#দুধের_দাম#মিষ্টিমৌ
-"দিদি বেড নম্বর ৪৫এর বাচ্চাকে একটু দুধ দেবেন আপনি?ওকে জন্ম দিয়েই ওর মার মৃত্যু হয়।বাবাও ওকে ছেড়ে যায়।"
-"কি বলছো সিস্টার,তাহলে আমার ছেলে কি খাবে,না না অসম্ভব, আমি দিতে পারবোনা।অন্য কেউ থাকলে তা…
#দুধের_দাম
#মিষ্টিমৌ
-"দিদি বেড নম্বর ৪৫এর বাচ্চাকে একটু দুধ দেবেন আপনি?ওকে জন্ম দিয়েই ওর মার মৃত্যু হয়।বাবাও ওকে ছেড়ে যায়।"
-"কি বলছো সিস্টার,তাহলে আমার ছেলে কি খাবে,না না অসম্ভব, আমি দিতে পারবোনা।অন্য কেউ থাকলে তাকে বলো।"
-"কিন্তু এই বাচ্চাটা কি তবে দুধ না পেয়ে.........."
-"সে কথা আমি কি জানি।তুমি অন্যদের বলো।"
-"একজন মা হয়ে কি করে যে পারেন দিদি না করতে।আমার অবাক লাগে।"
-"দেখো বেশি কথা বলো না,এছাড়া কার না কার বাচ্চা?কোন জাত কে জানে,বাবাহ না না একদম না।এমন বাচ্চা জন্মের পরেই নিজের মাকে গিলে খেয়েছে,বাবাওতো বললে ফেলে রেখে গেছে।তাহলে ও বাচ্চাকে দুধ দিয়ে বিপদ ডাকবো নাকি।তুমি অন্যদের বলো যাও।"
-"বাচ্চার আবার জাত ধর্ম,বাচ্চাতো ভগবানের দূত।আজ এই অসহায় বাচ্চাকে কত যাতনা সহ্য করতে হচ্ছে,ভগবান তুমি মুখ তুলে দেখ।ওকে দেখে রেখো।"
********************************************
সিস্টার একের পর এক পেশেন্টের কাছে অনুরোধ করে ব্যর্থ ও অসহায় হয়ে ফিরে যাচ্ছিল যখন পাশের বেডের পেশেন্ট মীরা ডেকে নেয় তাকে।সযত্নে দুধ খাইয়ে বাচ্চাটিকে সিস্টারের কোলে তুলে দেয়।নিজের সন্তানের সঙ্গে ঐ বাচ্চাটিকেও দুধ খাওয়ায় মীরা।এভাবে যে কদিন মীরা হাসপাতালে ছিল সে কদিন বাচ্চাটিকে দুধ খাইয়েছিল।
এরপর কেটে গেছে ২০বছর।মীরা আজ অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি।রক্তের প্রয়োজন তার।বি নেগেটিভ রক্তের গ্ৰুপের রক্ত ব্লাডব্যাঙ্কে নেই।তার ছেলে বিট্টুর সঙ্গেও রক্তের মেলেনি।এদিকে রক্ত না দিলে মীরাকে বাঁচানো মুশকিল।
হাসপাতালের সামনে ছোট্ট চা স্ন্যাক্সের দোকান রাজুর,সেখানেই বিট্টু ওর বন্ধুদের নিয়ে মায়ের মরণ বাঁচনের কথা আলোচনা করতেই রাজু জানায় ওর রক্তের গ্ৰুপ বি নেগেটিভ।রাজুকে কিছু বলার আগেই রাজু রক্ত দিয়ে একজন মাকে বাঁচাতে চায়।বিট্টু খুশিতে জড়িয়ে ধরে ওকে।নিয়ে যায় হাসপাতালে রাজুকে।
রাজু বলে -"আমার মা নেই, মা না থাকার জ্বালা আমি বুঝি, তাই চোখের সামনে কারোকে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতে দেখলে বুকটা কষ্টে ফেটে যায়।আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও বাঁচাবো মাকে আজ।চলো ভাই যাই।"
*********************************************
এই সেই হাসপাতাল,যেখানে রাজুর জন্ম হয়।যেখানে জন্মের পর ওর মায়ের মৃত্যু হয়।একটু দুধের জন্য সিস্টার সব পেশেন্টের কাছে অনুরোধ করলেও দেয় ফিরিয়ে।শুধু মীরাই দুধ দিয়ে বাঁচিয়েছিল ওর প্রাণ।এই মা মরা রাজুকে ওর বাবাও ছেড়ে চলে যায় সেসময়।হাসপাতালেই কোনওক্রমে বড় হয়েছে সে।
এই হাসপাতালেই আবার মীরা ভর্তি হয়।রাজুর দেওয়া রক্তে ফিরে পায় প্রাণ।অথচ চিনতেই পারেনা দুজনের কেউই।মীরা সুস্থ হলে একবার রাজু দেখা করে যায় ওর সঙ্গে।তখনও চিনতে পারেনা মীরা।
অদৃষ্টের কি খেল!!হয়তো এই ছিল লেখা ওর কপালে,তাই এই ভাবেই হয়তো দুধের দাম শোধ করতে হয়েছে রাজুকে।
************************************************
