নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: করোনার গেরোয় এবার তমলুকের প্রায় ৪০০বছর পুরনো পারিবারিক দুর্গা পুজোয় পুষ্পাঞ্জলী হবে ফুল বিহীন। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ রাখা হচ্ছে ভক্তজনের এর মধ্যে অন্য ভোগ বিতরণ। তমলুকের নন্দকুমার ব্লকের অন্…
নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: করোনার গেরোয় এবার তমলুকের প্রায় ৪০০বছর পুরনো পারিবারিক দুর্গা পুজোয় পুষ্পাঞ্জলী হবে ফুল বিহীন। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ রাখা হচ্ছে ভক্তজনের এর মধ্যে অন্য ভোগ বিতরণ।
তমলুকের নন্দকুমার ব্লকের অন্তর্গত ব্যবত্তারহাট এলাকা। এই এলাকারই ভট্টাচার্য এবং চক্রবর্তীর পরিবার এর মিলিত প্রয়াসে প্রায় ৪০০ বছর ধরে প্রাচীন নীতিরীতি নিষ্ঠা মেনে দেবী দুর্গার আরাধনা আয়োজন করা হয়ে থাকে। কাজেই ব্যবত্তারহাট সহ আশপাশের বহু গ্রাম থেকে ভক্তরা এই পরিবারের পুজো দেখতে আসেন। জানা গিয়েছে, সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী তাম্রলিপ্ত নগরীর আমরা যে রাজার ব্যবস্থাপক ছিলেন এই ভট্টাচার্য্য ও চক্রবর্তী পরিবারের পূর্বপুরুষরা। আর সেখান থেকেই এই এলাকার নামকরণ হয় ব্যবত্তারহাট। আর এই ব্যবত্তা বাটির পূর্বপুরুষ ছিলেন সার্থকরাম। তিনি তার মায়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে বাড়িতেই ঘট তুলে দূর্গা পূজার প্রচলন করেছিলেন। তা এখন কালক্রমে এই দুই পরিবারের পারিবারিক পুজো হিসেবে চলে আসছে। প্রাচীন প্রথা মেনে আজও নিরামিষ অন্নভোগ হিসেবে মায়ের আরাধনা ব্রতী হন এই দুই পরিবারের সদস্যরা। ষষ্ঠীতে মাকে এক মন ছয় সের চালের ও অন্য ভোগ দেওয়া হয়। একইভাবে সপ্তমীতে ও এক মন সাত সের চালের ও অন্য ভোগ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে থাকে নানান ব্যঞ্জন। এভাবে অষ্টমীতে এবং নবমীতে এক মন ৮ সের চালের ও অন্য ভোগ এবং এক মন ৯ সের চালের ও অন্য ভোগ দেওয়া হয়। একমেরে পটচলায় সাবেকি প্রতিমা হিসেবে এই পারিবারিক পুজোয় মা দুর্গা বাড়ির মেয়ে রূপেই। কিন্তু বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে করণা আতঙ্কে সেই মেয়ের আরাধনাতেও এবার নেমে এসেছে বিস্তর বিধি নিষেধ। স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে এই পারিবারিক পুজোতে এবার মায়ের সামনে তাই কেবল হাত জড়ো করে ফুল বিহীন অঞ্জলি প্রদানের আয়োজন করা হয়েছে।
< p>পরিবারের বৈশিষ্ট্য তথা এই পুজোর প্রধান এবং অন্যতম সদস্য অরূপ ভট্টাচার্য বলেন, এবারে করণা বিধির জেরে মায়ের আরাধনা কিছুটা কাটছাঁট করতে হয়েছে। মূলত সার্বিক মঙ্গল কামনা উদ্দেশ্যেই আমাদের এই পুজোয় ফুল বিহীন অঞ্জলি প্রদানের আয়োজন করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ভক্তদের মধ্যে অন্য ভোগ বিতরণ। যা বিগত প্রায় ৪০০ বছরে এই প্রথম। পারিবারিক এই পুজোর অন্যতম আরেক সদস্য সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, প্রাচীন ঐতিহ্য ও রীতি মেনে এবারের দূর্গা পূজার আয়োজন করা হলেও ভক্ত সমাগমের ক্ষেত্রে অনেকটাই বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়েই আমাদের এই পুজোর আয়োজন করতে হয়েছে। যেটা আমাদের কাছেও খুব খারাপ লাগার বিষয়। কিন্তু সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে সেটা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উপায় ছিল না।