঞ্জিনী কেউই বোঝে না। বোঝার কথাও নয়। কিন্তু ওরা বুঝেছে যে এ বছর ঘরে থেকেই 'দুগ্গাপূজো' কাটাতে হবে। তাদের নিজেদের মতো করেই। মনে কষ্ট হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু চলতি সময়ে দুজনেই যেন বেশ বুঝদার হয়ে পড়েছে! দুজনেই মা দুগ্গার কাছে প্রার্থনা করছে, তাড়াতাড়ি করোনা অসুরকে মেরে ফেল। আমরা আবার বাইরে বেরুব। আসছে বছর আবার হবে...