Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#সানগ্লাস#সুস্মিতা
(সত্যি ঘটনা কিন্তু)
   ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল ঋষি। মেয়েটা একেবারে গাড়ির সামনে। ক্রসিংয়ের লাল লাইটে গান বাজছে- "যদি তারে নাই চিনি গো..." - আরে এ যে... ঋষির মনে আজ খুশি আর ধরছেনা। কি যে এক আনন্দের সুড়সুড়ি ও…

 


#সানগ্লাস

#সুস্মিতা


(সত্যি ঘটনা কিন্তু)


   ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল ঋষি। মেয়েটা একেবারে গাড়ির সামনে। ক্রসিংয়ের লাল লাইটে গান বাজছে- "যদি তারে নাই চিনি গো..." - আরে এ যে...

 ঋষির মনে আজ খুশি আর ধরছেনা। কি যে এক আনন্দের সুড়সুড়ি ওকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে। সত্যিই "খুশিতে নাকি মানুষের মাটিতে পা পড়েনা" - 

আর সেজন্যই আজ ঋষি সত্যিসত্যিই মাটিতে পা ফেলবেনা ভেবে পাড়ার মোটর গ্যারেজের মালিক দীপকদাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে একটা গাড়ি সারাদিনের জন্য ধার করেছে। এই গাড়ি নিয়ে আজ সারা কলকাতা শহর চক্কর কাটবে ঋষি। 

তাছাড়া হিংসুটে বন্ধুগুলোর জ্বালাতন থেকে দূরে সরে গিয়ে ঋষি আজ শুধু স্নেহার দেওয়া ওই স্পেশাল উপহার আর ওই উপহারের কারণে পাওয়া গতকালের ফাটাফাটি এক্সপেরিয়েন্সটার কথা একলা ভাববে। 

 সদ্য আঠারো বছরের জন্মদিন পেরিয়ে ঋষি এখন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্যও খুব উত্তেজিত।

যাইহোক স্নেহার দেওয়া সেই উপহারের গল্পে আসা যাক।


ঘটনাটা হ'ল কি সেই ক্লাস এইটে পড়ার সময় থেকেই পাশের পাড়ার স্নেহাকে ঋষির বড্ড ভালো লাগত। এখনও মনে পড়ে, যেদিন প্রথম ওই বিশাল বাংলো প্যাটার্নের বাড়িটার সামনে স্নেহা ওর বাবা মায়ের সঙ্গে হন্ডা সিটি গাড়ি থেকে নামলো। ঋষিরা তখন পাশের রেলিংঘেরা মাঠে কাদা মেখে ফুটবল খেলছিল। স্নেহাকে দেখে গোটা ফুটবল টিমের প্রত্যেকটা কাদামাখা মুখ পুরো হাঁ। ক্লাস এইট নাইনের ছেলেগুলো সৌন্দর্য বলতে কি বোঝে কে জানে, শুধু স্নেহাকে ওদের কারুরই ঠিক বাস্তবের মানবী বলে মনে হলনা। কিশোরীটি ওদের চোখে যেন দূর আকাশের পরী। ওদের রোজকার জীবনের ঝালমুড়ি, ফুটবল, অঙ্কের ক্লাস, বাবামায়ের বকুনির বাইরে স্নেহা যেন নিজেই এক রূপকথা।

  অন্য বন্ধুদের মনের কথা ও জানেনা, শুধু সেদিন প্রথম সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে ঋষির কঠিন অঙ্ক কষতেও দারুণ ভালো লাগছিল। কারণ অঙ্কবই আর খাতার পাতা জুড়ে যে শুধুই স্নেহার মুখের ছবি ভাসছে, আর অঙ্কগুলো মিলেও যাচ্ছিল পটাপট। সেই সেদিন থেকেই ঋষির মনে হতে শুরু করল- "ইশ স্নেহা যদি ওর বেস্টফ্রেন্ড হয়, শুধু ওর...একার। ফুটবল, ক্রিকেট, সাইকেল রেস সবকিছুর বাইরে, একদম আলাদা একটা অন্যরকম বন্ধুত্ব। কি আশ্চর্য, সেই তখন থেকে ঋষির কবিতা পড়ার ইচ্ছে শুরু হ'ল। সঙ্গে একটু আধটু কবিতা লেখাও। ঋষির কিশোর মন বলতে শুরু করল- "রোহন নয়,সাত্যকি নয়, এমনকি প্রাণের বন্ধু অভিষেকও নয়...এই কবিতাগুলো নিয়ে কথা বলা যায়, আলোচনা করা যায় শুধু স্নেহার সঙ্গে...শুধুই স্নেহা।


