Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#ছাদ#অয়ন_দাস
প্রত্যেকটি ছাদের ক্ষয়ে যাওয়া শরীরে গোটা একটা ছোটোবেলা লুকিয়ে থাকে।সত্যি বলতে কি ছাদে আসবো বলে ছাদে আসা হয়নি বহুকাল। আমার সদা ব্যস্তময় জীবনে দীর্ঘদিন ধরে ভুলেছিলাম আমার ছাদময় শৈশব, কৈশোর কে।এই লকডাউন আবার নতুন করে আবার…

 


#ছাদ

#অয়ন_দাস


প্রত্যেকটি ছাদের ক্ষয়ে যাওয়া শরীরে গোটা একটা ছোটোবেলা লুকিয়ে থাকে।

সত্যি বলতে কি ছাদে আসবো বলে ছাদে আসা হয়নি বহুকাল। আমার সদা ব্যস্তময় জীবনে দীর্ঘদিন ধরে ভুলেছিলাম আমার ছাদময় শৈশব, কৈশোর কে।এই লকডাউন আবার নতুন করে আবার আমাকে ছাদের কাছে নিয়ে এলো।


সন্ধ্যে নেমে এসেছে পৃথিবী তে।নারকেল আর সুপুরি গাছের পাতায় পাতায় খেলা করছে গ্রীষ্ম কালের সন্ধ্যেবেলার হাওয়া।পূব আকাশে গাছের ফাঁক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে লাল রঙের থালার মত  চাঁদ।সত্যজিৎ রায় তাঁর আগন্তুক নামক 'ছোটোগল্পে' চাকতি চাকতি মিলে যাবার কথা বলেছিলেন।


নিবিড় এক সন্ধ্যে নেমে এসেছে আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া প্রাচীন ছাদে।আমি দেখতে পাচ্ছি সেই ছাদের এককোণে পাতা রয়েছে একটি ছেঁড়া মাদুর। সেই মাদুরের উপর বসে রয়েছেন এক চশমা পরা পাকাচুলের  বৃদ্ধা। সেই বৃদ্ধার কোলে মাথা রেখে শুয়ে রয়েছে এক দশ বছরের বালক।চারিদিক অন্ধকার কারণ লোডশেডিং হয়ে গেছে।বাড়িতে বাড়িতে হ্যারিকেনের আলোয় পড়াশুনা  করছে উঁচু ক্লাসের ছেলেমেয়েরা।


বালকের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন বৃদ্ধা।মাথার উপর তারা ভরা রাতের আকাশ।ঠাকুমা তার নাতি কে চেনাচ্ছেন জিজ্ঞাসার চিহ্নের মত দেখতে সপ্তর্ষিমন্ডল, উজ্জ্বলতম নক্ষত্র  ধ্রুবতারা আর যোদ্ধার বেশে কালপুরুষ এর চিরকালীন অবস্থান।চেনাচ্ছেন লুব্ধক, চেনাচ্ছেন রোহিণী নক্ষত্র,বলছেন শুকতারা আর সন্ধ্যাতারার কাহিনী ।

ঠাকুমা আরো কত কত গল্প বলছেন নাতিকে,তাঁর মেয়েবেলার গল্প,রামায়ণ, মহাভারতের গল্প,দেশভাগের গল্প।তাদের গল্পের যেন শেষ নেই।বালকের মনে হচ্ছে ওই আকাশের ওপারে স্বর্গ বলে যে জায়গাটা আছে সেই জায়গা টা আদ্যন্ত নেমে এসেছে তাদের বাড়ির  অন্ধকার ছাদে।


আমি এবার ছাদের আরেক কোণে মুখ ফেরালাম।সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক কিশোর।সদ্য গোঁফের রেখা ওঠা সেই  কিশোরের চোখে জল।এবারের পরীক্ষায় সে ভাল ফল করতে পারেনি।বাবা মা'র তীক্ষ্ণ শ্লেষাত্মক কথা বিদ্ধ করেছে কিশোর কে।সারা বিশ্ব ভুবনের প্রতি এক সুতীব্র অভিমান জমেছে কিশোরের মনে।সে ফিরে এসেছে তার একমাত্র বন্ধুর কাছে,তার ছাদ,যে ছাদ তার কাছে কোনো কৈফিয়ত চায়না,যে ছাদ তার সব অপমান কে ভুলিয়ে দেয়,যেখানে এসে সে নিশ্চিন্তে চোখের জল ফেলতে পারে।


আমি চোখ ফেরালাম ছাদের আরেক কোণে।সেখানে দাঁড়িয়ে আছে কৈশোর আর তারুণ্যের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি ছেলেমেয়ে। ছেলেটির মুখ ভর্তি কচি তৃণের মত দাড়িগোঁফের অরণ্য।মাত্র একবার সেই মুখে ব্লেডের আঘাত পড়েছে।মেয়েটি পরে আছে স্কার্ট।ওরা দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকার ছাদের এক কোণে নিজেদের মধ্যে সামান্য দূরত্ব রেখে।তীব্র গরম,তার মধ্যে লোডশেডিং হয়ে গেছে।

ছাদের টবে ফুটে থাকা হাস্নুহানা ফুলের গন্ধে মাতাল হয়ে রয়েছে গোটা ছাদ।মেয়েটির খোলা চুল থেকে ভেসে আসছে এক পাগল করা সুগন্ধি তেলের গন্ধ।


হঠাৎ সমস্ত গুমোটকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে শুরু হল প্রবল ঝড়বৃষ্টি। 


ছাদের নিস্তব্ধতাকে গায়ে মেখে  এককোণে দাঁড়িয়ে আছি মাঝবয়সী আমি।অন্ধকার আকাশকে স্নান করিয়ে দিচ্ছে লাল রঙের গোল চাঁদ।দূষণহীন পৃথিবীতে আরো সুন্দরী হয়েছে চাঁদ।সন্তর্পণে সে কখন যেন ছাদ ছেড়ে উঠে পড়েছে শূণ্যে।নাঃ,এই মায়াবী আলো আমার পাথুরে মনে কোনো রোমান্টিকতার জন্ম দিচ্ছেনা বরঞ্চ মনে করিয়ে দিচ্ছে বহু ব্যর্থতার বিমর্ষতা কে।

সাতদিনের না কামানো কাঁচাপাকা দাড়িতে হাত রাখলাম আমি।মনের আয়নায় একবার দেখে নিলাম আমার এখনকার আমি কে।এই 'আমিকেও' তো একদিন ছেড়ে যেতে হবে আমাকে,কোনো অন্ধকার গ্রীষ্মকালের সন্ধ্যেবেলায়,তারপর আর দেখা হবেনা তার সঙ্গে....কোনওদিন।