গল্প-- মনের আকাশে
তুলি চক্রবর্তী
আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল শিমুল। ইন্সব্রুকের আকাশ আর হাজার হাজার মাইল দূরের তার গ্রামের আকাশ ঠিক একই রকম এই শরতে। বিয়ের পর কলকাতা আর তারপরই অস্ট্রিয়ার এই শহরে হাসব্যান্ড এর চাকরি সূত্রে হয়ে গেছে…
গল্প-- মনের আকাশে
তুলি চক্রবর্তী
আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল শিমুল। ইন্সব্রুকের আকাশ আর হাজার হাজার মাইল দূরের তার গ্রামের আকাশ ঠিক একই রকম এই শরতে। বিয়ের পর কলকাতা আর তারপরই অস্ট্রিয়ার এই শহরে হাসব্যান্ড এর চাকরি সূত্রে হয়ে গেছে পাঁচ বছর।
দিদি এ্যাই দিদি....
পলাশের ডাকে আর ধাক্কায় ঘুম ভাঙে শিমুলের.... চোখ কচলে দ্যাখে ভোরের আলো ফুটবো ফুটবো করছে।
দিদি চ শিগ্রী.... নাহলে সব শিউলি কুড়িয়ে নিয়ে নেবে সবাই.. আমরা কিছুই পাবো না...
হুড়মুড়িয়ে উঠে চোখে মুখে জল দিয়ে দৌড়ায় দিদি আর ভাই...
সূর্য ওঠার আগেই বাড়ি চলে আসে দুই ভাই বোন অনেক ফুল নিয়ে। আজ দুর্গাষ্টমী। এই ফুলের মালা গেঁথে মায়ের সাথে অঞ্জলি দেবে দুই জনে।
বড় হতে থাকে দুই ভাই বোন আর পাঁচ ঋতুর সাথে শরৎও আসে বরাবরের মতোই।
সে বছরও শরৎ পুজো ভাইফোঁটা সব উপহার দিলো আনন্দে ভরিয়ে। কিন্তু হেমন্তের আকাশে যে কালো অন্ধকার মেঘ জমেছিল তা জানান দিল হঠাৎই। তিনদিন ধরে পলাশের ভীষণ জ্বর। গ্রামের ডাক্তার বললেন শহরে বড় হাসপাতালে দেখানোর জন্য। বাবা মা ষোলো বছরের ভাইকে নিয়ে দৌড়ালো শহরে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। আরও তিনদিন জ্বরের সাথে লড়াই করে হেরে যায় পলাশ। খেলার সাথী একমাত্র ভাইকে হারিয়ে শিমুল আর কখনও শিউলির মালা নিয়ে মায়ের সাথে যায় নি অঞ্জলি দিতে।
কেটে গেছে আরও কিছু বছর। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর বিয়ে হয় শিমুলের। বর ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি কলকাতা। তারপর অফিসের কাজে বিদেশে।
শরৎ এলে আজও ঘুম ভেঙে যায় শিমুলের। মনে হয় ভাই ডাকছে,'দিদি শিগ্রী চ', আকাশের দিকে তাকিয়ে দ্যাখে শিমুল।
সেই নীলাকাশ তার সাথে গ্রাম শহর ছেড়ে বিদেশে। হারিয়ে গেছে ছোটবেলার শিউলি কুড়ানো সকাল আর ভাই পলাশ।
মনে মনে সে দৌড়ায় শিউলি কুড়াতে ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের ডাকে... সেই দৌড় চলছে দিদির দেশের সীমানা পেরিয়ে...