 অতএব বিকেলবেলা ফুটবলের মাঠে পৌঁছনোর আগে স্নেহার বাড়ির চারপাশে সাইকেলে চেপে পাঁচবার পাক খাওয়া হয়ে দাঁড়াল ঋষির অনিবার্য রুটিন। 

এইভাবেই কেটে গেল বেশ কয়েকটা বছর।

তা, এরকম রুটিন মেনে যে কোনও কাজ করলে, তার তো একটা ভালো ফল হবেই। এই যেমন স্নেহার বাড়ির চারপাশে সাইকেলে পাক খেয়ে এবং ওদের বাড়ির পাশের মাঠে নিয়ম করে ফুটবল ক্রিকেট খেলে ঋষি আজ ভারি সুন্দর স্বাস্থ্যবান এক কিশোর। তারই সঙ্গে রোজ সন্ধ্যায় অঙ্ক বইয়ের পাতায় স্নেহার মুখ ভেবে অঙ্ক কষতে কষতে ঋষি হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষায় সাংঘাতিক একটা কান্ড করে ফেলল। অঙ্কতে পেয়ে গেল একেবারে একশোর মধ্যে একশো। হ'ল স্কুলের টপার।


   ব্যস, এরপরেই শুরু হ'ল আসল ঘটনা। পাড়ার কোচিংসেন্টারের স্যারেরা বিশাল ঘটা করে জুনিয়র ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ঋষির পরিচয় করিয়ে দিলেন। সেই অনুষ্ঠানের দিনই ঋষি লক্ষ্য করল-"যে স্নেহার নাকটা আগে সবসময়ই আকাশের দিকে তোলা থাকত, সেই মেয়ে প্রথমবার ঋষির দিকে একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখল। দৃষ্টিতে একটু যেন মুগ্ধতাও।" ব্যাপারটা অনুভব করে ঋষির আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে গেল।

  তারপরে এল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার রেজাল্টের দিন। উরেব্বাস...সেখানেও ঋষি বাজিমাত করেছে। প্রথম তিনশো জনের মধ্যে ওর নাম। পাড়ায় সাড়া পড়ে গেল।

   "নাহ আর দেরি নয়"- ঋষি ভাবল আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকতে থাকতেই কাজটা সেরে ফেলতে হবে। এখন আর কোনো কিছু ঋষিকে আটকাতে পারবেনা। স্নেহাদের বাংলোবাড়ির উঁচু পাঁচিল, গেটের পাশে বসে থাকা দারোয়ান, হন্ডাসিটি গাড়ির সাদা পোশাকের ড্রাইভার কাম বডিগার্ড, স্নেহার রাশভারি বাবার কোঁচকানো ভুরু...সব খড়কুটোর মতো ভেসে গেল।


    তার দুদিন পরে সন্ধেবেলা স্নেহা যখন সবেমাত্র কোচিংসেন্টার থেকে  ফিজিক্সের ক্লাস সেরে বেরিয়েছে, ঋষি বুক চিতিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। এবং কি আশ্চর্য, সেদিন ওর হাঁটুদুটো একটুও কাঁপলনা, কথা জড়িয়ে গেলনা। ঋষি সাহসভরে স্নেহাকে বন্ধুত্বের মানে মিষ্টি প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ফেলল।

    প্রত্যুত্তরে যা ঘটল...উফ ঋষি যেন এখনও বিশ্বাস করতে পারছেনা। সে যেন এক স্বপ্নের দৃশ্য। স্নেহার ঠোঁটে এক অলীক হাসি...ঋষির বন্ধুত্ব ও এক কথায় একসেপ্ট করে নিলো। শুধু তাই নয়, স্নেহা যেন প্রস্তুত হয়েই এসেছিল। নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে বের করে স্নেহা পরীক্ষায় ঋষির সাফল্যের জন্য ওকে উপহার দিলো একটা ছোট্ট মিষ্টি উপহার- একটা "সানগ্লাস"।

