তমলুক পায়রাটুঙ্গিপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসবজয়দীপ পন্ডা তমলুক শহরের সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গোৎসব পায়রাটুঙ্গিতে অনুষ্ঠিত হয়। এই দুর্গোৎসব প্রায় দুইশত বছরের প্রাচীন । এখানে দুর্গা পুজোর প্রবর্তন করেন ভজহরি রাউত নামে এক তাঁতি। পুজোর…
জয়দীপ পন্ডা
তমলুক শহরের সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গোৎসব পায়রাটুঙ্গিতে অনুষ্ঠিত হয়। এই দুর্গোৎসব প্রায় দুইশত বছরের প্রাচীন । এখানে দুর্গা পুজোর প্রবর্তন করেন ভজহরি রাউত নামে এক তাঁতি। পুজোর প্রবর্তন নিয়ে এক কিংবদন্তি শোনা গেল পুরোহিত রতিকান্ত ভট্টাচার্যের মুখে। তিনি শোনালেন পায়রাটুঙ্গিতে গ্রামে ভজহরি রাউত নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী থাকতেন। তিনি তমলুক পাঁশকুড়া পথে রাধা মনি হাটে কাপড় বিক্রি করতে যেতেন । একদিন কাপড় বিক্রি করে ফিরছেন কেলোমাল এর কাছে জোড়া বট গাছের তলায় ক্লান্ত ভজহরি বাবু একটু জিরিয়ে নেওয়ার সময় একটি ফুটফুটে ছোট্ট মেয়ে এসে তার কাছে কাপড় চাইল। ভজহরি বাবু কাপড় দিয়ে পয়সা চাইলে মেয়েটি বলল আমার তো পয়সা নেই। আমি কেলোমাল এর ঘোষেদের বাড়ির মেয়ে । তুমি ওখান থেকে পয়সা নিয়ে নিও । এরপর মেয়েটি বলল আমি তোমার বাড়ি যাবো। ভজহরি বাবু তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বললেন। কিন্তু মেয়েটি নাছোড়বান্দা । কিছুটা আসার পর মেয়েটিকে আর দেখা গেল না কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেলো। সেদিন রাত্রে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেলেন তিনি তাকে দেবী নির্দেশ দেন তুই আমার পুজোর ব্যবস্থা কর আমি তোর এখানেই থাকবো। এরপর তিনি স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে দেবীর পুজো ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে আজও সেই পুজো হয়ে আসছে।প্রসঙ্গত হাজার 1951 সালে এই পুজো সার্বজনীন পুজো তে পরিণত হয় । সাত্ত্বিক ভাবে এই পুজোর ব্যবস্থা রয়েছে। নির্মিত হয়েছে দূর্গা মন্ডপ । দেবীকে নিয়ে আরো অদ্ভুত কাহিনী শোনা যায়। প্রতি বছর পুজোর সময় মন্ডপে ওপর অদ্ভুত ভাবে একটি লক্ষ্মী পেঁচা বসে থাকতে দেখা যায়। এই প্রতিবেদককের সৌভাগ্য হয়েছিল অদ্ভুত দৃশ্য দেখার ।
পুরোহিত বলেন, সন্ধি পুজোর সময় একটি জাত সাপ মায়ের পায়ের কাছে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় ।বর্তমানে পুজো উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন উদ্যোক্তারা।
আজ হতে শতবর্ষ পূর্বে তমলুক শহরের কোন শক্তি পুজোর আরাধনা করা নিষিদ্ধ ছিল। কারণ তমলুক শহরের মধ্যস্থলে 51 সতী পীঠের অন্যতম দেবী বর্গভীমা মায়ের অধিষ্ঠান রয়েছে। সেই জন্য তমলুক শহরের একদিকে শংকরারা খাল অপরদিকে পায়রা টুঙ্গিপাড়া খালের মধ্যবর্তী স্থানে কোন শক্তি পুজা হত না । এদিকে পায়রাটুঙ্গি খালের পাশে সর্বজনীন দুর্গোৎসব প্রায় দুইশত বছর ধরে চলে আসছে বিনা বাধায় শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে ।
বর্তমান করোনা আবহে সরকারি নির্দেশ মেনে পুজোর ব্যবস্থা হয়েছে । মণ্ডপের সামনে সদস্যদের নামের তালিকা লিখে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । সর্বাধিক দূরত্ব মাস্ক পড়ে নির্দিষ্ট করা হয়েছে নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে এটি মন্দির প্রবেশ করবেন। প্রবেশ পথে দর্শনার্থীদের স্যানিটাইজ করা হবে এবং দেবীকে গোটা ফল নিবেদন করা হবে। ফুল-ফল শাঁখা-সিঁদুর কাপড় স্যানিটাইজার করে দেওয়া হবে । কেবলমাত্র পুরোহিত থাকবেন। সমস্ত রকম অনুষ্ঠান এবারে বন্ধ থাকবে বলে পুজো কর্মকর্তারা জানালেন ।


