Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

পুজোর অন্য কথা- অন্য দুর্গা। যাদের প্রতিদিন বিসর্জন হয়

।।অন্য দুর্গা। যাদের প্রতিদিন বিসর্জন হয়।।।সুদীপ মাইতি। আমি দুর্গা। না আমার নাম দুর্গা নয়। সেটাই বা বলি কি করে। খুব ছোটবেলায় বাবা আমায় মা দুর্গা আমার বলে মাঝে মাঝে ডাকতো। তবে আমি যে দুর্গার কথা বলছি তিনি এই মা দুর্গা বলে আমরা যাকে…



।।অন্য দুর্গা। যাদের প্রতিদিন বিসর্জন হয়।।

সুদীপ মাইতি

আমি দুর্গা। না আমার নাম দুর্গা নয়। সেটাই বা বলি কি করে। খুব ছোটবেলায় বাবা আমায় মা দুর্গা আমার বলে মাঝে মাঝে ডাকতো। তবে আমি যে দুর্গার কথা বলছি তিনি এই মা দুর্গা বলে আমরা যাকে জানি সেই দুর্গাও নয়। অন্তত যার আজ বিসর্জনের দিন। আসলে আমি যে দুর্গার কথা বলছি সে হচ্ছে এই যে দেওয়ালে দেওয়ালে ভরে উঠেছে তাদের কথা।এই জাতিকে নাকি সবাই মা দুর্গা বলে অভিহিত করছে। যদিও দেওয়াল থেকে মাটিতে নামলেই তারা খবর হচ্ছে । হয় কামদুনি অথবা হাতরস। ধরা যাক আমি সেই দেওয়ালের মা দুর্গা। অন্তত কিছুক্ষনের জন্য।যাকে ওই যে বললাম আমার বাবা মাঝে মাঝে মা দুর্গা, মা আমার, বলে ডাকতো। 

মনে পড়ে সেই ছোটবেলার কথা। যখন বাবা পঞ্চমী, ষষ্ঠী বা সপ্তমীতে কলকাতা থেকে অনেক রাতে এসে এই গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতো। ট্রেনে, বাসে এবং সব শেষে নৌকা করে বাড়ির সামনে ঘাটে। সঙ্গে অনেক কিছু হয়তো আসতো। কিন্তু আমরা দিদি ভাই মিলে চারজন পেতাম একটা করে জামা। যেগুলি ওই ঘুম ভাঙা চোখে উঠে যে যারটা নিয়ে গায়ে নতুন গন্ধ মেখে,সেটা  জড়িয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়তাম। পরদিন ওই একটি জামা ছিল চারদিনের সঙ্গী। বাড়ি থেকে তিন চার মাইল দূরে দূরে তিনটি পুজো।তাও বাড়ির দু দিকে। তাই যেতাম। ফিরতাম রাত করে চার পাঁচ জন মিলে। কিন্তু কোথাও মহিষাসুর ভয় ছিল না। চিনতাম না ও তাদের। 

এরপর বড় হয়ে এক বাড়ি থেকে আর এক বাড়িতে যাত্রা শুরু। সেটা একটি আধা শহর। পুজো এখানে অনেকগুলো। তখন আমি তো জামা ছাড়িয়ে শাড়িতে। তাই এখানে পুজোর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর সংখ্যাও বেড়ে গেলো নিজের অজান্তে।তখন আর একটি জামা, চারদিন ,তিনটি পুজো নয়। চারদিন ঠিকই রইলো। একটি শাড়ির বদলে দুই ,তিন হয়েই গেল। আর তিনটি পুজোর বদলে অনেক অনেক পুজোর সামনে পৌঁছে গেলাম। হেঁটে নয়। রিকশা বা মোটর সাইকেল। শুধু সেই একটি জামার যে গন্ধ টা চারদিন ধরে ম  ম  করতো সেইটা হয়তো এক আধডিন কোনো নির্জনে ভেসে আসতো। তবে অভিমান করে  থাকতো না বেশিক্ষন। 

এরপর ঘরে আবার দুর্গার আবির্ভাব হলো।তখন দিনকাল অনেক পাল্টে গেছে। জামার রকমফের হয়েছে। সংখ্যার ও শেষ নেই। প্রতিদিনই একটি থেকে দুটি। সকালে দক্ষিণে তো রাতে উত্তরে। সপ্তমীতে ঠাকুর দেখা তো অষ্টমীতে  বুক করা রেস্তোরার জন্য। নবমীতে আবার বন্ধু পাল্টে মধ্য কলকাতায় সারারাত। আর দশমীতে তিনদিনের পরিশ্রান্ত কাটাতে সারাদিন ঘুম। তবে অনেকবার চেষ্টা করেও তাদের কাছ থেকে জানার সময় হয় নি তারা কি নতুন জামার কোনো গন্ধ পায় কিনা। জানতে ইচ্ছে হয়। কারোর জানার থাকলেও আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

আজকের দিনটি মাটির দুর্গার বিসর্জনের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু মাটিতে থাকা দুর্গাদেরতো কোথাও না কোথাও প্রতিদিন  বিসর্জন হয়েই চলেছে। তাই নয় কি?