  সত্যি তারপর থেকে ঋষির আর মাটিতে পা পড়ছেনা। বাড়ি ফিরেও সানগ্লাসটাকে এক মুহূর্তের জন্যও কাছছাড়া করেনি ও। এমনকি ঘুমোনোর সময়ও বিছানায় বালিশের পাশে নিয়ে শুয়েছিল। ওটাতে যে স্নেহার ছোঁয়া লেগে রয়েছে।


     পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ঋষির মনে পড়ল- "আজ তো একবার পুরোনো স্কুলে সকলের সঙ্গে দেখা করতে যেতে হবে।" বন্ধুদের সঙ্গে আগেই প্ল্যান করে রাখা আছে। যদিও আজ স্নেহা ছাড়া অন্য কারুর কথা ভাবতেও ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু বন্ধুদেরও যে কথা দেওয়া আছে।

     যাইহোক মে মাসের চরচড়ে গরমে বেলা বারোটা নাগাদ ঋষি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। বাহ আজ গনগনে রাগী সূর্যকেও ঋষির রুপোলি চাঁদের মতো মনে হচ্ছে। কারণ আজ ওর মন জুড়ে শুধুই স্নেহা আর চোখে স্নেহার দেওয়া উপহার- সেই সানগ্লাস।

    বাড়ি থেকে ঋষির স্কুল দুটো স্টপেজ দূরে। ঋষি কোনোরকমে ঠেলেঠুলে একটা ভীড় বাসে উঠে পড়ল। নাহ আজ পৃথিবীটা সত্যিই বদলে গিয়েছে। ভীড়ের চাপে গরমে সেদ্ধ হ'তে হ'তেও ঋষি বাসের ভেতরে দখিনা বাতাস টের পাচ্ছিল। সানগ্লাসটা ও একেবারের জন্যও চোখ থেকে খোলেনি।

    মিনিট দশেকের মধ্যেই স্কুলের সামনে পৌঁছে গেল বাস। বাস থেকেই ঋষি দেখতে পেল স্কুলগেটের সামনে বন্ধুদের জটলা। 

    দূর থেকে ঋষিকে দেখতে পেয়েই বন্ধুদের মধ্যে হই হই আর হাসির রোল উঠল। কিন্তু আজকের হাসিটা যেন একটু অন্যরকম না? ঋষির মনে হ'ল ওকে দেখে বন্ধুদের এত হাসি আর উন্মাদনা কি ওর পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য? নাকি স্নেহার কথা ওরা টের পেয়ে গিয়েছে? কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? ও  নিজে তো ঘুণাক্ষরেও কারুকে কিছু জানায়নি। তবে ব্যাপার কি? সকলে ওকে দেখে এমনভাবে হাসছে কেন?

   রোহন হঠাৎ মন্তব্য করল- "আরে সানগ্লাসটা পরে তোকে তো একেবারে সুপার হিরোর মতো লাগছে।" - ঋষির একটু লজ্জা লজ্জা করতে লাগলো। সঙ্গেসঙ্গেই পাশ থেকে সাত্যকির টিপ্পনি- "নারে, হিরো নয়...এই সানগ্লাসে আমাদের ঋষি আজ সুপার ভিলেন, পুরো অমরিশ পুরি।" ঋষির মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। সাত্যকির সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই ওর অঙ্ক নিয়ে একটু রেষারেষি ছিল। কিন্তু আজ স্নেহার উপহার দেওয়া সানগ্লাস নিয়ে ওর কোনও মন্তব্য ঋষির একটুও ভালো লাগছেনা। ঋষির আর বন্ধুদের আড্ডার মধ্যে থাকতেই ইচ্ছে করল না। ওদের চেঁচামেচি আর হট্টগোলের মধ্যে কোনোরকমে ঋষি বলল- "শোন তোদের কথা দিয়েছিলাম বলেই আমি এসেছি, কিন্তু আমার শরীরটা আজ ভালো নেই। আমি আজ বাড়ি যাই।" বলেই পেছন ফিরে হাঁটা দিলো ঋষি। নাহ এবার আর বাসে ফিরবেনা, স্নেহার কথা ভাবতে ভাবতে ও হেঁটেই বাড়ি ফিরে যাবে।

