গোধূলি দে শিরোনাম = "ফিরে পাওয়া "18, 11, 20"শান্তি নীড় " অনাথ আশ্রম স্নিগ্ধ শান্ত সবুজে ঘেরা গৌমতী নদীর তীরে এই আশ্রম, সকাল বিকাল পাখির কলতান, নদীর বুকে মাঝির ভাটিয়ালী গান গাইতে গাইতে মাছের সন্ধানে ভেসে যাওয়া…
গোধূলি দে
শিরোনাম = "ফিরে পাওয়া "
18, 11, 20
"শান্তি নীড় " অনাথ আশ্রম স্নিগ্ধ শান্ত সবুজে ঘেরা গৌমতী নদীর তীরে এই আশ্রম, সকাল বিকাল পাখির কলতান,
নদীর বুকে মাঝির ভাটিয়ালী গান গাইতে গাইতে মাছের সন্ধানে ভেসে যাওয়া,
শরৎ কালে নদীর তীরে কাশের মেলা, আকাশে মেঘের ভেলা অপূর্ব পরিবেশ,
আজ আশ্রমের প্রতিষ্ঠা দিবস, 30 বছর পূর্ণ হবে,
সকাল থেকে সাজ সাজ রব, ফুলের মালা, ও অনেক বেলুন দিয়ে সাজানো হচ্ছে,
বাচ্ছারা খুব খুশি, অনেক দিন ধরে ওদের নাচ, গান, আবৃত্তির প্রস্তুতি চলছে,
শহর থেকে একজন নামকরা শিল্পপতি আসবেন প্রধান অতিথি হয়ে,
তিনি আশ্রমকে অনেক বছর ধরে একটা মোটা টাকা বাচ্ছাদের উদ্দেশ্যে দান করেন, বিগত 10 বছর যাবৎ,
কিন্তু উনি এতো ব্যস্ত থাকেন কখনোই উনার আশ্রমে আসা হয়ে ওঠেনি,
আজ উনি কথা দিয়েছেন, উনি আজ আসবেন এবং সারা সন্ধ্যা বাচ্ছাদের সাথে কাটাবেন,
দিশা খুব খুশি, আজ উনাকে দেখবেন,
দীর্ঘ 10 বছর ধরে উনি দিশার পাশে আছেন,
দেখতে দেখতে 30 বছর হয়ে গেলো, দিশা এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে,
মনে পরে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা,
বাবা মায়ের খুব আদরের ছিলো,
একই সন্তান ছিলো,
খুব মেধাবী ছিলো, স্কুল পাশ করে কলেজ যায়, কলেজে সিনিয়র একজনকে ওর ভালো লাগে,
ওই ছেলেটির ও দিশাকে ভালো লাগে,
ভালো লাগা থেকে ওদের ভালোবাসা তৈরী হয়,
দুজনই পড়াশোনা শেষ করে, দিশা একটা স্কুলে চাকরি পায়, নাসির ও চাকরির চেষ্টা করছে, পেয়ে ও যায়,
ওরা ঠিক করে, বিয়ে করবে, দিশা জানতো ওর বাবা মা রাজি হবেন,, ওর বাবা মায়ের ওপর খুব বিশ্বাস ছিলো, অনেক আশা নিয়ে দিশা বাবা মাকে বলেছিলো নাসিরের কথা,
নাসিরকে পছন্দ না করার কোনো কারণ নেই, দিশা মনে করে,
কিন্তু বাবা মা রাজী হলেননা, নাসিরের একটাই অপরাধ, ও ভিন্নধর্মী, ভিন্ন জাতের ছেলে,
দিশা কিছুতেই ওর গোড়া বাবা মাকে বোঝাতে পারলো না, সবার আগে নাসির একটা মানুষ, তারপর জাত,
উনারা বুঝলেন না, তরিঘড়ি দিশাকে না জানিয়ে অন্যত্র ওর বিয়ে ঠিক করে ফেললেন,
দিশা বিয়ে করবে.না, একথা বাবা মাকে জানিয়ে দিলো,
ওদিকে নাসিরের বাড়িতে সবাই রাজী,. নাসির দিশাকে বলেছিলো, "চলোনা আমরা পালিয়ে গিয়ে সাদী করে নেই "দিশা রাজী হয়নি,
"না বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে তোমার সাথে ঘর বাধঁতে পারবো না "
তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিও,
সেদিন দিশা নাসিরকে একটা বাচ্ছা ছেলের মতো কাঁদতে দেখেছিলো,
দিশা ও কাঁদতে কাঁদতে নাসিরের চোখের জল মোছাতে মোছাতে বলেছিলো, "আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা, যতদিন বেঁচে থাকবো আমি তোমার অন্তরে থাকবো "তোমাকে ও অতি সংগোপনে সযত্নে আমার মনের মণি কোঠায় রাখবো "
ওটাই ছিলো ওদের শেষ দেখা, খুব কষ্ট হয়েছিল দিশার, অনেক চেষ্টা করেছিলো নাসির কে ভোলার, পারে নি,
