Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#আত্মজা 
প্রায় বছর তিনেক বাদে বাড়ী ফিরছে অর্চি,যার পোষাকি নাম অর্চিস্মান।এবারের বাড়ী ফেরার টানটাই আলাদা। এই লম্বা সময় প্রহরের পর প্রহর গুনেছে শুধু আজকের দিনটার দিকে তাকিয়ে থেকে।---কার্গিলের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে জরুরী তলব পেয়ে নব বধূ…




 #আত্মজা 


প্রায় বছর তিনেক বাদে বাড়ী ফিরছে অর্চি,যার পোষাকি নাম অর্চিস্মান।এবারের বাড়ী ফেরার টানটাই আলাদা। এই লম্বা সময় প্রহরের পর প্রহর গুনেছে শুধু আজকের দিনটার দিকে তাকিয়ে থেকে।

---কার্গিলের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে জরুরী তলব পেয়ে নব বধূকে দেশের বাড়ীতে রেখে যখন সে ফিরে  গিয়েছিল,তখন জানতেও পারেনি আগামী প্রজন্মের বীজ সেখানে সে বপন করে এসেছে।

----প্রথম যখন অর্চি এই খবর পেয়েছিলো সেদিন থেকে শুরু হয়েছিল তার অনন্ত প্রতীক্ষা।

----খবর এসেছিল ঘর আলো করে জন্ম নিয়েছে এক ফুটফুটে কন্যা।দীপাবলিতে জন্ম বলে সেই অদেখা কন্যার নাম রেখেছিল দীপান্বিতা।

----দীপাবলি সর্বদা তার জীবনে এক অন্যমাত্রা নিয়ে এসেছে, আলোকিত করে তুলেছে তার ছোটছোট আনন্দগুলোকে।

----তার চাকরী পাওয়ার চিঠিটা হাতে এসেছিল এই সুন্দর দিনটিতে।আবার ঐশীকে সে প্রথম দেখেছিলো এমনই এক দীপাবলির সন্ধ্যায়।

----মেয়ে দেখার অছিলায় দাদা বৌদি যখন তাকে ঐশীদের বাড়ীতে নিয়ে গিয়েছিল,ঠিক সেইসময় দেখেছিল দেউল থেকে দোরগোড়ার প্রতিটি অন্ধকার কোণ ঐশী কেমন নিপুণতা ও মমতায় আলোকিত করে তুলছে।

----দুজনের প্রথম দর্শনের মুহূর্তে ঐশীর হাতে ছিল প্রজ্জ্বলিত দিয়া,যার আলোয় অর্চির চোখে পড়েছিল একটি নিষ্পাপ পবিত্র মুখাবয়ব আর তার থেকে যেন ঝরে পড়ছিল এক অপার্থিব জ্যোতিঃ।

----প্রথম দর্শনেই ভালো লেগে গিয়েছিল ঐশীকে।এর কিছুদিন পর গল্প কথার রাজপুত্রের মতোই বিয়ে হয়েছিল তাদের।

-----পরবর্তী দীপাবলিতে জন্ম নিল তার আত্মজা দীপান্বিতা। আজ সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানে মেয়ের মুখ দেখার আনন্দের আতিশয্যে অর্চিস্মানের ট্রেন কখন নিজ গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছে বুঝতেই পারেনি।

----হঠাৎ যাত্রীদের শোরগোলে চমক ভাঙ্গে তার।তড়িঘড়ি নিজের ব্যাগ নিয়ে স্টেশনে নামতেই ট্রেন ছেড়ে দেয়।

-----একরাশ ভালোবাসা বুকে নিয়ে রিক্সার চাকা পেরোতে থাকে লাল মাটির পথ,উত্তরাকাশে ঝিলমিল করে ওঠে ধ্রুবতারা।

-----অর্চির সেই মুহূর্তে মনে হয় যদি দুটো ডানা থাকতো তাহলে তাতে ভর দিয়ে উড়ে পৌঁছে যেত স্ত্রী ও কন্যার কাছে আর ছোট্ট শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে চুমায় চুমায় ভরিয়ে দিতো নরম তুলতুলে গাল।

----এক সময় শেষ হয় দীর্ঘ পথ চলা।রিক্সা এসে দাঁড়ায় বাড়ীর দরজায়,তাকিয়ে দেখে সমস্ত বাড়ী আজও সেজে আছে দীপালির আলোয়।দরজা ঠেলে ভিতরে পা  দিতেই দেখে একমুখ হাসি নিয়ে মেয়ে কোলে ঐশী দাঁড়িয়ে আছে।পায়ে পায়ে তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই কিছু জানান না দিয়েই বৈদ্যুতিক বাতি নিভে যায়।

-----অর্চির মনটা হঠাৎ বিষণ্ণ হয়েই আবার উজ্জ্বল হয়ে ওঠে,তার মনে হয় আজ আলোকোজ্জ্বল দীপাবলি,এমন সুন্দর দিনে সে প্রথমবার আত্মজার মুখ দেখবে কৃত্রিম আলোয় নয় প্রদীপের স্নিগ্ধ আলোয়।কারণ সে তো দীপান্বিতা আলোকিত করে এসেছে তার ভুবনে।

-----এরপর সে দেউলে রাখা মাটির প্রদীপখানি তুলে ধরে মেয়ের অনিন্দ্যসুন্দর নিষ্পাপ মুখ অবলোকন করতে থাকে।


    ........শম্পা