   ঋষিদের স্কুলের পাশেই একটা গার্লস স্কুল। আগেও এই পথ ধরে বহুবার বাড়ি ফিরতে হয়েছে, কিন্তু তখন যেন মেয়েদের দেখলেই বুকের ভেতরটা দুরুদুরু করে কাঁপতে শুরু করত... আর আজ? আজ ঋষির মনে জয়ীর আত্মবিশ্বাস। স্নেহা ওর বন্ধুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারই উপহার দেওয়া সানগ্লাস আজ ঋষির চোখে। আজ কিসের ভয়? বীরদর্পে এগিয়ে চলে ঋষি। মর্নিং স্কুল শেষ হয়ে গার্লস স্কুলের গেটের সামনে মেয়েদের ভীড়...

কিন্তু আজ স্কুলের মেয়েগুলোর আচরণ যেন কেমন অন্যরকম লাগছে। স্কুলের কাছাকাছি আসতেই ঋষির সেরকমই মনে হ'ল। আগে ঋষিদের দেখলেই মেয়েগুলো যেন "শত্রুপক্ষের সৈন্যদের দেখছে" -এরকম একটা লুক দিতো। আজ সকলে মিলে ঋষির দিকে ওমন হাঁ করে তাকিয়ে আছে কেন? ঋষির "স্কুল টপার" হওয়ার খবর কি তবে এই স্কুলেও পৌঁছে গিয়েছে? ভেতরে ভেতরে একটু গর্ব হ'ল ঋষির। কিন্তু উঁহু...মেয়েগুলো যে ঋষির দিকে তাকিয়ে এ ওর গায়ে হেসে ঢলে পড়ছে...কি ব্যাপার? ধুর মেয়েরা বড় অকারণে হাসাহাসি করে। স্নেহা অবশ্য সকলের থেকে আলাদা। 

যাকগে...এদের এসব ছোটখাট ব্যাপারকে ঋষি মোটেই পাত্তা দেবেনা। বরং স্নেহার মুখটা কল্পনায় ভাবতে ভাবতে...


 এগিয়ে চলল ঋষি। দূর থেকে হেঁটে আসছে স্কুলফেরত একটি ছোট্ট বাচ্চামেয়ে ও তার মা। মা ও মেয়ে দুজনেই ঋষির দিকে এমন অবাক চোখে হাঁ করে তাকিয়ে রইল...

এইবার ঋষি ভেবেই ফেলল- "ভালোবাসায় জয়ের চিহ্ন আজ নিশ্চয় আমার সর্বাঙ্গে ফুটে উঠেছে, আফটার অল স্নেহার মতো মেয়ের ভালোবাসা বলে কথা।" নিজেকে ঠিক বিজ্ঞাপনের ছবির হিরোর মতো মনে হল ঋষির। ভালোবাসার বিজ্ঞাপন, জয়ীর বিজ্ঞাপন, সত্যিই আজকের দিনটাই আলাদা।" কিন্তু কাছাকাছি আসামাত্র বাচ্চাটিকে তার মা এমনভাবে আগলে নিয়ে ছিটকে সরে গেলেন, যেন চোখের সামনে কোনো কিডন্যাপারকে দেখতে পেয়েছেন তিনি। এটা কি ব্যাপার হ'ল?

 যাকগে আর মাত্র মিনিট পাঁচেক পথ। মাঝখানে আর একটা বাসস্টপ। জোরে পা চালালো ঋষি।

গ্রীষ্মের দুপুরে সুনশান রাস্তা। সামনেই বাসস্ট্যান্ডের বেঞ্চ। ঋষি ভাবল খানিক জিরিয়ে নেবে সেখানে। স্ট্যান্ডের শেডের নীচে দুজন বোরখা পরিহিতা মহিলা গল্পগুজব করছিলেন। কথা শুনে বোঝা গেল তারা অবাঙালি।

কিন্তু একি? ঋষি আরেকটু কাছে আসতেই ওকে দেখিয়ে একজন মহিলা অপরজনের কানেকানে কি যেন বললেন। তারপরে দুজনেই বোরখার মধ্যে দিয়ে এমন হাঁ করে  ঋষির দিকে তাকিয়ে রইলেন...