আস্তে আস্তে নিজেকে অনেক সেবা মূলক কাজের সাথে জড়িয়ে ফেলে, চাকরি করে, বাবা মায়ের সেবা করে বেশ কাটছিলো,
বার্ধক্যজনিত রোগে বাবা মা এক এক করে দুজনই চলে গেলেন, দিশা একদম একা হয়ে গেলো
ওই বাড়িতে ওর পক্ষে একা থাকা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছিলো না,
দিশা বাড়ি বিক্রি করে, ওর বাবার অনেক সম্পত্তি ছিলো সব বিক্রি করে এই আশ্রম গড়ে তোলে,
ভাবতে ভাবতে ওর চোখের দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে আসে, বয়স ও অনেকটা বেড়ে গেছে,
আজকাল হাঁটুতে একটা ব্যথা অনুভব করে,
তাকিয়ে দেখে, গোধূলির রক্তিম আভায় আকাশটা যেন আজ অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়েছে,
"আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পুন্য কর, এ জীবন পুন্য কর, এ জীবন পুন্য কর দহন দানে " বাচ্ছারা সুর করে গাইছে, ওরা রোজ সকাল সন্ধ্যায় এই গানটাই গায়,
হঠাৎ গাড়ি হর্ন, এসে গেছেন, আজকের প্রধান অতিথি,
সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লো, দিশা দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে, বেশ দামী গাড়ি, নামলেন, খুব সুন্দর রুচিসম্মত পোশাক, সবার সাথে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছেন দিশার সামনে,
খুব চেনা লাগছে, ভীষণ চেনা লাগছে, কে উনি, মনে হচ্ছে আমার খুব কাছের মানুষ,
আরে,,,,, এ তো নাসির মনে হচ্ছে, যাকে এতদিন দিশা মনে মনে পাগলের মতো খুঁজে বেরিয়েছে, সে আজ নিজেই তার সামনে,
এতদিন তবে নাসির এভাবে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে আমার কাছে, কিন্তু কেনো???
দিদি, সাহেব এসেছেন,
মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে হাতজোর করে বললো, নমস্কার, আসুন,
তারপর যথা রীতি বাচ্ছাদের সাথে মোমবাতি জ্বালানো, কেক কাটা সমস্ত অনুষ্ঠান শেষ করলেন,
দিশার সব যেনো কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো,
নাসির দিশাকে বললো, "সত্যি কি তুমি আমাকে চিনতে পারো নি "????
কি করে ভুলবো তোমায়, আমি তো এক মিনিটের জন্যও তোমাকে ভুলতে পারিনি,
তুমি এভাবে আড়ালে থেকে আমাকে সাহায্য করে গেছো কেনো?
ইচ্ছে করে, যদি তুমি আমাকে আবার ফিরিয়ে দাও,
আজ আমি ভিক্ষা পাত্র নিয়ে তোমার কাছে এসেছি দিশা, আমাকে আর ফিরিয়ে দিওনা, আমার প্রচুর অর্থ, প্রতিপত্তি, কিন্তু দিনশেষে আমি একদম একা,
কেনো, নাসির তোমার বউ !!!"
কি করে ভাবলে, তোমার জায়গায় কাউকে বসাবো, সাদী আমাদের হয়নি ঠিকই, কিন্তু মনের দিক থেকে তো আমরা স্বামী স্ত্রী,
আমি সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে চলে আসবো তোমার কাছে, চলোনা বাকি জীবনটা বাচ্ছা দের সাথে এই "শান্তি নীড়ে "কাটিয়ে দেই,
দিশা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না,
নাসিরকে জড়িয়ে ধরলো, দুজনের চোখের জলে এতদিনের সমস্ত ব্যথা, না পাওয়ার যন্ত্রনা সব ধুয়ে মুছে গেলো,
"আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পুন্য কর, এ জীবন পুন্য কর, এ জীবন পুন্য কর দহন দানে, আকাশে বাতাসে মিশে গেলো গানের সুর,