এইবার  ঋষির মনে হ'ল- "স্নেহার ভালোবাসার চিহ্ন নিশ্চিতভাবে আমার চেহারায় একেবারে ছাপার অক্ষরের মতো ফুটে উঠেছে, এবং সেটা নিশ্চয় এতই স্পষ্ট যে উর্দু, আরবী, ফারসি, ফ্রেঞ্চ, রাশিয়ান কোনও ভাষাই সেখানে কোনো বাধা নয়।" ওই যে বলে- "গোপনে প্রেম রয়না ঘরে, আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ে।"


   গর্বে আনন্দে ঋষি আবার উড়তে থুড়ি হাঁটতে শুরু করল। 

ওই তো বাড়ি প্রায় এসেই গিয়েছে। গলিতে ঢোকার মুখেই একটা বিশাল ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরি হচ্ছে। প্রায় এক বছর ধরে কাজ চলছে। বিহার উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা এখানকার রাজমিস্ত্রি, মজুররাও এতদিনে ঋষির চেনা মুখ। কতদিন ফুটবল খেলার শেষে জল চেয়ে খেয়েছে ওদের কাছে।

একটা গাছের নীচে গোল হয়ে বসে মধ্যাহ্নভোজন সারছিল মিস্ত্রীরা সবাই। আজ ঋষি কাছে আসতেই ওরা সকলে ঘাড় ঘুরিয়ে অমন অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল কেন? কি ব্যাপার? খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ঋষি আবার পেছন ফিরে ঘুরে দেখল...এবং কি আশ্চর্য...খাওয়া থামিয়ে তখনও ওরা ঋষির দিকে তাকিয়েই আছে আর নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করছে।

     এবার আর ঋষির মনে কোনও সন্দেহই রইলনা। সত্যিই তো রবি ঠাকুরসহ সমস্ত মহাপুরুষরাই বলে গিয়েছেন- "সত্যিকারের প্রেম কখনও লুকিয়ে রাখা যায়না।" ঋষির নিজেকে তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ বলে মনে হ'ল। 

 তবুও একেবারে হানড্রেড পার্সেন্ট নিঃসন্দেহ হওয়া যাবে বাড়িতে ভাইয়ের কাছে পৌঁছলে। ছোটভাইটা একেবারে দাদাঅন্ত প্রাণ। দাদাই ওর জীবনের হিরো। ভাইয়ের রিয়াকশনটা জানার জন্য ঋষি বাকি পথটা প্রায় দৌড়ে এল।

  বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো ভাইয়াই। ঋষিকে কোনও প্রশ্ন করার অবকাশই দিলনা ভাইয়া। দাদার মুখের দিকে তাকিয়ে হো হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল ছোটভাই। এতক্ষণে ঋষি সত্যিকারের ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল...


 কি লেখা আছে ওর মুখেচোখে? এক দৌড়ে ঋষি ছুটে গেল শোওয়ার ঘরের আয়নার সামনে...

হ্যাঁ, সকলের এরকম রহস্যময় আচরণের উত্তর লেখা রয়েছ ঋষির চোখের সানগ্লাসটার মধ্যে। সানগ্লাসের একদিকের কাঁচ কখন যেন খুলে পড়ে গিয়েছে, বোধহয় সেই ভীড় বাসে...


  প্রথমে ঋষির মনটা একটু খারাপ হয়ে যাচ্ছিল, ইশ স্নেহার দেওয়া উপহার। তারপরই মনে হ'ল- "স্নেহা সত্যিই ইউনিক, ওর সানগ্লাসটার জন্যই তো দিনটা এত স্পেশাল হয়ে গেল।"


গতকালের স্পেশাল দিনটাকে মনেমনে সেলিব্রেট করার জন্যই ঋষি গাড়ি নিয়ে  ঘুরতে বেরিয়েছে। ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষতেই... 

গাড়ির দরজাটা খুলে দিলো ঋষি। মিষ্টি হেসে পাশে এসে বসল স্নেহা।

ঋষির চোখে তখনও সেই সানগ্লাস।


********